৬৯-৭৩ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “যখন আমার দূতেরা ইবরাহীমের (আঃ) নিকট সুসংবাদ নিয়ে আসলো।” তাঁরা ছিলেন ফেরেশতা। একটি উক্তি এই রয়েছে যে, তাঁরা তাঁকে হযরত ইসহাকের (আঃ) সুসংবাদ দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় উক্তি এই আছে যে, তাঁরা তাঁকে হযরত লূতের (আঃ) কওমের ধ্বংস প্রাপ্ত হওয়ার সুসংবাদ দিয়েছিলেন। প্রথম উক্তিটির সাক্ষী হচ্ছে আল্লাহ পাকের নিম্নের উক্তিঃ (আরবী)অর্থাৎ “যখন ইবরাহীম (আঃ) হতে ভয় দূরীভূত হলো এবং তার কাছে সুসংবাদ আসলো, তখন সে লূতের (আঃ) কওমের ব্যাপারে আমার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হলো। (১১ :৭৪) ফেরেশতারা এসে তাঁকে সালাম দিলেন। তিনিও তাদের সালামের জবাবে (আরবি) বললেন। ইলমে বায়ানের আলেমগণ বলেন যে, ফেরেশতাদের সালামের উত্তরে হযরত ইবরাহীমের (আঃ) সালামটাই উত্তম। কেননা, (আরবি) শব্দটি বা (আরবি) পেশ দিয়ে পড়ায় এতে দৃঢ়তা ও স্থায়িত্ব এসেছে। সালাম বিনিময়ের পরেই হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাদের সামনে আতিথ্যরূপে গো-বৎসের ভাজা মাংস পেশ করেন। যখন তিনি দেখেন যে, নবাগত মেহমানদের হাত খাবারের দিকে বাড়ছে না তখন তিনি তাদেরকে অদ্ভুত ভাবতে লাগলেন এবং শঙ্কিত হলেন। হযরত সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, হযরত লূতের (আঃ) কওমের ধ্বংস সাধনের জন্যে যে ফেরেশতাদের পাঠান হয়েছিল তাঁরা যুবক মানুষের আকারে ভূ-পৃষ্ঠে অবতরণ করেছিলেন। তাঁরা হযরত ইবরাহীমের (আঃ) বাড়িতে আগমন করেন। তিনি তাদেরকে দেখে খুবই সম্মান করেন এবং তাড়াতাড়ি গো-বৎসের গোশত গরম পাথরে সেঁকে নিয়ে তাদের সামনে পেশ করেন। নিজেও তিনি তাঁদের সাথে দস্তরখানায় বসে পড়েন। তাঁর স্ত্রী হয়রত সারা’ তাদের পানাহার করাবার কাজে লেগে যান। এটা সর্বজন বিদিত যে, ফেরেশতারা পানাহার করেন না। সুতরাং তারা খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন এবং বলেনঃ “আমরা কোন খাদ্যের মূল্য না দেয়া পর্যন্ত তা খাই না।” হযরত ইবরাহীম (আঃ) বলেনঃ “তা হলে মূল্য প্রদান করুন!” তাঁরা জিজ্ঞেস করলেনঃ এর মূল্য কত? তিনি উত্তরে বললেনঃ “বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু করা এবং খাওয়ার শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা, এটাই হচ্ছে এর মূল্য।” তারা এ কথা শুনে হযরত জিবরাইল (আঃ) হযরত মীকাঈলের (আঃ) দিকে দৃষ্টিপাত করেন এবং তারা পরস্পরে বলাবলি করেন যে, বাস্তবিকই তার মধ্যে এই যোগ্যতা