فاذا انسلخ الاشهر الحرم فاقتلوا المشركين حيث وجدتموهم وخذوهم واحصروهم واقعدوا لهم كل مرصد فان تابوا واقاموا الصلاة واتوا الزكاة فخلوا سبيلهم ان الله غفور رحيم ٥
فَإِذَا ٱنسَلَخَ ٱلْأَشْهُرُ ٱلْحُرُمُ فَٱقْتُلُوا۟ ٱلْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدتُّمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَٱحْصُرُوهُمْ وَٱقْعُدُوا۟ لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍۢ ۚ فَإِن تَابُوا۟ وَأَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُا۟ ٱلزَّكَوٰةَ فَخَلُّوا۟ سَبِيلَهُمْ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌۭ رَّحِيمٌۭ ٥
فَاِذَا
انْسَلَخَ
الْاَشْهُرُ
الْحُرُمُ
فَاقْتُلُوا
الْمُشْرِكِیْنَ
حَیْثُ
وَجَدْتُّمُوْهُمْ
وَخُذُوْهُمْ
وَاحْصُرُوْهُمْ
وَاقْعُدُوْا
لَهُمْ
كُلَّ
مَرْصَدٍ ۚ
فَاِنْ
تَابُوْا
وَاَقَامُوا
الصَّلٰوةَ
وَاٰتَوُا
الزَّكٰوةَ
فَخَلُّوْا
سَبِیْلَهُمْ ؕ
اِنَّ
اللّٰهَ
غَفُوْرٌ
رَّحِیْمٌ
۟
3

সম্মানিত মাস দ্বারা এখানে ঐ চার মাসকে বুঝানো হয়েছে যার বর্ণনা-(আরবী) (৯:৩৬) এই আয়াতে রয়েছে। সুতরাং তাদের ব্যাপারে শেষ সম্মানিত মাস হচ্ছে মুহাররামুল হারাম। ইবনে আব্বাস (রাঃ) এবং যহ্হাক (রঃ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। কিন্তু এতে কিছু চিন্তা ভাবনার অবকাশ রয়েছে। বরং এখানে ঐ চার মাস উদ্দেশ্য যে মাসগুলোতে মুশরিকরা মুক্তি লাভ করেছিল এবং তাদেরকে বলা হয়েছিল- এর পরে তোমাদের সাথে যুদ্ধ হবে। এই সূরারই অন্য আয়াতে এর বর্ণনা রয়েছে, যা পরে আসছে। মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “যখন নিষিদ্ধ মাসগুলো অতীত হয়ে যাবে তখন ঐ মুশরিকদের যেখানেই পাও সেখানেই হত্যা কর, তাদেরকে পাকড়াও কর, অবরোধ কর এবং ঘাটিস্থলসমূহে তাদের সন্ধানে অবস্থান কর।” আল্লাহ পাক বলেনঃ “যেখানেই পাও’, সুতরাং এটা সাধারণ নির্দেশ। অর্থাৎ ভূ-পৃষ্ঠের যেখানেই পাওনা কেন, তাদেরকে বধ কর, পাকড়াও কর ইত্যাদি। কিন্তু প্রসিদ্ধ উক্তি এই যে, এটা সাধারণ নির্দেশ নয়, বরং বিশেষ নির্দেশ। হারাম শরীফে যুদ্ধ চলতে পারে না। কেননা, আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা তাদের সাথে মসজিদুল হারামের পাশে যুদ্ধ করো না যে পর্যন্ত না তারা নিজেদের পক্ষ থেকে যুদ্ধের সূচনা করে। যদি তারা সেখানে তোমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় তবে তোমাদেরকেও সেখানে তাদের সাথে যুদ্ধ করার অনুমতি দেয়া হলো। ইচ্ছা করলে তোমরা তাদেরকে হত্যা করতে পার, বন্দী করতে পার, তাদের দুর্গ অবরোধ করতে পার এবং তাদের প্রত্যেক ঘাঁটিতে ওঁৎ পেতে থেকে সামনে পেলেই মেরে ফেলতে পার। অর্থাৎ তোমাদেরকে শুধু এই অনুমতি দেয়া হচ্ছে না যে, তাদেরকে সামনে পেয়ে গেলে তাদের সাথে যুদ্ধ করবে, বরং তোমাদের জন্যে এ অনুমতিও রয়েছে যে, তোমরা নিজেদের পক্ষ থেকেই তাদের উপর আক্রমণ চালাবে, তাদের পথরোধ করে দাড়াবে এবং তাদেরকে ইসলাম গ্রহণ করতে অথবা যুদ্ধ করতে বাধ্য করবে। এ জন্যেই আল্লাহ পাক বলেনঃ “যদি তারা তাওবা করতঃ নামায প্রতিষ্ঠিত করে এবং যাকাত প্রদান করে তবে তাদের রাস্তা