যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সিজদাবনত হয়ে এবং দাঁড়িয়ে ইবাদত করে, পরকালকে ভয় করে এবং তাঁর প্রতিপালকের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে, (সে কি তার সমান, যে তা করে না?)[১] বল, ‘যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান? [২] বুদ্ধিমান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।’[৩]
[১] উদ্দেশ্য হল যে, কাফের ও মুশরিকের তো এই অবস্থা যা বর্ণনা করা হল। পক্ষান্তরে আর এক ব্যক্তি যে সুখে-দুঃখে, আল্লাহর সামনে অক্ষমতা ও আনুগত্য প্রকাশের মাধ্যমে সিজদা ও কিয়াম অবস্থায় রাত্রি যাপন করে। তার মন আখেরাতের ভয়ে ভীত এবং সে প্রভুর রহমতের আশাধারী হয়। অর্থাৎ ভয় ও আশা উভয় অবস্থাই তার মধ্যে পাওয়া যায়; যা প্রকৃত ঈমান। এরা দুইজন কি সমান হতে পারে? না, কক্ষনই না। ভয় ও আশা সম্পর্কে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আনাস (রাঃ) বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাঃ) মুত্যু মুখে পতিত এক ব্যক্তির নিকট গেলেন। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, "তোমার অবস্থা কি?" সে ব্যক্তি বলল, 'আমি আল্লাহর নিকট আশা রাখছি এবং স্বকৃত পাপের জন্য ভয়ও করছি।' রসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, "এই অবস্থায় যদি কোন বান্দার মনে এই দু'টি কথা একত্রিত হয়, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে ঐ বস্তু প্রদান করবেন, যে বস্তুর সে আশা করে এবং সেই বস্তু থেকে বাঁচিয়ে নেবেন, যার সে ভয় করে।" (তিরমিযী -ইবনে মাজাহ)
[২] অর্থাৎ, সেই ব্যক্তি যে জানে যে, আল্লাহ শান্তি ও শাস্তির যে ওয়াদা করেছেন তা সত্য এবং ঐ ব্যক্তি যে এ কথা জানে না, এরা দুইজন সমান হতে পারে না। একজন বিজ্ঞ এবং অপরজন অজ্ঞ। যেমন শিক্ষা ও মূর্খতা এক নয়, অনুরূপ শিক্ষিত ও মূর্খ সমান নয়। হতে পারে যে, এখানে আলেম ও জাহেলের উদাহরণ দিয়ে এ কথা বুঝানো হয়েছে যে, যেমন এরা দুইজন সমান নয়, অনুরূপ আল্লাহর বাধ্য ও অবাধ্য বান্দা, দুইজনে সমান হতে পারে না। কেউ কেউ এর অর্থ এই বর্ণনা করেছেন যে, আলেম (জ্ঞানী) বলে ঐ ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে, যে তার ইলম (জ্ঞান) অনুযায়ী আমল করে। কারণ সেই (প্রকৃত আলেম যে তার) ইলম দ্বারা উপকৃত হয়। আর যে নিজ ইলম অনুযায়ী আমল করে না, সে ঠিক যেন অজ্ঞ। এই অর্থ অনুযায়ী এখানে আমলকারী ও বেআমল ব্যক্তির উদাহরণ দেওয়া হয়েছে যে, এরা দুইজন এক সমান নয়।
[৩] যারা মু'মিন, কাফের নয়; যদিও তারা নিজেদেরকে জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান ভাবে। যখন তারা নিজ জ্ঞান-বুদ্ধি দ্বারা চিন্তা-ভাবনাই করে না এবং শিক্ষা ও নসীহতই অর্জন করে না, তখন তারা ঠিক যেন চতুষ্পদ জন্তুর মত জ্ঞান-বুদ্ধি থেকে বঞ্চিত।