وبشر الذين امنوا وعملوا الصالحات ان لهم جنات تجري من تحتها الانهار كلما رزقوا منها من ثمرة رزقا قالوا هاذا الذي رزقنا من قبل واتوا به متشابها ولهم فيها ازواج مطهرة وهم فيها خالدون ٢٥
وَبَشِّرِ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّـٰتٍۢ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَـٰرُ ۖ كُلَّمَا رُزِقُوا۟ مِنْهَا مِن ثَمَرَةٍۢ رِّزْقًۭا ۙ قَالُوا۟ هَـٰذَا ٱلَّذِى رُزِقْنَا مِن قَبْلُ ۖ وَأُتُوا۟ بِهِۦ مُتَشَـٰبِهًۭا ۖ وَلَهُمْ فِيهَآ أَزْوَٰجٌۭ مُّطَهَّرَةٌۭ ۖ وَهُمْ فِيهَا خَـٰلِدُونَ ٢٥
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
۳

২৫ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা‘আলা পূর্বোক্ত আয়াতগুলোতে কাফির ও ধর্মদ্রোহীদের শাস্তি ও লাঞ্ছনার বর্ণনা দেয়ার পর এখানে মু’মিন ও সৎ লোকেদের প্রতিদান ও সম্মানের বর্ণনা দিচ্ছেন। কুরআনকে مثاني (মাসানী) নামকরণের এটাও একটি উল্লেখযোগ্য মত যে, এতে প্রত্যেক বিষয় জোড়া জোড়া উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে ঈমানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে কুফরের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। মু’মিনদের ভাল পরিণামের সাথে সাথে কাফির মুশরিকদের অশুভ পরিণতির কথা উল্লেখ করেছেন। (তাফসীর ইবনে কাসীর: ১/১৬১)

আবার কুরআনের প্রত্যেক স্থানে ঈমানের সাথে সাথে সৎ কর্ম তথা নেক আমলের কথা উল্লেখ করে এ কথা পরিস্কার করে দিয়েছেন যে, ঈমান এবং নেক আমল পরস্পর অবিচ্ছেদ্য অংশ। নেক আমল ব্যতীত ঈমান ফলপ্রসূ নয় এবং আল্লাহ তা‘আলার নিকট ঈমান ছাড়া নেক আমলের কোন গুরুত্ব নেই। আর নেক আমল তখনই নেক আমল বলে গণ্য হবে যখন তা সুন্নাত মোতাবেক হবে এবং আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভের নিয়তে করা হবে। সুন্নাত পরিপন্থী আমল গ্রহণযোগ্য নয়। অনুরূপ খ্যাতি লাভ ও লোক দেখানোর জন্য কৃত আমলও প্রত্যাখ্যাত। তাই যারা ঈমানের সাথে সুন্নাত মোতাবেক আমল করবে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়। অত্র নদীসমূহের প্রকার উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(فِیْھَآ اَنْھٰرٌ مِّنْ مَّا۬ئٍ غَیْرِ اٰسِنٍﺆ وَاَنْھٰرٌ مِّنْ لَّبَنٍ لَّمْ یَتَغَیَّرْ طَعْمُھ۫ﺆ وَاَنْھٰرٌ مِّنْ خَمْرٍ لَّذَّةٍ لِّلشّٰرِبِیْنَﹰ وَاَنْھٰرٌ مِّنْ عَسَلٍ مُّصَفًّی)

“যার মধ্যে বহমান থাকবে পরিস্কার পানির নহর, এমন দুধের নহর যার স্বাদ কখনও পরিবর্তন হয় না, এমন শরাবের নহর যারা পান করে তাদের জন্য সুস্বাদু এবং এমন মধুর নহর যা খাঁটি ও স্বচ্ছ।”(সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:১৫)

জান্নাতের তলদেশ দিয়ে বয়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে তার বৃক্ষরাজী ও অট্টালিকার নিম্নদেশ দিয়ে নদী বয়ে যাওয়া। (ইবনু কাসির, তাফসীর অত্র আয়াত)