খুলে দেবে এবং তাদের উপর থেকে সংকীর্ণতা উঠিয়ে নেবে।” এই আয়াতটিকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেই আবু বকর (রাঃ) যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। যুদ্ধ করা এই শর্তে হারাম যে, তারা ইসলামের মধ্যে দাখিল হয়ে যাবে এবং ইসলামের অবশ্যকরণীয় কাজগুলো পালন করবে। মহান আল্লাহ এই আয়াতে ইসলামের রুকনগুলো তরতীব বা বিন্যাস সহকারে বর্ণনা করেছেন। বড় থেকে শুরু করে হোটর দিকে এসেছেন। সুতরাং আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সঃ) আল্লাহর রাসূল’ এই সাক্ষ্যদানের পর ইসলামের সর্বাপেক্ষা বড় রুকন হচ্ছে সালাত, যা মহামহিমান্বিত আল্লাহর হক। সালাতের পরে হচ্ছে যাকাত, যার উপকার ফকীর, মিসকীন ও অভাবগ্রস্তেরা লাভ করে থাকে। এর মাধ্যমে মাখলুকের বিরাট হক, যা মানুষের দায়িত্বে রয়েছে তা আদায় হয়ে যায়। এ কারণেই অধিকাংশ জায়গাতেই আল্লাহ তাআলা সালাতের সাথে সাথেই যাকাতের উল্লেখ করেছেন।সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি এই মর্মে আদিষ্ট হয়েছি যে, আমি লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবো যে পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য প্রদান করে যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য নেই ও মুহাম্মাদ (সঃ) আল্লাহর রাসূল এবং তারা সালাত প্রতিষ্ঠিত করে ও যাকাত দেয়।” আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “তোমাদেরকে সালাত প্রতিষ্ঠিত করার এবং যাকাত প্রদান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং যে ব্যক্তি যাকাত দেবে না তার সালাতও হবে না।” আবদুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম (রঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তা'আলা কারো সালাত কখনো কবূল করবেন না যে পর্যন্ত না সে যাকাত প্রদান করে। আল্লাহ তা'আলা আবু বকর (রাঃ)-এর উপর দয়া করুন! তিনি সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী ছিলেন। (কেননা, তিনি যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন)।”মুসনাদে আহমাদে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “লোকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার জন্যে আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই ও মুহাম্মাদ (সঃ) আল্লাহর রাসূল, আর তারা আমাদের কিবলার দিকে মুখ করে, আমাদের যবেহকৃত (প্রাণী) ভক্ষণ করে এবং আমাদের সালাতের ন্যায় সালাত পড়ে। (যখন তারা এরূপ করবে তখন আমাদের উপর তাদের রক্ত এবং তাদের মাল হারাম হয়ে যাবে, ইসলামের হক ব্যতীত। তারা তখন ঐ সব হকের অধিকারী হয়ে যাবে যেসব হক অন্যান্য মুসলিমদের রয়েছে এবং অন্যান্য মুসলিমদের দায়িত্বে যা কিছু রয়েছে, তাদের দায়িত্বেও সেগুলো এসে যাবে।” (এ রিওয়ায়াতটি সহীহ বুখারীতে রয়েছে এবং সুনানে ইবনে মাজাহ ছাড়া অন্যান্য সুনানেও রয়েছে)ইমাম আবু জাফর ইবনে জারীর (রঃ) স্বীয় গ্রন্থে রাবী ইবনে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি দুনিয়া হতে এমন অবস্থায় বিদায় গ্রহণ করে যে, সে খাটি ভাবে আল্লাহরই ইবাদত করেছে এবং তার