وعد الله الذين امنوا منكم وعملوا الصالحات ليستخلفنهم في الارض كما استخلف الذين من قبلهم وليمكنن لهم دينهم الذي ارتضى لهم وليبدلنهم من بعد خوفهم امنا يعبدونني لا يشركون بي شييا ومن كفر بعد ذالك فاولايك هم الفاسقون ٥٥
وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ مِنكُمْ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِى ٱلْأَرْضِ كَمَا ٱسْتَخْلَفَ ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ ٱلَّذِى ٱرْتَضَىٰ لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُم مِّنۢ بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًۭا ۚ يَعْبُدُونَنِى لَا يُشْرِكُونَ بِى شَيْـًۭٔا ۚ وَمَن كَفَرَ بَعْدَ ذَٰلِكَ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْفَـٰسِقُونَ ٥٥
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
۳

আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা স্বীয় রাসূল (সঃ)-এর সাথে ওয়াদা করছেন যে, তিনি তাঁর উম্মতকে যমীনের মালিক বানিয়ে দিবেন, তাদেরকে তিনি লোকদের নেতা করবেন এবং দেশ তাদের দ্বারা জনবসতিপূর্ণ হবে। আল্লাহর বান্দারা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে। আজ জনগণ লোকদের থেকে ভীত-সন্ত্রস্ত রয়েছে, কাল তারা পূর্ণ নিরাপত্তা লাভ করবে। হুকুমত তাদের হবে এবং তারাই হবে সাম্রাজ্যের মালিক। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যে, হয়েছেও তাই। মক্কা, খায়বার, বাহরাইন, আরব উপদ্বীপ এবং ইয়ামন তো রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর যুগেই বিজিত হয়েছিল। হিজরের মাজুসীরা জিযিয়া কর দিতে স্বীকৃত হয়ে মুসলমানদের অধীনতা স্বীকার করে নেয়। সিরিয়ার কোন কোন অংশেরও এই অবস্থাই হয়। রোমক সম্রাট কায়সার উপহার উপঢৌকন পাঠিয়ে দেন। মিসরের গভর্নরও রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর খিদমতে উপঢৌকন পাঠায়। ইসকানদারিয়ার বাদশাহ মাকুকাস এবং আম্মানের বাদশাহরাও এটাই করেন এবং এইভাবে নিজেদের আনুগত্য প্রমাণ করেন। হাবশের বাদশাহ নাজ্জাসী (রঃ) তো মুসলমানই হয়ে যান যিনি আসহামার পরে হাবশের বাদশাহ হয়েছিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন ইন্তেকাল করেন এবং হযরত আবু বকর (রাঃ) খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তখন তিনি হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ (রাঃ)-এর নেতৃত্বে এক সেনাবাহিনী পারস্য অভিমুখে প্রেরণ করেন। সেখানে তিনি ক্রমান্বয়ে বিজয় লাভ করতে থাকেন এবং কুফরীর গাছগুলোকে কেটে ফেলে চতুর্দিকে ইসলামের চারা রোপণ করেন। হযরত আবু উবাদাহ ইবনে জাররাহ (রাঃ) প্রমুখ সেনাবাহিনীর অধীনে ইসলামের বীর সৈনিকদেরকে সিরিয়ার রাজ্যগুলোর দিকে প্রেরণ করেন এবং তাঁরা সেখানে মুহাম্মাদ (সঃ) পতাকা উত্তোলন করেন এবং ক্রুশ চিহ্নযুক্ত পতাকাগুলোকে উল্টোমুখে নিক্ষেপ করেন। হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ)-এর নেতৃত্বে একদল