আর মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর ইবাদাত করে দিধার সাথে [১], তার মঙ্গল হলে তাতে তার চিত্ত প্রশস্ত হয় এবং কোন বিপর্যয় ঘটলে সে তার পূর্ব চেহারায় ফিরে যায়। সে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুনিয়াতে এবং আখিরাতে; এটাই তো সুস্পষ্ট ক্ষতি [২]।
দ্বিতীয় রুকু’
[১] অর্থাৎ দ্বীনী বৃত্তের মধ্যখানে নয়। বরং তার এক প্রান্তে বা কিনারায় অথবা অন্য কথায় কুফর ও ইসলামের সীমান্তে দাঁড়িয়ে বন্দেগী করে। অথবা সন্দেহে দোদুল্যমান থাকে। [ইবন কাসীর]। যেমন কোন দো-মনা ব্যক্তি কোন সেনাবাহিনীর এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকে। যদি দেখে সেনাদল বিজয়লাভ করছে তাহলে তাদের সাথে মিলে যায়। আর যদি দেখে পরাজিত হচ্ছে তাহলে আস্তে আস্তে কেটে পড়ে। এখানে এমন সব লোকের কথা বলা হয়েছে যাদের মানসিক গঠন অপরিপক্ক, আকীদা-বিশ্বাস নড়বড়ে এবং যারা প্রবৃত্তির পূজা করে। তারা ইসলাম গ্ৰহণ করে লাভের শর্তে। তাদের ঈমান এ শর্তের সাথে জড়িত হয় যে, তাদের আকাংখা পূর্ণ হতে হবে, সব ধরনের নিশ্চিন্ততা অর্জিত হতে হবে, আল্লাহর দ্বীন তাদের কাছে কোন স্বাৰ্থ ত্যাগ দাবী করতে পারবে না এবং দুনিয়াতে তাদের কোন ইচ্ছা ও আশা অপূর্ণ থাকতে পারবে না। এসব হলে তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট এবং তার দ্বীন তাদের কাছে খুবই ভালো। কিন্তু যখনই কোন আপদ বালাই নেমে আসে অথবা আল্লাহর পথে কোন বিপদ, কষ্ট ও ক্ষতির শিকার হতে হয় কিংবা কোন আকাংখা পূর্ণ হয় না। তখনই আর আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা, রাসূলের রিসালাত ও দ্বীনের সত্যতা কোনটার উপরই তারা নিশ্চিন্ত থাকে না। এরপর তারা লাভের আশা ও লোকসান থেকে বাঁচার জন্য শির্ক করতে পিছপা হয় না। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হিজরত করে মদীনায় বসবাস করতে শুরু করেন, তখন এমন লোকেরাও এসে ইসলাম গ্ৰহণ করত, যাদের অন্তরে ইসলাম পাকাপোক্ত ছিল না। ইসলাম গ্রহণের তাদের সন্তান ও ধন-দৌলতে উন্নতি দেখা গেলে তারা বলতঃ এই দ্বীন ভাল। পক্ষান্তরে এর বিপরীত দেখা গেলে বলতঃ এই দ্বীন মন্দ। এই শ্রেণীর লোকদের সম্পর্কেই আলোচ্য আয়াত নাযিল হয়েছে। বলা হয়েছে যে, তারা ঈমানের এক কিনারায় দণ্ডায়মান আছে। ঈমানের পর যদি তারা পার্থিব সুখ ও ধন-সম্পদ লাভ করে, তবে ইসলামে অটল হয়ে যায়, পক্ষান্তরে যদি পরীক্ষাস্বরূপ কোন বিপদাপদ ও পেরেশনীতে পতিত হয়, তবে দ্বীন ত্যাগ করে বসে ৷ [বুখারীঃ ৪৭৪২]
[২] অর্থাৎ এ দো-মনা মুসলিম নিজের দুনিয়ার স্বাৰ্থও লাভ করতে পারে না এবং আখেরাতেও তার সাফল্যের কোন সম্ভাবনা থাকে না। কারণ সে তো আল্লাহর সাথে কুফরি করে আছে। [ইবন কাসীর] এভাবে সে দুনিয়া ও আখেরাত দুটোই হারায়।
0%