يا ايها الذين امنوا اجتنبوا كثيرا من الظن ان بعض الظن اثم ولا تجسسوا ولا يغتب بعضكم بعضا ايحب احدكم ان ياكل لحم اخيه ميتا فكرهتموه واتقوا الله ان الله تواب رحيم ١٢
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱجْتَنِبُوا۟ كَثِيرًۭا مِّنَ ٱلظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ ٱلظَّنِّ إِثْمٌۭ ۖ وَلَا تَجَسَّسُوا۟ وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًۭا فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ تَوَّابٌۭ رَّحِيمٌۭ ١٢
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
3

১২ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে অহেতুক কারো ব্যাপারে বেশি বেশি কু-ধারণা করা থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। কারণ অধিকাংশ ধারণাই পাপ, এতে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, সুসম্পর্ক বিনষ্ট হয়, যার সম্পর্কে খারাপ ধারণা করা হয় তাকে নিয়ে গীবত ও নিন্দা করা হয়। এসব কিছুই পরস্পরের মধ্যে শত্র“তার সৃষ্টি করে যার ফলে সমাজে অশান্তি সৃষ্টি হয়।

একজন মু’মিন অন্য মু’মিনের ব্যাপারে খারাপ ধারণা করা পাপ কাজ। বরং মু’মিনদের পরস্পরের প্রতি ধারণা হবে ভাল। তাই মু’মিনদের ব্যাপারে অনাকাক্সিক্ষত কোন সংবাদ শুনলেই খারাপ ধারণা করা যাবে না, সে বিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে হবে। যেমন আয়িশাহ (রাঃ)-এর ব্যাপারে মুনাফিকরা যখন খারাপ কথা প্রচার শুরু করল তখন কতক মু’মিনও তা বিশ্বাস করে খারাপ ধারণা করেছিল। আল্লাহ তা‘আলা তাদের তিরস্কার করে বললেন : যখন মু’মিন এমন সংবাদ শুনল তখন নিজেদের ব্যাপারে কেন ভাল ধারণা করেনি? তবে কেউ অন্যায় ও শরীয়ত বিরোধী কাজে লিপ্ত হলে তার ব্যাপারে খারাপ ধারণা করা যেতে পারে।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাকো, কেননা ধারণা করা বড় মিথ্যা। অন্যের প্রতি কু-ধারণা পোষণ করো না এবং অন্যের দোষ-ত্র“টির খোঁজে লিপ্ত হয়ো না। তোমরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ করো না এবং পরস্পর সম্পর্ক ছিন্ন করো না বরং হে আল্লাহ তা‘আলার বান্দাগণ পরস্পর ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে জীবনযাপন কর। (সহীহ বুখারী হা. ৬৭২৪, সহীহ মুসলিম হা. ২৫৬৩)

(وَلَا تَجَسَّسُوا)

অর্থাৎ তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না, গোয়েন্দাগিরী করো না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে গোয়েন্দাগিরী খারাপ কাজে হয়ে থাকে। এটাকে আরবিতে التحسس বলা হয়। আর التحسس (অর্থাৎ তালাশ করা) অধিকাংশ সময় কল্যাণকর কাজে হয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(يٰبَنِيَّ اذْهَبُوْا فَتَحَسَّسُوْا مِنْ يُّوْسُفَ وَأَخِيْهِ) ‏‏

‘হে আমার পুত্রগণ! তোমরা যাও, ইউসুফ ও তার সহোদর ভাইয়ের অনুসন্ধান কর‎।’ (সূরা ইউসুফ ১২ : ৮৭) সুতরাং কারো ক্ষতি বা হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য দোষ বা ব্যক্তিগত বিষয় খুঁজে বেড়ানো নিষেধ।

আল্লামা আলূসী তাফসীর রুহুল মা‘আনীতে বলেন : التجسس শব্দের অর্থ অন্যের গোপন বিষয় সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা। যে সকল দোষ উল্লেখ করাকে মানুষ খারাপ মনে করে কিংবা অন্য কেউ তা জানুক সে তা পছন্দ করে না এমন সব বিষয় জানার চেষ্টা করা।