সেনাবাহিনী মিসরের দিকে প্রেরিত হয়। বসরা, দামে, আম্মান প্রভৃতি রাজ্য বিজয়ের পর হযরত আবু বকর (রাঃ) মৃত্যুর ডাকে সাড়া দেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি মহান। আল্লাহর ইঙ্গিতক্রমে হযরত উমার (রাঃ)-কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে যান। এটা সত্য কথা যে, আকাশের নীচে কোন নবীর পরে হযরত উমার (রাঃ)-এর যুগের মত যুগ আর আসেনি। তার স্বভাবগত শক্তি, তাঁর পুণ্য, তার চরিত্র, তাঁর ন্যায়পরায়ণতা এবং তার আল্লাহভীতির দৃষ্টান্ত দুনিয়ায় তার পরে অনুসন্ধান করা বৃথা কালক্ষেপণ ছাড়া কিছুই নয়। সমগ্র সিরিয়া ও মিসর এবং পারস্যের অধিকাংশ অঞ্চল তার খিলাফতের আমলে বিজিত হয়। পারস্য সম্রাট কিসরার সাম্রাজ্য ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। স্বয়ং সম্রাটের মাথা লুকাবার কোন জায়গা থাকে। তাকে লাঞ্ছিত অবস্থায় পালিয়ে বেড়াতে হয়। রোমক সম্রাট কায়সারকেও সাম্রাজ্যচ্যুত করা হয়। সিরিয়া সাম্রাজ্য তার হাত ছাড়া হয়ে যায় এবং কনস্টান্টিনোপলে পালিয়ে গিয়ে তাকে আত্মগোপন করতে হয়। এই সাম্রাজ্যগুলোর বহু বছরের সঞ্চিত ধন-সম্পদ মুসলমানদের হস্তগত হয়। আল্লাহর এই সৎ ও মধুর চরিত্রের অধিকারী বান্দাদের মধ্যে এগুলো বন্টন করা হয়। এইভাবে মহান আল্লাহ তাঁর ঐ ওয়াদা পূর্ণ করেন যা তিনি তার প্রিয় বন্ধু হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর সাথে করেছিলেন।অতঃপর হযরত উসমান (রাঃ)-এর খিলাফতের যুগ আসে এবং পূর্ব হতে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত আল্লাহর দ্বীন ছড়িয়ে পড়ে। আল্লাহর সেনাবাহিনী একদিকে পূর্ব দিকের শেষ প্রান্ত এবং অপরদিকে পশ্চিম দিকের শেষ প্রান্তে পৌঁছে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। ইসলামী মুজাহিদদের উন্মুক্ত তরবারী আল্লাহর তাওহীদকে দুনিয়ার প্রান্তে প্রান্তে পৌঁছিয়ে দেন। স্পেন, কিবরাস এমন কি সুদূর চীন পর্যন্ত হযরত উমার (রাঃ)-এর যুগে বিজিত হয়। পারস্য সম্রাট কিসরা নিহত হয়। তার সাম্রাজ্যের নাম ও নিশানা নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়। অগ্নি উপাসকদের হাজার হাজার বছরের উপাসনালয় নির্বাপিত হয় এবং প্রত্যেকটি উঁচু টিলা হতে আল্লাহু আকবার ধ্বনি গুঞ্জরিত হয়। অপরদিকে মাদায়েন, ইরাক, খখারাসান, আহওয়ায ইত্যাদি সাম্রাজ্য জয় করা হয়। তুর্কীদের সাথে বিশাল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। অবশেষে তাদের বড় বাদশাহ খাকান মাটির সাথে মিশে যায়। সে চরমভাবে লাঞ্ছিত ও পর্যদস্ত হয় এবং যমীনের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত হতে হযরত উসমান (রাঃ)-এর দরবারে খাজনা পৌছতে থাকে। সত্য কথা তো এটাই যে, মুসলিম বীর পুরুষদের এই জীবন মরণ সংগ্রামের মূলে ছিল হযরত উসমান (রাঃ)-এর তিলাওয়াতে কুরআনের বরকত। কুরআন কারীমের প্রতি তাঁর যে আসক্তি ও অনুরাগ ছিল তা বর্ণনাতীত। কুরআনকে একত্রিতকরণ ও মুখস্থকরণ এবং প্রচার ও প্রসারকরণে তিনি যে খিদমত আঞ্জাম দেন তার