Po lexoni një tefsir për grupin e vargjeve 68:1 deri në 68:7
ن والقلم وما يسطرون ١ ما انت بنعمة ربك بمجنون ٢ وان لك لاجرا غير ممنون ٣ وانك لعلى خلق عظيم ٤ فستبصر ويبصرون ٥ باييكم المفتون ٦ ان ربك هو اعلم بمن ضل عن سبيله وهو اعلم بالمهتدين ٧
نٓ ۚ وَٱلْقَلَمِ وَمَا يَسْطُرُونَ ١ مَآ أَنتَ بِنِعْمَةِ رَبِّكَ بِمَجْنُونٍۢ ٢ وَإِنَّ لَكَ لَأَجْرًا غَيْرَ مَمْنُونٍۢ ٣ وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٍۢ ٤ فَسَتُبْصِرُ وَيُبْصِرُونَ ٥ بِأَييِّكُمُ ٱلْمَفْتُونُ ٦ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِۦ وَهُوَ أَعْلَمُ بِٱلْمُهْتَدِينَ ٧
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
3

১-৭ নং আয়াতের তাফসীর ‘নূন' প্রভৃতি হুরূফে হিজার বিস্তারিত বর্ণনা সূরায়ে বাকারার শুরুতে গত হয়েছে। সুতরাং এখানে পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। কথিত আছে যে, এখানে (আরবি) দ্বারা ঐ বড় মাছকে বুঝানো হয়েছে যা এক জগত পরিবেষ্টনকারী পানির উপর রয়েছে যা সপ্ত আকাশকে উঠিয়ে নিয়ে আছে। যেমন মুসনাদে আহমাদে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ “সর্বপ্রথম আল্লাহ তা'আলা কলম সৃষ্টি করেন এবং ওকে বলেনঃ “লিখো।” কলম বলেঃ “কি লিখবো?” উত্তরে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “তকদীর লিখে নাও।” সুতরাং ঐ দিন থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবার আছে সবগুলোই কলম লিখে ফেলে। তারপর আল্লাহ পাক মাছ সৃষ্টি করেন এবং পানির বাষ্প উত্থিত করেন যার দ্বারা আকাশ নির্মিত হয় এবং যমীনকে ঐ মাছের পিঠের উপর রাখা হয়। মাছ নড়ে ওঠে, ফলে যমীনও হেলতে দুলতে শুরু করে। তখন আল্লাহ তা’আলা যমীনে পাহাড় গেড়ে দেন। ফলে যমীন মযবূত হয়ে যায় এবং ওর নড়াচড়া করা বন্ধ হয়ে যায়।” অতঃপর হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) (আরবি)-এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেন। (ইমাম ইবনে আবি হাতিম ও (রঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন) ভাবার্থ এই যে, এখানে (আরবি) দ্বারা এই মাছকেই বুঝানো হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলা সর্বপ্রথম কলম ও মাছ সষ্টি করেন। কলম জিজ্ঞেস করেঃ “কি লিখবো?” উত্তরে বলা হয়ঃ “কিয়ামত পর্যন্ত যতকিছু হবে সবই লিখে নাও।” অতঃপর তিনি (আরবি)-এ আয়াতটি পাঠ করেন।” (এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেন) সুতরাং (আরবি) দ্বারা উদ্দেশ্য মাছ এবং (আরবি) দ্বারা উদ্দেশ্য এই কলম।হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেন। তারপর নূন অর্থাৎ দোয়াত সৃষ্টি করেন। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা কলমকে বলেনঃ “লিখো।” কলম বলেঃ “কি লিখবো?” উত্তরে আল্লাহ বলেনঃ “যা কিছু হচ্ছে এবং যা কিছু হবে যেমন আমল, রিযিক, বয়স, মৃত্যু ইত্যাদি সবকিছুই লিখে নাও।” তখন কলম ওগুলো লিখে নেয়।” (এ হাদীসটি ইবনে আসাকির (রঃ) বর্ণনা করেছেন) এই আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য এটাই। অতঃপর কলমের উপর মোহর লাগিয়ে দেয়া হয়। সুতরাং কিয়ামত পর্যন্ত ওটা আর চলবে না। তারপর আল্লাহ তা'আলা জ্ঞান বা বিবেক সৃষ্টি করেন এবং ওকে বলেনঃ “আমার মর্যাদার শপথ! আমার বন্ধুদের মধ্যে আমি তোমাকে পূর্ণতায় পৌঁছিয়ে দিবো