حتى اذا جاء امرنا وفار التنور قلنا احمل فيها من كل زوجين اثنين واهلك الا من سبق عليه القول ومن امن وما امن معه الا قليل ٤٠
حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءَ أَمْرُنَا وَفَارَ ٱلتَّنُّورُ قُلْنَا ٱحْمِلْ فِيهَا مِن كُلٍّۢ زَوْجَيْنِ ٱثْنَيْنِ وَأَهْلَكَ إِلَّا مَن سَبَقَ عَلَيْهِ ٱلْقَوْلُ وَمَنْ ءَامَنَ ۚ وَمَآ ءَامَنَ مَعَهُۥٓ إِلَّا قَلِيلٌۭ ٤٠
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
3

আল্লাহ তাআ’লা হযরত নূহের (রাঃ) সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন সেই ওয়াদা অনুযায়ী আকাশ থেকে অনবরত মুষলধারে বৃষ্টি হতে শুরু করে এবং যমীনের মধ্য থেকেও পানি উথলিয়ে উঠে। যেমন মহান আল্লাহ এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “অতঃপর আমি অধিক বর্ষণশীল পানি দ্বারা আকাশের দ্বারসমূহ খুলে দিলাম। আর যমীন হতে ফোয়ারাসমূহ জারী করে দিলাম, অতঃপর (উভয়) পানি অবধারিত কাজের জন্যে সম্মিলিত হলো আর আমি তাকে (নূহ আঃ কে) তক্তা ও পেরেকযুক্ত নৌকাতে আরোহণ করালাম। যা আমার তত্ত্বাবধানে চলছিল, এ সব কিছু তার প্রতিশোধ গ্রহণের জন্যে করেছিলাম; যার অমর্যাদা করা হয়েছিল।” (৫৪: ১১-১৪) যমীন হতে পানি উথলিয়ে উঠা সম্পর্কে হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে যমীন হতে ঝরণা প্রবাহিত হয়, এমনকি চুল্লী হতেও পানি উথলিয়ে উঠে। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী জমহূরেরও উক্তি এটাই। হযরত আলী ইবনু আবি তালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, (আরবি) এর অর্থ হচ্ছে সকাল হওয়া ও ফজরের আলোকিত হওয়া অর্থাৎ সকালের আলো এবং ফজরের ঔজ্জ্বল্য। কিন্তু স্পষ্টতর উক্তি প্রথমটিই।মুজাহিদ (রঃ) ও শা’বী (রঃ) বলেন যে, এই চুল্লীটি কুফায় ছিল। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এটা ভারতে অবস্থিত একটি ঝরণা বা প্রস্রবণ। কাতাদা’ (রঃ) বলেন যে, এটা জাযীরায় অবস্থিত একটি নদী যাকে ‘আইনুল অরদাহ’ বলা হয়। কিন্তু এসব উক্তি গারীব বা দুর্বল। মোট কথা, এ সব নিদর্শন প্রকাশিত হওয়া মাত্রই হযরত নূহকে আল্লাহ তাআ’লা নির্দেশ দেন যে, তিনি যেন তাঁর সাথে নৌকায় প্রত্যেক প্রকারের এক জোড়া করে প্রাণী উঠিয়ে নেন। একটি করে নর এবং একটি করে মাদী। বলা হয়েছে যে, প্রাণহীন মাখলুকের জন্যেও এই নির্দেশ ছিল। যেমন গাছপালা ও লতাপাতা। কথিত আছে যে, হযরত নূহ (আঃ) সর্বপ্রথম যে পাখিটিকে নৌকায় উঠান তা ছিল ‘দাররা’ নামক পাখি। আর জন্তুগুলির মধ্যে সর্বশেষে যে জন্তুটিকে উঠান তা ছিল গাধা। শয়তান গাধাটির লেজ ধরে লটকে যায়। সে নৌকায় উঠার ইচ্ছা করে, কিন্তু শয়তান ওর লেজ ধরেছিল বলে তার কাছে খুবই ভারী বোধহয় এবং উঠতে সক্ষম হয় না। হযরত নূহ (আঃ) তাকে বলেনঃ “তুমি উঠে যাও যদিও শয়তান তোমার সাথে রয়েছে।” সুতরাং তারা উভয়েই নৌকায় আরোহণ করে।