তুলনা মিলে না। তাঁর যুগের থতি লক্ষ্য করলে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণীটি মানসপটে ভেসে ওঠে। তিনি বলেছিলেনঃ “আমার জন্যে যমীনকে এক জায়গায় একত্রিত ও জড় করা য়, এমনকি আমি পূর্ব দিক ও পশ্চিম দিক দেখে নিই। আমার উম্মতের সাম্রাজ্য ইন পর্যন্ত পৌঁছে যাবে যেখান পর্যন্ত আমাকে দেখানো হয়েছিল। এখন আৰা দেখতে পাই যে, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সঃ) আমাদের সাথে যে ভদ করেছিলেন তা সত্যে পরিণত হয়েছে। সুতরাং আমরা আল্লাহর প্রতি এবং তৰ ৰাসূল (সঃ)-এর প্রতি ঈমানের প্রার্থনা করছি এবং যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশে তিনি সন্তুষ্ট হন সেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার আমরা তাঁর কাছে তাওফীক চাচ্ছি। হযরত জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছি- “মুসলমানদের কাজ উত্তমরূপে চালু থাকবে, শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যে বারো জন খলীফা হবে।” অতঃপর তিনি একটি বাক্য আস্তে বলেন যা আমার কর্ণগোচর হয়নি। আমি ওটা আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যে কথাটি আস্তে বলেছিলেন তাহলোঃ “এদের সবাই কুরায়েশী হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)রাসূলুল্লাহ (সঃ) একথাটি ঐদিনের সন্ধ্যায় বলেছিলেন যেই দিন হযরত মায়েয ইবনে মালিক (রাঃ)-কে রজম বা প্রস্তরাঘাতে হত্যা করা হয়েছিল। সুতরাং জানা গেল যে, এই বারোজন খলীফা অবশ্যই হবেন। কিন্তু এটা স্মরণ রাখার বিষয় যে, এই বারো জন খলীফা তারা নয় যাদেরকে শিয়া সম্প্রদায় ধারণা করছে। কেননা শিয়াদের ইমামদের মধ্যে এমন বহু ইমামও রয়েছে যারা খিলাফত ও সালতানাতের কোন অংশ সারা জীবনেও লাভ করেনি। এই বারো জন খলীফা সবাই হবেন কুরায়েশ বংশের। তাঁরা হবেন ন্যায়ের সাথে ফায়সালাকারী। তাঁদের সুসংবাদ পূর্ববর্তী কিতাবসমূহেও রয়েছে। এটা শর্ত নয় যে, এই বারো জন খলীফা পর্যায়ক্রমে ও ক্রমিকভাবে হবেন। বরং হতে পারে যে, তারা বিভিন্ন যুগে হবেন। চার জন খলীফা তো ক্রমিকভাবেই হয়েছেন। যেমন হযরত আবু বকর (রাঃ), হযরত উমার (রাঃ), হযরত উসমান (রাঃ) এবং হযরত আলী (রাঃ)। তাঁদের পর ক্রম কেটে গেছে। পরে এরূপ খলীফা গত হয়েছেন এবং পরবর্তীতেও কোন কোন খলীফার আগমন ঘটতে পারে। সঠিক যুগের অবগতি একমাত্র মহান আল্লাহরই রয়েছে। তবে এটা নিশ্চিত কথা যে, ইমাম মেহেদীও এই বারো জনের একজন হবেন যার নাম ও কুনিয়াত হবে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নাম ও কুনিয়াত মুতাবেক। তিনি সমগ্র ভূ-পৃষ্ঠকে আদল ও ইনসাফ দ্বারা পূর্ণ করে দিবেন, যখন সারা দুনিয়া অন্যায় ও অত্যাচারে ছেয়ে যাবে।রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মুক্ত দাস হযরত সাফীনা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমার (ইন্তেকালের) পরে ত্রিশ বছর পর্যন্ত খিলাফত থাকবে, তারপর দন্তকর্তিত রাজ্য হয়ে যাবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম আবু দাউদ (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)আবুল আলিয়া (রঃ) আয়াতের তাফসীরে বলেন যে, (ইসলামের আবির্ভাবের পর) রাসূলুল্লাহ (সঃ) এবং তাঁর সহচরবর্গ দশ বছরের মত মক্কায় অবস্থান করেন। ঐ সময় তারা দুনিয়াবাসীকে আল্লাহর একত্ববাদ ও তাঁর ইবাদতের দিকে আহ্বান করতে থাকেন। কিন্তু ঐ যুগটি ছিল গোপনীয়তা, ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার যুগ। তখন পর্যন্ত জিহাদের হুকুম নাযিল হয়নি। মুসলমানরা ছিলেন অত্যন্ত দুর্বল। এরপর হিজরতের হুকুম হয় এবং তাঁরা মদীনায় হিজরত করেন। অতঃপর জিহাদের হুকুম অবতীর্ণ হয়। চতুর্দিকে শত্রু পরিবেষ্টিত ছিল। মুসলমানরা ছিলেন ভীত-সন্ত্রস্ত। কোন সময়ই বিপদ শূন্য ছিল না। সকাল সন্ধ্যায় সাহাবীগণ (রাঃ) অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত থাকতেন। একজন সাহাবী একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাদের জীবনের একটা মুহূর্তও কি শান্তিতে কাটবে না? হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ক্ষণেকের জন্যেও কি আমরা অস্ত্র-শস্ত্র রেখে দিয়ে তৃপ্তি ও স্বস্তির শ্বাস গ্রহণ করতে পারবো না?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) অত্যন্ত শান্তভাবে উত্তর দেনঃ “আরো কিছুদিন ধৈর্যধারণ কর। অতঃপর এমন শান্তি এবং নিরাপত্তা বিরাজ করবে যে, মানুষ ভরা মজলিসে আরামে ও নিশ্চিন্তে বসে থাকবে, একজনের কাছে কেন, কারো কাছেই কোন অস্ত্র থাকবে।" ঐ সময় আল্লাহ তা'আলা এই আয়াত অবতীর্ণ করেন।অতঃপর আল্লাহর নবী (সঃ) আরব উপদ্বীপের উপর বিজয় লাভ করেন। আরবে কোন কাফির থাকলো না। সুতরাং মুসলমানদের অন্তর ভয়শূন্য হয়ে গেল। আর সদা-সর্বদা অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত থাকার কোন প্রয়োজন থাকলো না। ভারপর রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ইন্তেকালের পরেও তিনজন খলীফার যুগ পর্যন্ত সর্বত্র ঐ শান্তি ও নিরাপত্তাই বিরাজ করে। অর্থাৎ হযরত আবু বকর (রাঃ), হযরত উমার (রাঃ) এবং হযরত উসমান (রাঃ)-এর যুগ পর্যন্ত। এরপর মুসলমানদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। কাজেই আবার তাদের মধ্যে ভয় এসে পড়ে এবং প্রহরী, চৌকিদার, দারোগা ইত্যাতি নিযুক্ত করতে হয়। মুসলমানরা যখন নিজেদের অবস্থা নিজেরাই পরিবর্তন করে তখন তাদের অবস্থা পবির্তিত হয়ে যায়।পূর্ব যুগীয় কোন কোন গুরুজন হতে বর্ণিত আছে যে, তারা হযরত আবু বকর (রাঃ) ও হযরত উমার (রাঃ)-এর খিলাফতের সত্যতার ব্যাপারে এই আয়াতটিকে পেশ করেছেন।হযরত বারা ইবনে আযিব (রাঃ) বলেনঃ “যখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন আমরা অত্যন্ত ভয় ও দুর্ভাবনার অবস্থায় ছিলাম। যেমন আল্লাহ তা'আলা (আরবি) অর্থাৎ “তোমরা স্মরণ কর, যখন তোমরা ছিলে খুবই অল্প এবং ভূ-পৃষ্ঠে তোমাদেরকে দুর্বল মনে করা হতো।” (৮:২৬) অর্থাৎ পদে পদে তোমরা ভীত ও শংকিত থাকতে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের সংখ্যা বাড়িয়ে দেন এবং তোমাদেরকে শক্তিশালী করেন। আর তিনি তোমাদেরকে নিরাপত্তা দান করেন।