وما تنقم منا الا ان امنا بايات ربنا لما جاءتنا ربنا افرغ علينا صبرا وتوفنا مسلمين ١٢٦
وَمَا تَنقِمُ مِنَّآ إِلَّآ أَنْ ءَامَنَّا بِـَٔايَـٰتِ رَبِّنَا لَمَّا جَآءَتْنَا ۚ رَبَّنَآ أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًۭا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ ١٢٦
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
3

যাদুকরগণ যখন মুমিন হয়ে গেল এবং ফিরাউনের উদ্দেশ্য বিফল হলো তখন সে যাদুকরদেরকে হুমকি দিয়ে বললোঃ “আজ যে মূসা (আঃ) তোমাদের উপর জয়যুক্ত হয়েছে এটা প্রকৃতপক্ষে তোমাদের পারস্পরিক সমঝোতা ও চক্রান্তের কারণেই সম্ভব হয়েছে। তোমাদের উদ্দেশ্য ছিল যে, এইভাবে হুকুমতের উপর বিজয় লাভ করে দেশের মূল অধিবাসীকে তাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া। নিঃসন্দেহে এই মূসা ছিল তোমাদের সকলেরই গুরু। সেই তোমাদেরকে যাদুবিদ্যা শিখিয়েছিল।” যার সামান্য বিবেকও রয়েছে সেও এটা বুঝে ফেলবে যে, হক্ক দ্বারা বাতিল প্রমাণিত হয়ে যায় দেখে ফিরাউন হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়েই এই অপবাদমূলক কথা বলছিল। হযরত মূসা (আঃ) তো মাদায়েন থেকে এসেই সরাসরি ফিরাউনের নিকট পৌছে তাকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন এবং বাহ্যিক মু'জিযাগুলো প্রকাশ করতঃ নিজের রাসূল হওয়ার সত্যতা প্রমাণ করেছিলেন। এর পরে ফিরাউন স্বীয় সাম্রাজ্যের সমস্ত শহরে মনোনীত এলাকায় লোক প্রেরণ করে মিসরের বিভিন্ন যাদুকরদেরকে একত্রিত করেছিল, যাদেরকে সে এবং তার সম্প্রদায়ের লোকেরা নির্বাচন করেছিল, আর তাদের সাথে ভাল ভাল পুরস্কার ও মর্যাদা দানের অঙ্গীকার করেছিল। এ জন্যেই ঐ যাদুকরগণ। সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছিল যে, কি করে মূসা (আঃ)-এর উপর বিজয় লাভ করতঃ ফেরাউনের নৈকট্য লাভ করা যায়। মূসা (আঃ) কোন এক যাদুকরের সাথেও পরিচিত ছিলেন না। না তিনি তাদের কাউকেও কখনও দেখেছিলেন। না তাদের কারো সাথে তাঁর কখনও সাক্ষাৎ ঘটেছিল। ফিরাউন নিজেও এটা জানতো। কিন্তু না জানি সর্বসাধারণ হযরত মূসা (আঃ)-এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে, এটাকে রোধ করার জন্যেই সে এ কথা বলেছিল। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “ফিরাউনের কওম তার অনুগত ছিল এবং তার চিন্তাধারার সাথে একমত হয়েছিল। ঐ লোকগুলো সাংঘাতিক বিভ্রান্তির মধ্যে পতিত হয়েছিল যারা ফিরাউনের (আরবী) (৭৯:২৪) (আমিই তোমাদের বড় প্রভু) এই দাবী সমর্থন করেছিল।সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, যাদুকরের প্রধানের সাথে হযরত মূসা (আঃ)-এর সাক্ষাৎ হলে তিনি তাকে বলেনঃ “আমি যদি বিজয়ী হই এবং তোমরা পরাজিত হও তবে তোমরা আমার উপর ঈমান আনবে কি? আর এটা স্বীকার করবে কি যে, আমার পেশকৃত জিনিস হবে আল্লাহর মু'জিযা?” সেই যাদুকর প্রধান উত্তরে বললোঃ “আগামীকাল তো আমি এমন যাদু পেশ করবো যে, কোন যাদুই ওর উপর জয়যুক্ত হতে পারে না। সুতরাং তুমি যদি জয়যুক্ত হও তবে আমি স্বীকার করে নেবো যে, তুমি আল্লাহর রাসূল।” ফিরাউন তাদের এই কথোপকথন শুনেছিল। এ জন্যেই সে পরে অপবাদ দিয়ে বলেছিলঃ “তোমরা এ জন্যেই একত্রিত হয়েছিলে যে, হুকুমতের উপর জয়লাভ করে তোমরা দেশের নেতৃস্থানীয় ও প্রধান প্রধান লোকদেরকে তাড়িয়ে দিয়ে নিজেরাই সিংহাসন দখল করবে। আমি তোমাদেরকে কি শাস্তি দেবো তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে। জেনে রেখো যে, আমি তোমাদের ডান হাত ও বাম পা কেটে নেবো অথবা এর বিপরীত। অতঃপর তোমাদের সকলকেই ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে দেবো। তোমাদের মৃতদেহগুলো গাছের ডালের সাথে বেঁধে লটকিয়ে দেয়া হবে।”হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ফাঁসি এবং হাত পা কেটে নেয়ার শাস্তি-বিধান সর্ব প্রথম ফিরাউনই চালু করেছিল। যাদুকরগণ উত্তরে বলে“আমরা তো এখন আল্লাহরই হয়ে গেছি এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করছি। আজ তুমি আমাদেরকে যে শাস্তি প্রদানের হুমকি দিচ্ছ, আল্লাহর শাস্তি এর চেয়ে বহুগুণে কঠিন। আজ আমরা তোমার শাস্তির উপর ধৈর্য ধারণ করছি, যেন কাল কিয়ামতের মাঠে আল্লাহর শাস্তি হতে পরিত্রাণ পেতে পারি।” এ জন্যেই তারা বলে উঠলোঃ “হে আমাদের প্রভু! আমরা যেন দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারি এবং ফিরাউনের শাস্তির উপর ধৈর্যধারণ করতে পারি সে জন্যে আমাদেরকে ধৈর্য দান করুন। আর আপনার নবী হযরত মূসা (আঃ)-এর অনুসরণ করিয়ে আমাদেরকে মুসলমান অবস্থায় দুনিয়া হতে উঠিয়ে নিন।” অতএব, তারা ফিরাউনকে স্পষ্ট ভাষায় বলে দিলো- “তুমি যত পার আমাদের সর্বনাশ সাধন কর। এই অবস্থাতেই আমাদের পার্থিব জীবন শেষ হয়ে যাবে। আমরা তাঁরই উপর ঈমান আনছি যিনি আমাদের সত্য প্রভু। আমরা আশা করি যে, তিনি আমাদের পূর্ববর্তী সমস্ত পাপ মার্জনা করবেন এবং আমাদেরকে যাদু পেশ করতে বাধ্য হতে হয়েছে সেটাও তিনি ক্ষমা করে দিবেন। কেননা, যে ব্যক্তি কাফির অবস্থায় আল্লাহর নিকট হাযির হবে তার জন্যে জাহান্নাম অবধারিত। সে না জীবিতের মধ্যে গণ্য, না মৃতের মধ্যে গণ্য। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি মুমিন ও সঙ্কৰ্মশীল রূপে হাযির হবে সে পরকালে বড় বড় মর্যাদার অধিকারী হবে। যা হাক, এইসব যাদুকর ছিল সকাল বেলায় কাফির যাদুকর, আর সন্ধ্যা বেলায় হয়ে গেল সকর্মশীল মুমিন ও শহীদ।