এবং আমার শক্রদের মধ্যে তোমাকে অপূর্ণ রাখবো।” মুজাহিদ (রঃ) বলেনঃ এটা মশহুর ছিল যে, নূন দ্বারা ঐ মাছকে বুঝানো হয়েছে যা সপ্তম যমীনের নীচে রয়েছে। বাগাভী (রঃ) প্রমুখ তাফসীরকার বলেন যে, এই মাছের পিঠের উপর এক কংকরময় ভূমি রয়েছে যার পুরুত্ব আকাশ ও পৃথিবীর সমান। ওর উপর একটি বলদ রয়েছে যার চল্লিশ হাজার শিং রয়েছে। ওর পিঠের উপর সাতটি যমীন এবং ওগুলোর সমস্ত মাখলূক আছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। বড়ই বিস্ময়কর ব্যাপার এই যে, কতক মুফাসসির এই হাদীসকেও এই অর্থের উপরই স্থাপন করেছেন যা মুসনাদে আহমাদ প্রভৃতি হাদীস গ্রন্থে রয়েছে। তা এই যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মদীনায় আগমনের সংবাদ অবগত হন তখন তিনি তাঁর নিকট হাযির হন এবং কতকগুলো প্রশ্ন করেন। তিনি তাকে বলেনঃ “আমি আপনাকে এমন কতকগুলো প্রশ্ন করবো যেগুলো নবীগণ ছাড়া অন্য কেউ জানে না।” অতঃপর তিনি প্রশ্ন করেনঃ “কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন কি? জান্নাতীদের প্রথম খাদ্য কি? কি কারণে সন্তান কখনো পিতার দিকে আকর্ষিত হয় এবং কখনো মাতার দিকে আকর্ষিত হয়?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বলেনঃ “এই কথাগুলো এখনই হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমাকে বলে গেলেন।” তখন হযরত ইবনে সালাম (রাঃ) বলে উঠলেনঃ “ ফেরেশতাদের মধ্যেই তিনি এমন একজন ফেরেশতা যিনি ইয়াহূদীদের দুশমন।" রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন হলো এমন এক আগুন বের হওয়া যা লোকদেরকে পূর্ব দিক হতে পশ্চিম দিকে নিয়ে যাবে। আর জান্নাতীদের প্রথম খাদ্য হলো মাছের কলিজার অতিরিক্ততা। পুরুষের বীর্য স্ত্রীর বীর্যের উপর প্রাধান্য লাভ করলে পুত্র সন্তান হয় এবং যখন স্ত্রীর বীর্য স্বামীর বীর্যের উপর প্রাধান্য লাভ করে তখন কন্যা সন্তান হয়।"অন্য হাদীসে এটুকু বেশী আছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম প্রশ্ন করেনঃ “এই খাদ্যের পরে জান্নাতীদেরকে কি খেতে দেয়া হবে?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “জান্নাতী বলদ যবেহ করা হবে যা জান্নাতে চরে বেড়াতো।” তারপর জিজ্ঞেস করেনঃ “তাদেরকে কোন পানি পান করানো হবে?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) জবাবে বলেনঃ “সালসাবীল' নামক নহর হতে তাদেরকে পান করানো হবে।” একথাও বলা হয়েছে যে, (আরবি) দ্বারা আলোর তক্তা উদ্দেশ্য। একটি মুরসাল গারীব হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এ আয়াতটি পাঠ করে বলেনঃ “এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নূরের তক্তা এবং নূরের কলম যা চালিত হয়েছে। এমন সব জিনিসের উপর যেগুলো কিয়ামত পর্যন্ত হতে থাকবে।” ইবনে জুরায়েজ (রঃ) বলেনঃ আমাকে খবর দেয়া হয়েছে যে, ওটা এমন একটি নূরানী কলম যার দৈর্ঘ্য একশ বছরের পথ। একথাও বলা হয়েছে যে, (আরবি) দ্বারা দোয়াত এবং (আরবি) দ্বারা কলম কে বুঝানো হয়েছে। হাসান (রঃ) এবং কাতাদাহও (রঃ) একথাই বলেছেন। একটি অত্যন্ত গারীব বা দুর্বল মার হাদীসেও এটা বর্ণিত হয়েছে। যা মুসনাদে ইবনে হাতিমে রয়েছে যে, আল্লাহ তা’আলা (আরবি) অর্থাৎ দোয়াত সৃষ্টি করেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহ দোয়াত ও কলম সৃষ্টি করেন। তারপর কলমকে বলেনঃ “লিখো।” কলম প্রশ্ন করেঃ “কি লিখবো?” আল্লাহ তা'আলা