মহান আল্লাহ বলেনঃ যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে। যেমন হযরত মূসা (আঃ) তাঁর কওমকে বলেছিলেন (আরবি) অর্থাৎ “এটা খুবই নিকটে যে, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের শত্রুদেরকে ধ্বংস করবেন এবং যমীনে তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন।” (৭:১২৯) অন্য আয়াতে বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি চাই যে, ভূ-পৃষ্ঠে যাদেরকে দুর্বল জ্ঞান করা হতো তাদের প্রতি অনুগ্রহ করবো।” (২৮: ৫) এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তিনি অবশ্যই তাদের জন্যে সুদৃঢ় করবেন তাদের দ্বীনকে যা তিনি তাদের জন্যে মনোনীত করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে তাদেরকে অবশ্যই নিরাপত্তা দান করবেন। হযরত আদী ইবনে হাতিম (রাঃ) যখন প্রতিনিধি হিসেবে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আগমন করেন তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তুমি কি হীরা নামক দেশ দেখেছো?” উত্তরে হযরত আদী ইবনে হাতিম (রাঃ) বলেনঃ “জ্বী না, আমি হীরা দেখিনি, তবে নাম শুনেছি।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! আল্লাহ তা'আলা আমার এই দ্বীনকে পূর্ণরূপে ছড়িয়ে দিবেন। তখন এমনভাবে শান্তি ও নিরাপত্তা এসে যাবে যে, হীরা হতে একজন মহিলা উন্ত্রীর উপর সওয়ার হয়ে একাই বেরিয়ে পড়বে এবং বায়তুল্লাহ শরীফে পৌঁছে তাওয়াফ কার্য সম্পন্ন করতঃ ফিরে আসবে। সে না কাউকেও ভয় করবে এবং না কারো আশ্রয়ে থাকবে। জেনে রেখো যে, ইরানের বাদশাহ কিসরা ইবনে হরমুযের কোষাগার বিজিত হবে।” হযরত আদী (রাঃ) বিস্ময়ের সুরে বলেনঃ “ইরানের বাদশাহ কিসরা ইবনে হরমুযের কোষাগার মুসলমানরা জয় করবেন!” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হ্যাঁ, কিসরা ইবনে হরমুযের কোষাগারই বটে। ধন-সম্পদ এতো বৃদ্ধি পাবে যে, তা গ্রহণকারী কেউ থাকবে না।” হযরত আদী (রাঃ) বলেনঃ “দেখুন, বাস্তবিকই স্ত্রীলোকেরা হীরা হতে কারো আশ্রয় ছাড়াই যাতায়াত করছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর এ ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হতে আমি স্বচক্ষে দেখলাম। দ্বিতীয় ভবিষ্যদ্বাণীও আমার চোখের সামনে পুরো হয়েছে। কিসরার ধনভাণ্ডার জয়কারীদের মধ্যে স্বয়ং আমিও বিদ্যমান ছিলাম। তৃতীয় ভবিষ্যদ্বাণীটিও নিঃসন্দেহে পূর্ণ হবে। কেননা, এটাও রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এরই ভবিষ্যদ্বাণী ।” হযরত উবাই ইবনে কা'ব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “এই উম্মতকে ভূ-পৃষ্ঠে উন্নতি, উচ্চ মর্যাদা, দ্বীনের প্রসার ও সাহায্যের সুসংবাদ দিয়ে দাও। তবে যে ব্যক্তি দুনিয়া লাভের উদ্দেশ্যে আখিরাতের কাজ করবে তার জানা উচিত যে, পরকালে তার জন্যে কোনই অংশ নেই।