৩৬-৩৮ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা দুনিয়ার তুচ্ছতা, হীনতা ও স্বল্পতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন যে, পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক ও খেল-তামাশা ছাড়া কিছুই নয়, তবে যে কাজ আল্লাহর জন্যে করা হয় তা-ই শুধু বাকী থাকে। আল্লাহ তা'আলা যে বান্দার মোটেই মুখাপেক্ষী নন তার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেনঃ তোমাদের ভাল কর্মের সুফল তোমরাই লাভ করবে, তিনি তোমাদের ধন-মালের প্রত্যাশী নন। তিনি তোমাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন এই কারণে যে, যাতে ওর মাধ্যমে গরীব-দুঃখীরা লালিত-পালিত হতে পারে। আর এর মাধ্যমে তোমরাও যাতে পরকালের পুণ্য সঞ্চয় করতে পার। এরপর মহান আল্লাহ মানুষের কার্পণ্য এবং কার্পণ্যের পর অন্তরের হিংসা প্রকাশিত হওয়ার অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ ধন-সম্পদ বের করার ব্যাপারে এটা তো হয়েই থাকে যে, ওটা মানুষের নিকট খুবই প্রিয় হয় এবং তা বের করতে তার কাছে খুবই কঠিন ঠেকে।অতঃপর কৃপণদের কার্পণ্যের কুফল বর্ণনা করা হচ্ছে যে, আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ খরচ করা হতে বিরত থাকলে প্রকৃতপক্ষে নিজেরই ক্ষতি সাধন করা হয়। কেননা, যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করতে কার্পণ্য করে, এই কৃপণতার শাস্তি তাদেরকেই ভোগ করতে হবে। আর দান-খয়রাতের ফযীলত এবং ওর পুরস্কার হতেও তারা বঞ্চিত থাকবে। আল্লাহ তা'আলা সম্পূর্ণরূপে অভাবমুক্ত এবং মানুষ অভাবগ্রস্ত আর তারা তাঁর চরম মুখাপেক্ষী। অভাবমুক্ত ও অমুখাপেক্ষী হওয়া আল্লাহ তা'আলার অপরিহার্য গুণ এবং অভাবগ্রস্ত ও মুখাপেক্ষী হওয়া মাখলুক বা সৃষ্টজীবের অপরিহার্য গুণ। ঐ গুণ আল্লাহ তা'আলা হতে কখনো পৃথক হবে না এবং এই গুণ মাখলূক হতে কখনো পৃথক হবে না।মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ বলেনঃ তোমরা যদি শরীয়ত মেনে চলতে অস্বীকার কর তবে আল্লাহ তা'আলা তোমাদের স্থলে অন্য জাতিকে আনয়ন করবেন, যারা তোমাদের মত (অবাধ্য) হবে না। তারা শরীয়তকে পূর্ণভাবে মেনে চলবে। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একদা (আরবী) -এই আয়াতটি পাঠ করেন, তখন সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! যাদেরকে আমাদের স্থলবর্তী করা হতো তারা কোন জাতি হতো?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত সালমান ফারেসীর (রাঃ) স্কন্ধে হস্ত রেখে বলেনঃ “এ ব্যক্তি এবং এর কওম। দ্বীন যদি সুরাইয়ার (সপ্তর্ষিমণ্ডলস্থ নক্ষত্রের) নিকটেও থাকতো তবুও পারস্যের লোকেরা ওটা নিয়ে আসতো।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) ও ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন খালিদ যনজী নামক এর একজন বর্ণনাকারীর ব্যাপারে কোন কোন ইমাম কিছু সমালোচনা করেছেন)