আবূ বারযাহ আসলামী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা আমাদেরকে বক্তৃতার সময় বললেন : তোমাদের যাদের অন্তরে ঈমান প্রবেশ করেনি অথচ মুখে ঈমান এনেছ, তোমরা মুসলিমদের দোষ-ত্র“টি খুঁজে বের করো না। যে ব্যক্তি মুসলিমদের দোষ-ত্র“টির পেছনে লেগে থাকে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ঘরের মধ্যেই অপমানিত করবেন। (আবূ দাঊদ হা. ৪৮৮২, সহীহ)

অপরের বাড়িতে উঁকি মেরে দেখাও দোষ খোঁজার অন্তর্ভুক্ত। হাদীসে বলা হয়েছে, কেউ বিনা অনুমতিতে কারোর ঘরে উঁকি মেরে দেখলে তার চোখ ফুটা করে দাও। (সহীহ বুখারী হা. ৫৯২৪)

অন্য বর্ণনায় এসেছে : যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের কথা শোনার জন্য কান খাড়া করে অথচ তারা তা অপছন্দ করে, কিয়ামতের দিন তার দুই কানে গলিত শিশা ঢালা হবে। (সহীহ বুখারী হা. ৭০৪২)

তবে মুসলিম সরকার ইসলামী রাষ্ট্রের শত্র“দের তথ্য সংগ্রহ ও রাষ্ট্রোদ্রোহীদের অবস্থান জানার জন্য গোয়েন্দা নিযুক্ত রাখতে পারেন।

(وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا)

‘তোমাদের মধ্যে কেউ যেন কারো গীবত না করে’ অর্থাৎ অন্য লোকের কাছে কোন ব্যক্তির দোষ-ত্র“টি তার অনুপস্থিতিতে বলো না যা শুনলে সে ব্যক্তি কষ্ট পায়।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : বলা হলো : হে আল্লাহর রাসূল! গীবত কী? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : তোমার ভাইদের এমন কিছু উল্লেখ করো যা সে অপছন্দ করে। বলা হলো : আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাইদের মাঝে থাকে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : তুমি যা বলছ তা যদি তার মাঝে থাকে তাহলে তুমি তার গীবত করলে আর যদি না থাকে তাহলে তুমি তাকে অপবাদ দিলে। (সহীহ মুসলিম হা. ২৫৮৯)

গীবত এমন একটি জঘন্য ও নিন্দনীয় অপরাধ, আল্লাহ তা‘আলা তা মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন। গীবত অঙ্গ-ভঙ্গি, কথা ও কাজ যে কোনভাবে হতে পাবে। গীবত করা ও শ্রবণ করা সমান অপরাধ।

আলোচ্য আয়াতে উল্লেখিত বেশি বেশি ধারণা করা, গোয়েন্দাগিরি করা ও গীবত করা একেতো হারাম আবার এগুলো এমন ধ্বংসাত্মক আচরণ যা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত মানুষের মাঝে দ্বন্দ্ব, কলহ, বিবাদ ও ফাসাদ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে মহিলাদের মাঝে গীবত করার প্রচলন বেশি। তারা দুজন একত্রিত হলে তৃতীয় আরেক জনের গীবত না করে ওঠেই না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন :

مَنْ يَضْمَنْ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الجَنَّةَ

যে ব্যক্তি আমার কাছে তার দুচোয়ালের মধ্যবর্তী স্থান ও দু’রানের মধ্যবর্তী স্থান সংরক্ষণের দায়িত্ব নেবে আমি তার জান্নাতের যাওয়ার দায়িত্ব নেব। (সহীহ বুখারী হা. ৬৪৭৪)

অর্থাৎ যে ব্যক্তি মুখ দিয়ে কোন প্রকার পাপ করবে না এবং লজ্জাস্থানের অপব্যবহার করবে না রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জান্নাতে প্রবেশের দায়িত্ব নেবেন। অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা, সম্মানহানি করা হারাম করেছেন এবং কারো প্রতি খারাপ ধারণা করবে তাও হারাম করেছেন। (সিলসিলা সহীহাহ হা. ৩৪২০)

অতএব আমাদের সকলের উচিত এসব ঘৃণ্য আচরণ পরিহার করে সুন্দর, সুখী ও সমৃদ্ধশালী পরিবার ও সমাজ গঠন করা।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. অহেতুক কারো ব্যাপারে কু-ধারণা করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

২. ফাসাদ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে গোয়েন্দাগিরি করা হারাম।

৩. গীবত একটি ঘৃণ্য আচরণ যা ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজকে ধ্বংস করে।