উত্তরে বলেনঃ “কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে ওগুলো লিখো। যেমন আমল সমূহ, ভালই হোক আর মন্দই হোক, রিযিক, তা হালালই হোক অথবা হারামই হোক। তারপর এও লিখোঃ কোন জিনিস দুনিয়ায় কখন আসবে, কতদিন থাকবে এবং কখন বের হবে? আর আল্লাহ তা’আলা বান্দাদের উপর রক্ষক ফেরেশতাদেরকে নিয়োগ করেছেন এবং কিতাবের জন্যে দারোগা নিযুক্ত করেছেন। রক্ষক ফেরেশতাগণ প্রতিদিনের আমল সম্পর্কে দারোগাকে জিজ্ঞেস করে লিখে নেন। যখন রিযিক শেষ হয়ে যায়, আয়ু পূর্ণ হয় এবং মৃত্যুর সময় এসে পড়ে তখন রক্ষক ফেরেশতাগণ দারোগা ফেরেশতাদের নিকট এসে জিজ্ঞেস করেনঃ “বলুন, আজকের আমল কি আছে?" তারা উত্তরে বলেনঃ “এই ব্যক্তির জন্যে এখন আমাদের কাছে কিছুই নেই।" একথা শুনে এই ফেরেশতাগণ নীচে নেমে আসেন এবং দেখেন যে, ঐ ব্যক্তি মারা গেছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এটা বর্ণনা করার পর বলেন, তোমরা তো আরব সম্প্রদায়, তোমরা কি কুরআন কারীমে রক্ষক ফেরেশতাদের সম্পর্কে পড় নি? বলা হয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ তোমরা যা আমল করতে তা আমরা লিখে রাখতাম।” ভাবার্থ হচ্ছেঃ তোমাদের আমলগুলো আমরা মূল হতে লিখে নিতাম। (৪৫:২৯)এতো হলো (আরবি) শব্দ সম্পর্কে বর্ণনা। এখন (আরবি) শব্দ সম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। বাহ্যতঃ এখানে (আরবি) দ্বারা সাধারণ কলম উদ্দেশ্য, যা দ্বারা লিখা হয়। যেমন আল্লাহ পাকের উক্তিঃ (আরবি)অর্থাৎ “পাঠ কর, আর তোমার প্রতিপালক মহামহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন- শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানতো না।” (৯৬:৩-৫)এই কলমের কসম খেয়ে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা এটা অবহিত করছেন যে, তিনি মানুষকে লিখন শিক্ষা দিয়েছেন যার মাধ্যমে তারা ইলম বা জ্ঞান অর্জন করছে, এটাও তাঁর একটা বড় নিয়ামত। এজন্যেই এরপরই তিনি বলেনঃ এবং কসম তার যা তারা লিপিবদ্ধ করে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত মুজাহিদ (রঃ) এবং হযরত কাতাদাহ (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, ভাবার্থ হচ্ছেঃ শপথ ঐ জিনিসের যা তারা লিখে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে এও বর্ণিত আছে যে, এর ভাবার্থ হলোঃ শপথ ঐ জিনিসের যা তারা জানে। হযরত সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা ফেরেশতাদের লিখনকে বুঝানো হয়েছে, যারা বান্দাদের আমল লিখে থাকেন। অন্যান্য তাফসীরকারগণ বলেন যে, এর দ্বারা ঐ কলমকে বুঝানো হয়েছে যা কুদরতীরূপে চালিত হয়েছে এবং আসমান ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে তকদীর লিপিবদ্ধ করেছে। তারা এর অনুকূলে ঐ হাদীস দু’টি পেশ করেছেন যা কলমের বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে। হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা ঐ কলম উদ্দেশ্য যার দ্বারা যিকির লিখিত হয়েছে। এরপর আল্লাহ তা’আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেনঃ তুমি তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহে পাগল নও, যেমন তোমার সম্প্রদায়ের মূখ ও সত্য অস্বীকারকারীরা তোমাকে বলে থাকে। বরং তোমার জন্যে অবশ্যই রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার। কেননা, তুমি রিসালাতের দায়িত্ব