অন্য হাদীসে এসেছে ‘‘হাওজে কাউসার”-এর দু’ধারে খাঁটি মুক্তার গম্বুজ থাকবে। তার মাটি হচ্ছে খাঁটি মৃগনাভী, তার কুচি পাথরগুলো হচ্ছে মণি-মুক্তা ও অতি মূল্যবান পাথর। (সহীহ বুখারী; কিতাবুত তাফসীর হা:৪৯৬৪, সহীহ মুসলিম হা: ১৬২, ৪০০)

(كُلَّمَا رُزِقُوْا مِنْهَا مِنْ ثَمَرَةٍ رِّزْقًا)

‘যখনই তা হতে তাদেরকে রিযিক হিসেবে ফলসমূহ প্রদান করা হবে’অর্থাৎ যখনই জান্নাতিদেরকে জান্নাত হতে জীবিকাস্বরূপ ফলমূল প্রদান করা হবে তখনই তারা বলবে- এটা তো ইতোপূর্বে আমাদেরকে দুনিয়াতেও দেয়া হয়েছে।

ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের জন্য যে উদ্যান তৈরি করে রেখেছেন যখন তার গাছপালা থেকে তাদেরকে ফলমূল প্রদান করা হবে তখন তারা বলবে- এগুলো তো দুনিয়াতেও আমাদেরকে দেয়া হয়েছিল।

ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, জান্নাতবাসীদের এ কথা “ইতোপূর্বে আমাদেরকে দেয়া হয়েছিল” এর অর্থ হচ্ছে যখনই তাদেরকে জান্নাতে ফলমূল প্রদান করা হবে তখন তারা বলবে, এগুলো তো দুনিয়ায় আমাদেরকে দেয়া হয়েছে (বর্ণনাটি হাসান)। (তাফসীর তবারী: ১/২৩৮-৯)

ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন, অন্যরা বলেছেন এর ব্যাখ্যা হল, জান্নাতীরা বলবে- ফলগুলো ইতোপূর্বে আমাদেরকে দেয়া হয়েছে। একথা তাদের বলার কারণ হল তারা জান্নাতের ফলগুলো দুনিয়ার ফলের সদৃশ দেখতে পাবে। (তাফসীর তবারী: ১/২৮৯) যেমন ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: জান্নাতে যা কিছু আছে তা দুনিয়ার সাথে কেবল নামে সদৃশ। কারণ জান্নাতের নেয়ামতের ব্যাপারে হাদীসে এসেছে: (এমন নেয়ামত যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শ্রবণ করেনি এবং কোন মানুষের অন্তরে তার সঠিক ধারণার উদয় হয়নি। (সহীহ বুখারী হা: ৪৭৭৯, ৪৭৮০)

ইমাম আওযায়ী (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনে কাসীর থেকে বর্ণনা করেন যে, জান্নাতীর কাছে এক পেয়ালা ভর্তি সরবত নিয়ে আসা হবে, সে তা খাবে। আরেক পেয়ালা ভর্তি নিয়ে আসা হলে সে বলবে এটা তো এখন পান করলাম। ফেরেশতারা বলবে, পান করতে থাকুন। কেননা এর রং অভিন্ন এবং স্বাদ ভিন্ন।

তিনি আরো বলেন- জান্নাতের ঘাস হবে জাফরান, আর পাহাড়গুলো হবে মেশকে আম্বার। ছোট ছোট সুন্দর বালক ফলমূল নিয়ে জান্নাতিদের কাছে আসবে আর তারা খাবে। আবার নিয়ে আসবে তখন জান্নাতীরা বলবে এখনই তো খেলাম। তখন বালকরা বলবে- খেতে থাকুন, এর রং অভিন্ন কিন্তু স্বাদ ভিন্ন।

(وَلَهُمْ فِيْهَآ أَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ)

“সেখানে তাদের জন্য থাকবে পুতঃপবিত্র সঙ্গিণী”জান্নাতীরা জান্নাতে যা কিছু পাবে তার অন্যতম হল পবিত্রা স্ত্রী। অন্যত্র জান্নাতী স্ত্রীদের গুণাবলী বর্ণনা করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