রয়েছে যে, আল্লাহ তাআ’লা তাঁকে নিজের খলিল (দোস্ত) বানিয়ে নেবেন। তখনও তাঁরা যখন খাদ্য খেলেন না তখন বিভিন্ন প্রকারের ধারণা তাঁর অন্তরে জাগ্রত হলো। হযরত সারা’ (রঃ) যখন দেখলেন যে, হযরত ইবরাহীম (আঃ) স্বয়ং তাঁদেরকে আহার করানোর কাজে লেগে রয়েছেন, তথাপি তাঁরা খাচ্ছেন না তখন তিনি হেসে উঠলেন। আর এদিকে হযরত ইবরাহীম (আঃ) ভীত হয়ে পড়লেন। তাঁর এ অবস্থা দেখে ফেরেশতাগণ তাঁকে বললেনঃ “ভয়ের কোন কারণ নেই। এখন তাঁর ভয় দূর করার জন্যে তারা প্রকৃত ব্যাপার তাঁর সামনে তুলে ধরলেন। তাঁরা বললেনঃ “আমরা মানুষ নই, বরং ফেরেশতা। হযরত লূতের (আঃ) কওমকে ধ্বংস করার জন্যে আমরা প্রেরিত হয়েছি।”হযরত লূতের (আঃ) কওমের ধ্বংসের কথা শুনে হযরত সারা’ (রঃ) খুশী হলেন। ঐ সময় তিনি আরো একটি সুসংবাদ শুনালেন। তা এই যে, ঐ নৈরাশ্যের বয়সেও তিনি সন্তান প্রসব করবেন। এটা ছিল তাঁর কাছে খুবই বিস্ময়কর ব্যাপার। তিনি এতেও বিস্ময় বোধ করলেন যে, যে কওমের উপর আল্লাহর শাস্তি অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে তারা তো সম্পূর্ণরূপে গাফেল রয়েছে। মোট কথা, ফেরেশতাগণ তাকে ইসহাক (আঃ) নামক সন্তানের সুসংবাদ প্রদান করেন এবং এ কথাও বলেন, হযরত ইসহাকের (আঃ) ঔরসে ইয়াকুব (আঃ) নামক সন্তান জন্মগ্রহণ করবেন।এই আয়াত দ্বারা এই দলিল গ্রহণ করা যায় যে, ‘যাবীহুল্লাহ' (আল্লাহর পথে যবাইকৃত) হযরত ইসমাইল (আঃ) ছিলেন। কেননা, হযরত ইসহাকেরই (আঃ) তো সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল এবং সাথে সাথে এ সুসংবাদও দেয়া হয়েছিল যে, তাঁর ঔরসে হযরত ইয়াকুব (আঃ) জন্মগ্রহণ করবেন। ফেরেশতাদের এই শুভ সংবাদ শুনে নারীদের সাধারণ অভ্যাস অনুযায়ী হযরত সারা’ (রঃ) বিস্ময় প্রকাশ করেন। তাঁর বিস্ময়ের কারণ ছিল এই যে, তাঁরা স্বামী-স্ত্রী উভয়েই তো বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন। সুতরাং সেই বয়সে সন্তান লাভ কিরূপে সম্ভব? এটা বড়ই বিস্ময়কর ব্যাপারই বটে। এ দেখে ফেরেশতাগণ বললেনঃ “আল্লাহ তাআ’লার কাজে বিস্মিত হওয়ার কি আছে? আল্লাহ তাআ’লা আপনাদেরকে এই বয়সেই সন্তান দান করবেন। যদিও আজ পর্যন্ত আপনার কোন সন্তান হয় নাই এবং আপনার স্বামী বুড়ো হয়ে গেছেন, তথাপি জেনে রাখুন যে, আল্লাহর ক্ষমতার কোন শেষ নেই। তিনি যা চান তা-ই হয়ে থাকে। হে নবী পরিবারের লোক! আপনাদের উপর আল্লাহ তাআ’লার রহমত ও বরকত রয়েছে। সুতরাং আপনাদের জন্যে এটা শোভনীয় নয় যে, তাঁর কাজে বিস্ময় প্রকাশ করবেন। তিনি হচ্ছেন প্রশংসার যোগ্য ও মহা মহিমান্বিত।