আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন- আমি ঐসব মুহাজির, আনসার ও তাদের অনুসারীদের প্রতি সন্তুষ্ট যারা আমার সন্তুষ্টি লাভ করার ব্যাপারে অগ্রবর্তী হয়েছে। আমি যে তাদের প্রতি সন্তুষ্ট রয়েছি তা এইভাবে প্রমাণিত যে, আমি তাদের জন্যে সুখময় জান্নাত প্রস্তুত করে রেখেছি।শাবী (রঃ) বলেন যে, মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে অগ্রবর্তী ও প্রথম তারাই যারা হুদায়বিয়ায় বায়আ’তে রিযওয়ানের মর্যাদা লাভ করেছিলেন। আর আবূ মূসা আশআরী (রাঃ), সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব (রঃ), মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (রঃ), হাসান (রঃ) এবং কাতাদা (রঃ) বলেন যে, তারা হচ্ছেন ঐসব লোক যারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে দুই কিবলার (বায়তুল মুকাদ্দাস ও কাবা) দিকে মুখ করে সালাত আদায় করেছেন।মুহাম্মাদ ইবনে কা'ব আল কারাসী (রঃ) বলেন যে, উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এমন একজন লোকের পার্শ্ব দিয়ে গমন করেন যিনি নিম্নের আয়াতটি পাঠ করছিলেনঃ (আরবী) তখন উমার (রাঃ) তার হাতখানা ধরে নেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “কে তোমাকে এটা এরূপে পাঠ করালেন?” লোকটি উত্তরে বললেনঃ “উবাই ইবনে কা'ব (রাঃ)।” তখন উমার (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ “চলো, আমরা উবাই ইবনে কা'ব (রাঃ)-এর কাছে যাই এবং তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করি।” অতঃপর উবাই ইবনে কা'ব (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনি কি এই আয়াতটিকে এভাবে পড়তে বলেছেন?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “হ্যাঁ।” তখন পুনরায় উমার (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে কি আপনি এভাবেই পড়তে শুনেছেন?” জবাবে তিনি বলেনঃ “হ্যা ।” উমার (রাঃ) তখন বললেনঃ “তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, আমরা এমন এক মর্যাদা লাভ করেছি যা আমাদের পরে কেউ লাভ করতে পারবে না।” এ কথা শুনে উবাই ইবনে কা'ব (রাঃ) বলেন যে, এই আয়াতের সত্যতা প্রমাণকারী সূরায়ে জুমাআ’র প্রথম দিকের আয়াতটিও বটে। তা হচ্ছে- (আরবী) অর্থাৎ আর (উপস্থিতরা ব্যতীত) অন্যান্য লোকদের জন্যেও, যারা তাদের সাথে শামিল হবে, কিন্তু এখনও শামিল হয়নি, আর তিনি মহাপরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়।”(৬২:৩) সূরায়ে হাশরেও রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আর (তাদের জন্যেও) যারা (ইসলাম ধর্মে) তাদের (আনসার ও মুহাজিরদের) পরে এসেছে, যারা প্রার্থনা করে-হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আর আমাদের ঐ ভাইদেরকেও যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছে এবং ঈমানদারদের প্রতি আমাদের অন্তরে যেন ঈর্ষা না হয়। হে আমাদের রব! আপনি বড় স্নেহশীল, করুণাময়।” (৫৯:১০) সূরায়ে আনফালেও রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আর যারা (নবী সঃ-এর হিজরতের) পরবর্তীকালে ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং তোমাদের সাথে একত্রে জিহাদ করেছে, বস্তুতঃ তারা তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” (৮:৭৫) ইবনে জারীর (রঃ) এটা রিওয়ায়াত করেছেন এবং বলেছেন যে, হাসান বসরী (রঃ) শব্দটিকে পেশ দিয়ে অর্থাৎ পড়তেন এবং (আরবী) এর উপর করতেন। তখন অর্থ দাঁড়াবেঃ “মুহাজিরদের মধ্যে যারা অগ্রবর্তী ও প্রথম এবং আনসার ও তাদের অনুসারীদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট।” আফসোস ঐ হতভাগ্যদের প্রতি যারা এই সাহাবীদের প্রতি হিংসা পোষণ করে থাকে, তাদেরকে গালি দেয়। অথবা কোন কোন সাহাবীকে গালি দিয়ে থাকে, বিশেষ করে ঐ সাহাবীকে যিনি সমস্ত সাহাবীর নেতা, নবী (সঃ)-এর স্থলাভিষিক্ত, রাসলুল্লাহ (সঃ)-এর পরেই যার মর্যাদা, যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ সাহাবী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন অর্থাৎ মহান খলীফা আবু বকর ইবনে আবি কুহাফা (রাঃ)! এরা হচ্ছে রাফেযী সম্প্রদায়ের বিভ্রান্ত দল। তারা সর্বশ্রেষ্ঠ সাহাবীর প্রতি শত্রুতা পোষণ করে থাকে। তাকে তারা গালি-গালাজ করে। আমরা এই দুষ্কার্য থেকে মহান আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এটা এ কথাই প্রমাণ করে যে, এদের বুদ্ধি-বিবেক লোপ পেয়েছে এবং অন্তর বিগড়ে গেছে। যদি এই দুৰ্বত্তের দল এমন লোকদেরকে গালি দেয় যাদের প্রতি আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং পবিত্র কুরআনে তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকার সনদ দিয়েছেন, তবে কোন্ মুখে তারা কুরআনের প্রতি ঈমান আনার দাবী করে? এখন কুরআনের উপর ঈমানই আর কি করে থাকলো? আর আহলে সুন্নাত ঐ লোকদেরকে সম্মান করেন এবং ঐ লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন যাদের প্রতি আল্লাহ তা'আলা সন্তুষ্ট রয়েছেন। এই আহলে সুন্নাত ঐ লোকদেরকে মন্দ বলেন যাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) মন্দ বলেছেন। আর তাঁরা ঐ লোকদেরকে ভালবাসেন যাদেরকে আল্লাহ তা'আলা ভালবাসেন। তারা ঐ লোকদের বিরুদ্ধাচরণ করেন স্বয়ং আল্লাহ যাদের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন। তারা হিদায়াতের অনুসারী। তারা বিদআতী নন। তাঁরা নবী (সঃ)-এরই অনুসরণ করে থাকেন। তারাই হচ্ছেন আল্লাহর দল এবং তারাই সফলকাম। তারাই হচ্ছেন আল্লাহর মুমিন বান্দা।