۞ ان الله يامر بالعدل والاحسان وايتاء ذي القربى وينهى عن الفحشاء والمنكر والبغي يعظكم لعلكم تذكرون ٩٠
۞ إِنَّ ٱللَّهَ يَأْمُرُ بِٱلْعَدْلِ وَٱلْإِحْسَـٰنِ وَإِيتَآئِ ذِى ٱلْقُرْبَىٰ وَيَنْهَىٰ عَنِ ٱلْفَحْشَآءِ وَٱلْمُنكَرِ وَٱلْبَغْىِ ۚ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ ٩٠
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
3

৯০ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা‘আলা উক্ত আয়াতে তাঁর বান্দাদেরকে ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্মীয়-স্বজনদেরকে দান করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাদেরকে নিষেধ করেছেন অশ্লীলতা, সীমালঙ্ঘন ও অসৎ কাজ করতে। الْعَدْلِ এর শাব্দিক অর্থ ন্যায়পরায়ণতা, ইনসাফ করা ও অবিচার না করা। আদল আল্লাহ তা‘আলার হকের ক্ষেত্রেও করতে হবে এবং মানুষের হকের ক্ষেত্রেও করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা ও বান্দার যত হক রয়েছে তা যথাযথভাবে আদায় করে দেয়াই হল আদল। তা আর্থিক হোক, শারীরিক হোক বা অন্য যে কোন হক হোক। বাড়াবাড়ি করা যাবে না এবং শিথিলতাও করা যাবে না। অনুরূপ আদল এর অন্যতম একটি অর্থ হল ন্যায়বিচার করা। অর্থাৎ বিচারের ক্ষেত্রে কারো পক্ষপাতিত্ব না করা।

আল্লাহ তা‘আলা ন্যায় বিচার সম্পর্কে বলেন:

(يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُوْنُوْا قَوّٰمِيْنَ لِلّٰهِ شُهَدَا۬ءَ بِالْقِسْطِ ز وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَاٰنُ قَوْمٍ عَلٰٓي أَلَّا تَعْدِلُوْا ط اِعْدِلُوْا قف هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوٰي)

“হে মু’মিনগণ! আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাক; কোন সম্প্রদায়ের শত্র“তা যেন তোমাদেরকে এর প্রতি উদ্যত না করে যে, তোমরা ন্যায়বিচার করবে না, তোমরা ন্যায়বিচার কর, এটা তাকওয়ার অধিকতর নিকটবর্তী।” (সূরা মায়িদা ৫:৮)

ইহসান অর্থ হল সদাচরণ, ক্ষমা ও সহানুভূতি দেখানো এবং অনুগ্রহ করা। অর্থাৎ আবশ্যক দায়িত্ব্ ও কর্তব্য পালন করার পরেও এবং যথাযথ হক দিয়ে দেয়ার পরেও অতিরিক্ত কিছু করা বা দেয়া। যেমন কোন শ্রমিকের প্রাপ্য একশত টাকার সাথে দশ টাকা বেশি দিলেন, এটা তার প্রতি ইহসান। আল্লাহ তা‘আলা সদাচরণ সম্পর্কে বলেন:

(وَأَحْسِنْ كَمَآ أَحْسَنَ اللّٰهُ إِلَيْكَ وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الْأَرْضِ)

“তুমি অনুগ্রহ কর যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চেয়ো না।” (সূরা ক্বাসাস ২৮:৭৭)

হাদীসে এসেছে; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

ارْحَمُوا مَنْ فِي الأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِي السَّمَاء

জমিনে যারা রয়েছে তাদের প্রতি রহম কর আকাশে যিনি রয়েছেন তিনি তোমাদেরকে রহম করবেন। (তিরমিযী হা: ১৯২৪, সহীহ)

ইহসানের অন্যতম আরেকটি অর্থ হল একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য ইবাদত করা এবং সুন্দরভাবে তা সম্পন্ন করা। হাদীসে এসেছে:

(أَنْ تَعْبُدَ اللّٰهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ)

তুমি এমনভাবে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করবে যেন তাঁকে দেখছো, যদি না দেখতে পাও তাহলে জেনে রেখো, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে দেখছেন। (সহীহ বুখারী হা: ৫০, সহীহ মুসলিম হা: ৮)

পূর্বে আদলের আলোচনা করার পর এখানে আবার আত্মীয়-স্বজনের অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হচ্ছে তার উদ্দেশ্য, এ ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা।

আল্লাহ তা‘আলা আত্মীয়-স্বজনের হক সম্পর্কে বলেন:

(فَاٰتِ ذَا الْقُرْبٰي حَقَّه۫ وَالْمِسْكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِ ط ذٰلِكَ خَيْرٌ لِّلَّذِيْنَ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَ اللّٰهِ ز وَأُولٰ۬ئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ)

“অতএব আত্মীয়-স্বজনকে তাদের হক দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরদেরকেও। এটা তাদের জন্য উত্তম, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে, আর তারাই হল সফলকাম।” (সূরা রূম ৩০:৩৮)

হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে আল্লাহ তা‘আলা তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবেন, আর যে সম্পর্ক ছিন্ন করবে তার সাথে আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্ক ছিন্ন করবেন। (সহীহ বুখারী হা: ৫৯৮৭)

আর অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার তো কোন সীমা নেই। চিত্ত বিনোদন, সংস্কৃতি ও প্রগতির নামে আজ অশ্লীলতা, নোংরামী ও বেহায়াপনা লাগামহীন হয়ে গেছে। অশ্লীলতা ও অসৎ কাজ (মানুষের বিবেকও বলে দেয় যে) কক্ষনোই ভাল নয়।

আল্লাহ তা‘আলা অশ্লীলতা, অসৎ কার্য ও সীমালংঘন না করার ব্যাপারে বলেন:

(قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّـيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ)

“বল:‎ নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা আর পাপ ও অন্যায় বিরোধিতা।” (সূরা আ‘রাফ ৭:৩৩)

وَالْبَغْيِ অর্থ সীমালংঘন ও অত্যাচার। শরীয়ত যে সীমারেখা দিয়েছে তার বাইরে যাওয়াই হল সীমালংঘন করা। অন্যের হক নষ্ট করাও সীমালংঘন করার অন্তর্ভুক্ত।

অতএব আমাদের প্রত্যেকের উচিত, আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ অনুপাতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা, মানুষের সাথে সদাচরণ করা, আত্মীয়তার হক যথাযথভাবে আদায় করা এবং মন্দ ও অশ্লীলকার্য পরিহার করা।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. সৎ কাজ করতে হবে, অসৎ কাজ করা যাবে না।

২. কোন কিছুর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা যাবে না।

৩. আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করতে হবে।

৪. সকল ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার ও ন্যায় নীতি গ্রহণ করতে হবে।

৫. অশ্লীল কার্য পরিহার করতে হবে।