لقد ارسلنا رسلنا بالبينات وانزلنا معهم الكتاب والميزان ليقوم الناس بالقسط وانزلنا الحديد فيه باس شديد ومنافع للناس وليعلم الله من ينصره ورسله بالغيب ان الله قوي عزيز ٢٥
لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِٱلْبَيِّنَـٰتِ وَأَنزَلْنَا مَعَهُمُ ٱلْكِتَـٰبَ وَٱلْمِيزَانَ لِيَقُومَ ٱلنَّاسُ بِٱلْقِسْطِ ۖ وَأَنزَلْنَا ٱلْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌۭ شَدِيدٌۭ وَمَنَـٰفِعُ لِلنَّاسِ وَلِيَعْلَمَ ٱللَّهُ مَن يَنصُرُهُۥ وَرُسُلَهُۥ بِٱلْغَيْبِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ قَوِىٌّ عَزِيزٌۭ ٢٥
لَقَدْ
اَرْسَلْنَا
رُسُلَنَا
بِالْبَیِّنٰتِ
وَاَنْزَلْنَا
مَعَهُمُ
الْكِتٰبَ
وَالْمِیْزَانَ
لِیَقُوْمَ
النَّاسُ
بِالْقِسْطِ ۚ
وَاَنْزَلْنَا
الْحَدِیْدَ
فِیْهِ
بَاْسٌ
شَدِیْدٌ
وَّمَنَافِعُ
لِلنَّاسِ
وَلِیَعْلَمَ
اللّٰهُ
مَنْ
یَّنْصُرُهٗ
وَرُسُلَهٗ
بِالْغَیْبِ ؕ
اِنَّ
اللّٰهَ
قَوِیٌّ
عَزِیْزٌ
۟۠
3

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ আমি আমার রাসূলদেরকে (আঃ) মু'জিযা দিয়ে, স্পষ্ট প্রমাণ প্রদান করে এবং পূর্ণ দলীলসমূহ দিয়ে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছি। সাথে সাথে তাদেরকে কিতাবও প্রদান করেছি যা খাটি, পরিষ্কার ও সত্য। আর দিয়েছি আদল ও হক, যা দ্বারা প্রত্যেক জ্ঞানী ব্যক্তি তাদের কথাকে কবুল করে নিতে স্বাভাবিকভাবেই বাধ্য হয়। হ্যাঁ, তবে যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে এবং বুঝেও বুঝতে চায় না তারা এর থেকে বঞ্চিত রয়ে যায়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী)অর্থাৎ “যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে আয়াত বা দলীল-প্রমাণের উপর রয়েছে এবং যার অনুসরণ করে তার প্রেরিত সাক্ষী।” (১১:১৭) আর এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “এটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।” (৩০:৩০) আল্লাহ তা'আলা আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তিনি আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন মানদণ্ড।” (৫৫:৭) সুতরাং এখানে তিনি বলেনঃ এটা এই জন্যে যে, যেন মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। অর্থাৎ রাসূল (সঃ)-এর আনুগত্য করে এবং তার আদেশ পালন করে। তারা যেন রাসূল (সঃ)-এরই সমস্ত কথাকে সত্য বলে বিশ্বাস করে। কেননা, তার কথার মত অন্য কারো কথা সরাসরি সত্য নয়। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমার প্রতিপালকের কথা পূর্ণ হয়েছে যিনি স্বীয় খবর প্রদানে সত্যবাদী এবং স্বীয় আহকামে ন্যায়পরায়ণ।” (৬:১১৫) কারণ এটাই যে, যখন মুমিনরা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং পুরোপুরিভাবে আল্লাহর নিয়ামতের অধিকারী হবে তখন তারা বলবেঃ (আরবী)অর্থাৎ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যে যিনি আমাদেরকে এর জন্যে পথ প্রদর্শন করেছেন, যদি আল্লাহ আমাদেরকে পথ প্রদর্শন না করতেন তবে আমরা পথ পেতাম না, আমাদের নিকট রাসূলগণ সত্যসহ এসেছিলেন।” (৭:৪৩)। এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ আমি সত্য অস্বীকারকারীদেরকে দমন করার লক্ষ্যে লোহা তৈরী করেছি। অর্থাৎ প্রথমে কিতাব, রাসূল এবং হকের মাধ্যমে হুজ্জত কায়েম করেছি। অতঃপর বক্র অন্তর বিশিষ্ট লোকদের বক্রতা দূর করার জন্য আমি লোহা সৃষ্টি করেছি যে, যেন এর দ্বারা অস্ত্র-শস্ত্র তৈরী করা যায় এবং এর মাধ্যমে আল্লাহ ভক্ত বান্দারা তারা শত্রুদের অন্তরের কাঁটা বের করে আনে। এই নমুনাই রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর জীবদ্দশায় সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয়। মক্কা শরীফে তিনি সুদীর্ঘ তেরো বছর মুশরিকদেরকে বুঝাতে, তাওহীদ ও সুন্নাতের দাওয়াত প্রদানে এবং তাদের বদ আকীদা সংশোধনকরণে কাটিয়ে দেন। তারা স্বয়ং তাঁর উপর যেসব বিপদ আপদ চাপিয়ে দেয় তা তিনি সহ্য করেন। কিন্তু যখন এই হুজ্জত শেষ হয়ে গেল তখন শরীয়ত মুসলমানদেরকে হিজরত করার অনুমতি দিলো। তারপর আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিলেন যে, এখন ইসলাম প্রচারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিতভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করা হোক। তাদের গর্দান উড়িয়ে দিয়ে যমীনকে আল্লাহর অহীর বিরুদ্ধাচরণকারীদের হতে পবিত্র করা হোক। হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “কিয়ামতের পূর্বেই আমি তরবারীসহ প্রেরিত হয়েছি যে পর্যন্ত না শরীক বিহীন এক আল্লাহরই ইবাদত করা হয়। আর আমার রিক আমার বর্শার ছায়ার নীচে রেখে দেয়া হয়েছে এবং লাঞ্ছনা ও অবমাননা ঐ লোকদের, যারা আমার হুকুমের বিরুদ্ধাচরণ করে। যে ব্যক্তি কোন কওমের সহিত সাদৃশ্য যুক্ত হয় সে তাদেরই একজন। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)সুতরাং লৌহ দ্বারা অস্ত্রশস্ত্র তৈরী করা হয়। যেমন তরবারী, বর্শা, ছুরি, তীর, বর্ম ইত্যাদি। এছাড়া এর দ্বারা জনগণ আরো বহু উপকার লাভ করে থাকে। যেমন এই লৌহ দ্বারা তারা কুড়াল, কোদাল, দা, আরী, চাষের যন্ত্রপাতি, বয়নের যন্ত্রপাতি, রান্নার পাত্র, রুটির তাওয়া ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরী করে থাকে।হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, হযরত আদম (আঃ) তিনটি জিনিসসহ জান্নাত হতে এসেছিলেন। (এক) নেহাই, (দুই) বাঁশী এবং (তিন) হাতুড়ী। (এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) ও ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ এটা এই জন্যে যে, আল্লাহ প্রকাশ করে দিবেন। কে প্রত্যক্ষ না করেও তাকে ও তাঁর রাসূল (সঃ)-কে সাহায্য করে। অর্থাৎ এই অস্ত্র-শস্ত্রগুলো উঠিয়ে নেক নিয়তে কে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-কে সাহায্য করতে চায় তা আল্লাহ পরীক্ষা করতে চান। আল্লাহ তো শক্তিমান, পরাক্রমশালী। তাঁর দ্বীনের যে সাহায্য করবে সে নিজেরই সাহায্য করবে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা'আলা নিজেই নিজের দ্বীনকে শক্তিশালী করেন। তিনি তো জিহাদের ব্যবস্থা দিয়েছেন বান্দাদেরকে শুধু পরীক্ষা করার জন্যে। বান্দার সাহায্যের তাঁর কোনই প্রয়োজন নেই। বিজয় ও সাহায্য তো তাঁরই পক্ষ থেকে এসে থাকে।