কোন কোন গুরুজন বলেন যে, হযরত নূহ (আঃ) এবং তাঁর সঙ্গীয় মু'মিনরা সিংহকে তাঁদের সাথে নৌকায় উঠিয়ে নিয়ে যেতে অক্ষম হচ্ছিলেন। অবশেষে তার জ্বর হয়ে যায়। তখন তাঁরা তাকে নৌকায় উঠিয়ে নেন।হযরত যায়েদ ইবনু আসলাম (রঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “নূহ (আঃ) যখন সমস্ত জন্তু এক জোড়া করে নৌকায় উঠিয়ে নেন তখন তাঁর সঙ্গীগণ তাঁকে বলেনঃ “পশুগুলি কিরূপে নিশ্চিন্ত ও নিরাপদ থাকতে পারে, অথচ তাদের সাথে সিংহ রয়েছে?” তখন আল্লাহ তাআ’লা সিংহের উপর জ্বর চাপিয়ে দেন। যমীনে অবতারিত প্রথম জ্বর ছিল এটাই। অতঃপর জনগণ ইঁদুরের অভিযোগ আনয়ন করে বলেনঃ “এই দুষ্ট প্রাণী আমাদের খাদ্য ও অন্যান্য জিনিষ নষ্ট করে দিচ্ছে!” তখন আল্লাহ তাআ’লার নির্দেশক্রমে সিংহ হাঁচি ফেললো এবং সেই হাঁচির সাথে বিড়াল বেরিয়ে আসলো। ফলে ইদুর এক প্রান্তে লুকিয়ে গেল।” (এ হাদীসটি ইবনু আবি হা’তিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)আল্লাহ পাকের উক্তিঃ (আরবি) অর্থাৎ হে নূহ (আঃ)! তুমি নৌকায় তোমার পরিবারবর্গকে উঠিয়ে নাও। তারা হচ্ছে তাঁর পরিবারের লোক ও তাঁর আত্মীয় স্বজন। কিন্তু তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে নাই তাদেরকে নৌকায় উঠানো চলবে না। ইয়াম নামক তাঁর এক পুত্রও ঐ কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সুতরাং সেও পৃথক হয়ে যায়। তাঁর স্ত্রীও ছিল তাদের অন্তর্ভুক্ত। সেও আল্লাহর রাসূলকে (অর্থাৎ তার স্বামী নূহকে আঃ) অস্বীকার করেছিল।(আরবি) অর্থাৎ হে নূহ (আঃ)! তোমার কওমের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকেও তোমার সাথে নৌকায় উঠিয়ে নাও। কিন্তু এই মু'মিনদের সংখ্যা ছিল খুবই কম। সাড়ে নয় শ’ বছর অবস্থানের সুদীর্ঘ সময়ের মধ্যে অতি অল্প সংখ্যক লোকই হযরত নূহ (আঃ)-এর উপর ঈমান এনেছিল। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তারা ছিল মোট আশি জন লোক। তাদের মধ্যে স্ত্রী লোকও ছিল। হযরত কা'ব (রাঃ) বলেন যে, তারা ছিল বাহাত্তর জন। একটি উক্তি আছে যে, তারা ছিল মাত্র দশজন। একটি উক্তি এও রয়েছে যে, তাঁরা ছিলেন হযরত নূহ (আঃ) স্বয়ং এবং তার তিন পুত্র। তারা হচ্ছেন- সাম, হাম ও ইয়াফাস। আর ছিলেন চার জন স্ত্রী লোক। তিন জন তো ছিলেন এই তিন পুত্রের স্ত্রী এবং অন্য একজন ছিলেন (তার কাফির পুত্র) ইয়ামের স্ত্রী। এ কথাও বলা হয়েছে, চতুর্থ স্ত্রী লোকটি ছিল স্বয়ং হযরত নূহের (আঃ)-এর স্ত্রী। কিন্তু এতে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। বরং প্রকাশ্য কথা এটাই যে, হযরত নূহের (আঃ) স্ত্রী ধ্বংসপ্রাপ্ত লোকদের সাথে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। কেননা, সে তার কওমের দ্বীনের উপরই ছিল। তাই, যেমনভাবে হযরত লূতের (আঃ) স্ত্রী ধ্বংস হয়েছিল, তেমনিভাবে হযরত নূহের (আঃ) স্ত্রীও ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআ’লাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।