পূর্ণরূপে পালন করেছে। এবং আমার পথে অসহনীয় কষ্ট সহ্য করেছে। তাই আমি তোমাকে বে-হিসাব পুরস্কার প্রদান করবো। তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, (আরবি) –এর অর্থ হলো (আরবি) অর্থাৎ মহান দ্বীন এবং তা হলো দ্বীন ইসলাম। মুজাহিদ (রঃ), আবূ মালিক (রঃ), সুদ্দী (রঃ) এবং রবী ইবনে আনাস (রঃ) একথাই বলেছেন। যহহাক (রঃ) এবং ইবনে যায়েদও (রঃ) এরূপই বলেছেন। আতিয়্যাহ (রঃ) বলেন যে, (আরবি) দ্বারা (আরবি) বা উত্তম শিষ্টাচার বুঝানো হয়েছে। হযরত কাতাদাহ্ (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চরিত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ “তাঁর চরিত্র হলো কুরআন (অর্থাৎ কুরআনেই তাঁর চরিত্রের বর্ণনা দেয়া হয়েছে)।অন্য হাদীসে রয়েছে যে, হযরত আয়েশা (রাঃ) উত্তরে বলেনঃ “তুমি কি কুরআন পড়নি?” প্রশ্নকারী হযরত সাঈদ ইবনে হিশাম (রাঃ) বলেনঃ “হ্যাঁ, পড়েছি।” তখন হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ “কুরআন কারীমই তাঁর চরিত্র ছিল।" সহীহ্ মুসলিমে এ হাদীসটি পূর্ণরূপে বর্ণিত হয়েছে যা আমরা ইনশাআল্লাহ্ সূরা মুযযাম্মিলের তাফসীরে বর্ণনা করবো। বানু সাওয়াদ গোত্রের একটি লোক হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি উপরোক্ত উত্তর দেন এবং (আরবি) –এ আয়াতটি পাঠ করেন। তখন ঐ লোকটি তাকে বলেনঃ “দু' একটি ঘটনা বর্ণনা করুন!” তখন হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ “তাহলে শুননা! একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর জন্যে আমি এবং হযরত হাফসা (রাঃ) উভয়েই খাদ্য রান্না করি। আমি আমার দাসীকে বলিঃ দেখো, যদি আমার খাদ্যের পূর্বে হাফসা (রাঃ)-এর খাদ্য এসে পড়ে তবে তুমি তা ফেলে দিবে। আমার দাসী তাই করে এবং খাদ্যের পাত্রটিও ভেঙ্গে যায়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) ছড়িয়ে পড়া বিক্ষিপ্ত খাদ্যগুলো একত্রিত করেন এবং বলেনঃ “এই পাত্রের পরিবর্তে একটি ভাল পাত্র তাকে তুমি দাও।” আল্লাহর শপথ! এ ছাড়া আর কোন শাসন গর্জন ও তিরস্কার ভৎসনা তিনি আমাকে করেননি।" (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে)এ হাদীসটি যে কয়েক ধারায় বিভিন্ন শব্দে কয়েকটি কিতাবে বর্ণিত হয়েছে তার একটি ভাবার্থ তো এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর প্রকৃতিতে জন্মগতভাবেই আল্লাহ তা'আলা পছন্দনীয় চরিত্র, উত্তম স্বভাব এবং পবিত্র অভ্যাস সৃষ্টি করে রেখেছিলেন। সুতরাং এভাবেই কুরআন কারীমের উপর তাঁর আমল এমনই ছিল যে, তিনি যেন ছিলেন কুরআনের আহকামের মূর্তিমান আমলী নমুনা। প্রত্যেকটি হুকুম পালনে এবং প্রত্যেকটি নিষিদ্ধ বিষয় হতে বিরত থাকাতে তাঁর অবস্থা এই ছিল যে, কুরআনে যা কিছু রয়েছে তা যেন তাঁরই অভ্যাস ও মহৎ চরিত্রের বর্ণনা। হযরত আনাস (রাঃ) বলেনঃ “দশ বছর ধরে আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর খিদমতে থেকেছি কিন্তু তিনি কোন এক দিনের তরেও আমাকে উহ (যন্ত্রণা প্রকাশক ধ্বনি) পর্যন্ত বলেননি। কোন করণীয় কাজ না করলেও এবং যা করণীয় নয় তা করে বসলেও তিনি আমাকে কোন শাসন গর্জন করা এবং ধমক দেয়া তো দূরের কথা এরূপ কেন হলো?' এ কথাটিও বলেননি। তিনি সবারই চেয়ে বেশী চরিত্রবান ছিলেন। তাঁর হাতের তালুর চেয়ে বেশী নরম আমি কোন রেশম অথবা অন্য কোন জিনিস স্পর্শ করিনি। আর তার ঘর্ম অপেক্ষা বেশী সুগন্ধময় জিনিস আমি শুকিনি। মিশক আম্বরও না এবং আতরও না।