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তারা আমার ইবাদত করবে এবং আমার সাথে অন্য কাউকেও শরীক করবে না। হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি উটের উপরে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পিছনে বসেছিলাম। আমার ও তার মাঝে জিনের (উটের গদীর) শেষ কাষ্ঠখণ্ড ছাড়া কিছুই ছিল না (অর্থাৎ আমি নবী (সঃ)-এর খুবই সংলগ্ন ছিলাম)। তখন তিনি বললেনঃ “হে মুআয (রাঃ)!” আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! লাব্বায়েক ওয়া সাদায়েক! অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সঃ) সামনে কিছুক্ষণ অগ্রসর হলেন। আবার তিনি বললেনঃ “হে মুআয (রাঃ)!” আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! লাব্বায়েক ওয়া সাদায়েক! আবার তিনি কিছুক্ষণ সামনে চললেন। পুনরায় তিনি বললেনঃ “হে মুআয (রাঃ)!" আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! লাব্বায়েক ওয়া সাদায়েক! তিনি (এবার) বললেনঃ “বান্দার উপর আল্লাহর হক কি তা কি তুমি জান?" আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূল (সঃ) অধিকতর ভাল জানেন ও জ্ঞাত আছেন। তিনি বললেনঃ “বান্দার উপর আল্লাহর হক এই যে, তারা একবার তারই ইবাদত করবে এবং তার সাথে এতটুকুও শরীক করবে না।” অতঃ তিনি কিছুক্ষণ সামনে গেলেন এবং আবার বললেনঃ “হে মুআয! (৯)!” আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! লাব্বায়েক ওয়া সাদায়েক! তিনি বললেনঃ “আল্লাহর উপর বান্দার হক কি তা তুমি জান কি?” আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) সবচেয়ে ভাল জ্ঞাত আছেন। তিনি বললেনঃ “আল্লাহর উপর বান্দার হক হচ্ছে এই যে, তিনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন না। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) তাদের সহীহ গ্রন্থে এটা তাখরীজ করেছেন)অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আর যারা অকৃতজ্ঞ হবে তারা তো সত্যত্যাগী অর্থাৎ এর পরেও যারা আমার আনুগত্য পরিত্যাগ করবে সে আমার হুকুম অমান্য করলো এবং এটা খুবই কঠিন ও বড় পাপ।আল্লাহর মাহাত্ম্য এই যে, যেই যুগে ইসলামের শক্তি বেশী থেকেছে সেই যুগে তিনি সাহায্যও বেশী করেছেন। সাহাবীগণ ঈমানে অগ্রগামী ছিলেন, কাজেই তঁারা বিজয় লাভের ব্যাপারেও সবারই অগ্রে থেকেছেন। যেমন ঈমানে দুর্বলতা দেখা দেয় তেমন পার্থিব অবস্থা, রাজত্ব এবং শান-শওকতও নীচে নেমে গেছে। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল সদা সত্যের উপর থাকবে এবং তারা থাকবে সদা জয়যুক্ত। তাদের বিরোধীরা তাদের কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। কিয়ামত পর্যন্ত এই অবস্থাই থাকবে। আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর ওয়াদা এসে যাবে। একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, শেষ পর্যন্ত এই দলটিই সর্বশেষে দাজ্জালের সাথে যুদ্ধ করবে। আর একটি হাদীসে আছে যে, হযরত ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ পর্যন্ত এই লোকগুলো কাফিরদের উপর জয়যুক্ত থাকবে। এই সব রিওয়াইয়াত বিশুদ্ধ এবং সবগুলোরই ভাবার্থ একই।