সাথে আর কাউকেও অংশীদার করেনি, সে ঐ অবস্থায় গমন করলো যে, আল্লাহ তা'আলা তার প্রতি সন্তুষ্ট রয়েছেন।” আনাস (রাঃ) বলেন, এটাই হচ্ছে আল্লাহর দ্বীন। সমস্ত নবী এটাই আনয়ন করেছিলেন এবং তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে নিজ নিজ উম্মতের কাছে কথা এদিক ওদিক ছড়িয়ে যাওয়ার পূর্বে এবং ইচ্ছা ও প্রবৃত্তি বিভিন্ন হওয়ার পূর্বে দাওয়াত পৌছিয়ে দিয়েছিলেন। এর সত্যতার সাক্ষ্য আল্লাহ তা'আলার শেষ অহীর মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। আল্লাহ পাক বলেন-(আরবী) অর্থাৎ “অতঃপর যদি তারা সালাত, প্রতিষ্ঠিত করে এবং যাকাত প্রদান করে তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও।” অন্য আয়াতে এই তিনটি কাজের পরে রয়েছে-(আরবী) অর্থাৎ “তখন তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই।” (৯:১১) যহাক (রঃ) বলেন যে, এটা হচ্ছে তরবারীর আয়াত যা মুশরিকদের সাথে কৃত সমস্ত সন্ধি-চুক্তিকে কর্তন করে দিয়েছে। ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর উক্তি রয়েছে যে, সূরায়ে বারাআত অবতীর্ণ হওয়ার চার মাস পরে কোন সন্ধি ও চুক্তি অবশিষ্ট থাকেনি। পূর্বশর্তগুলো সমতার ভিত্তিতে ভেঙ্গে দেয়া হয়। এখন রাকী শুধু ইসলাম ও জিহাদ। আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে চারটি তরবারীসহ পাঠিয়েছেন। প্রথম তরবারী আরবের মুশরিকদের মধ্যে প্রয়োগের জন্যে। আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা মুশরিকদেরকে যেখানেই পাও সেখানেই হত্যা কর।” এ রিওয়ায়াতটি এভাবে সংক্ষিপ্ত আকারেই আছে। (আলী রাঃ বলেনঃ) আমার ধারণা এই যে, দ্বিতীয় তরবারী হচ্ছে আহলে কিতাবের সাথে যুদ্ধের জন্যে। মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আহলে কিতাবদের ঐ লোকদের সাথে তোমরা যুদ্ধ করতে থাকো, যারা আল্লাহর উপর ও পরকালের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে না, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) যা হারাম করেছেন তা হারাম মনে করে না এবং দ্বীন কবুল করে না, যে পর্যন্ত না তারা লাঞ্ছিত অবস্থায় জিযিয়া প্রদানে স্বীকৃত হয়।” (৯:২৯) তৃতীয় তরবারী হলো মুনাফিকদের সাথে যুদ্ধের ব্যাপারে। প্রবল পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে নবী! তুমি কাফির ও মুনাফিকদার সাথে যুদ্ধ কর।” (৯:৭৩)। চতুর্থ তরবারী হচ্ছে বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধের জন্য। ইরশাদ হচ্ছে-(আরবী) অর্থাৎ “যদি মুমিনদের দুটি দলের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যায় তবে তোমরা তাদের মধ্যে সন্ধি আনয়ন কর, অতঃপর যদি একটি দল অপর দলটির উপর বিদ্রোহ ঘোষণা করে তবে তোমরা ঐ বিদ্রোহী দলটির সাথে যুদ্ধ কর যে পর্যন্ত না আল্লাহর হুকুমের দিকে ফিরে আসে।” (৪৯:৯) যহ্হাক (রঃ) ও সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, এই তরবারীর আয়াতটি (আরবী) (অতঃপর হয় অনুগ্রহ করে ছেড়ে দাও অথবা ফিদইয়া নিয়ে ছেড়ে দাও) (৪৭:৪) এই আয়াত দ্বারা মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে। আর কাতাদা (রঃ) এর বিপরীত বলেছেন।