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)হযরত বারা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) চেহারায় সবচেয়ে সুন্দর ছিলেন, ছিলেন সবচেয়ে চরিত্রবান। তাঁর পবিত্র দেহ খুব লম্বাও ছিল না এবং খুব খাটোও ছিল না। (সহীহ বুখারীতে এ হাদীসটি বর্ণিত) এ সম্পর্কে বহু হাদীস রয়েছে। ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রঃ) তাঁর কিতাবুশ শামায়েলে এ সম্পর্কীয় হাদীস বর্ণনা করেছেন। মুসনাদে আহমাদে হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ) কখনো তাঁর হাত দ্বারা না তাঁর কোন দাসকে প্রহার করেছেন, না প্রহার করেছেন তাঁর কোন স্ত্রীকে এবং না প্রহার করেছেন অন্য কাউকেও। তবে হ্যাঁ, আল্লাহর পথে জিহাদ করেছেন (এবং ঐ জিহাদে কাউকে মেরেছেন) সেটা অন্য কথা। যখন তাঁকে দু’টি কাজের যে কোন একটিকে অবলম্বন করার অধিকার দেয়া হতো তখন তিনি সহজটি অবলম্বন করতেন। তবে সেটা গুনাহর কাজ হলে তিনি তা থেকে বহু দূরে থাকতেন। কখনো তিনি কারো নিকট হতে কোন প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে কেউ আল্লাহর মর্যাদা ক্ষুন্ন করলে তিনি আল্লাহর আহকাম জারি করার জন্যে অবশ্যই তার নিকট হতে প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন, কাজেই এটা ভিন্ন কথা।মুসনাদে আহমাদে হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই আমি উত্তম ও পবিত্র চরিত্র পরিপূর্ণ বা বাস্তবে রূপায়িত করার জন্যেই প্রেরিত হয়েছি। (অর্থাৎ নিজের জীবনে বাস্তবায়িত করার জন্যেই প্রেরিত হয়েছি)।”এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ হে নবী (সঃ) শীঘ্রই তুমি দেখবে এবং তারাও দেখবে যে, তোমাদের মধ্যে কে বিকারগ্রস্ত। যেমন আল্লাহ পাক অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “আগামীকল্য তারা জানবে, কে মিথ্যাবাদী, দাম্ভিক।” (৫৪:২৬) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “আমরা অথবা তোমরা অবশ্যই হিদায়াতের উপর কিংবা প্রকাশ্য বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছি।” (৩৪:২৪) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ অর্থাৎ এই হকীকত বা তত্ত্ব কিয়ামতের দিন খুলে যাবে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতেই এটাও বর্ণিত আছে যে, (আরবি) বলা হয় (আরবি) বা পাগলকে। হযরত মুজাহিদ (রঃ) প্রমুখ মনীষীও একথাই বলেন। হযরত কাতাদাহ (রঃ) প্রমুখ গুরুজন বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ তুমি শীঘ্রই জানতে পারবে কে বেশী শয়তানের নিকটবর্তী। (আরবি) এর বাহ্যিক অর্থ এই যে, যে ব্যক্তি সত্য হতে সরে পড়ে এবং পথভ্রষ্ট হয়ে যায়। (আরবি) এর উপর (আরবি) আনয়নের কারণ এই যে, যেন তা (আরবি) প্রমাণ করে। অর্থাৎ এর প্রকৃতরূপ ছিলঃ (আরবি) অর্থাৎ ‘শীঘ্রই তুমি জানবে এবং তারাও জানবে’ অথবা এইরূপ ছিলঃ (আরবি) অর্থাৎ ‘তোমাদের মধ্যে কে বিকারগ্রস্ত তা শীঘ্রই তুমিও খবর দিবে এবং তারাও খবর দিবে।' এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ তোমার প্রতিপালক তো সম্যক অবগত আছেন কে তাঁর পথ হতে বিচ্যুত হয়েছে এবং তিনি সম্যক জানেন তাদেরকে যারা সৎপথ প্রাপ্ত। অর্থাৎ কারা সৎপথের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে এবং কাদের পদস্খলন ঘটেছে তা আল্লাহ তা'আলা সম্যক অবগত।