كَأَنَّهُنَّ الْيَاقُوْتُ وَالْمَرْجَانُ) ‏)

“তারা (জান্নাতী স্ত্রীগণ) যেন হীরা ও মতি।”(সূরা রহমান ৫৫:৫৮)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(وَحُورٌ عِينٌ - كَأَمْثَالِ اللُّؤْلُؤِ الْمَكْنُون)

“আর (তাদের জন্য থাকবে) সুন্দর আনতনয়না হূর, সুরক্ষিত মুক্তা সদৃশ, ” (সূরা ওয়াকিয়া ৫৬:২২-২৩)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَكَوَاعِبَ أَتْرَابًا)

“আরও আছে সমবয়স্কা, পূর্ণ যৌবনা তরুণী।” (সূরা নাবা ৭৮:৩৩) এছাড়াও অনেক আয়াত রয়েছে যাতে জান্নাতী নারীগণের গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে। (আযওয়াউল বায়ান, অত্র আয়াতের তাফসীর)

এ জান্নাতী স্ত্রীগণ চরিত্রগত, গঠনগত, ভাষাগত ও সৃষ্টিগতভাবে সকল দিক দিয়ে পুতঃপবিত্র।

চরিত্রগত পবিত্র হল- তারা হবে পূর্ণযৌবনা-কুমারী, স্বামী সোহাগিণী, উত্তম আচরণকারিণী ও স্বামীর পূর্ণ আনুগত্যশীলা। গঠনগত পবিত্র হল- মাসিক, নিফাস, বীর্য, প্রশ্রাব-পায়খানা, থুথু, নাকের ময়লা ও দুর্গন্ধ থেকে পবিত্র। পূর্ণ সৌন্দর্যের অধিকারিণী, তাদের কোন ত্র“টি ও কদর্যতা থাকবে না। ভাষাগত পবিত্র হল- তারা কোন কটুবাক্য বলবে না। সৃষ্টিগত পবিত্র হল- তারা হবে টানাটানা চোখবিশিষ্ট আনতনয়না, তারা স্বামী ছাড়া অন্য কারো দিকে দৃষ্টি তুলে তাকাবে না।

(وَّهُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ)

‘সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে।’অর্থাৎ জান্নাতীরা জান্নাতে চিরকাল থাকবে, কোন দিন সেখান থেকে বের হবে না। হাদীসে এসেছে: জান্নাতীরা জান্নাতে আর জাহান্নামীরা জাহান্নামে চলে যাবার পর একজন ফেরেশতা ঘোষণা দেবে, হে জাহান্নামীরা! আর মৃত্যু নেই। হে জান্নাতীরা! আর মৃত্যু নেই। যারা যে অবস্থায় আছ, সব সময় ঐ অবস্থাতেই থাকবে। (সহীহ বুখারী হা: ৬৫৪৪, সহীহ মুসলিম হা: ২৮৫০)

অত্র আয়াতে ৪টি জিনিসের কথা বলা হয়েছে-

১. সুসংবাদ দাতা- তিনি হলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবে উম্মাতের ব্যক্তিবর্গ।

২. সুসংবাদ প্রাপ্ত- তারা হল সৎ আমলকারী মু’মিনগণ।

৩. যে জিনিসের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে তা হল নেয়ামতপূর্ণ জান্নাত।

৪. এ সুসংবাদ পাওয়ার মাধ্যম- তা হল ঈমান ও সৎ আমল। (তাফসীরে সা‘দী: পৃ. ২৩)

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. ঈমান ও আমল অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই ঈমানের সাথে আমল অবশ্যই থাকতে হবে।

২. যারা ঈমান আনবে ও সৎ আমল করবে তাদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে নেয়ামতপূর্ণ জান্নাত।

৩. জান্নাতী স্ত্রী ও খাদ্যের বৈশিষ্ট্য অবগত হলাম।