নিশ্চয়ই আমি আমার রসূলদেরকে প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সঙ্গে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও তুলাদন্ড (ন্যায়-নীতি);[১] যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি লোহা অবতীর্ণ করেছি;[২] যাতে রয়েছে প্রচন্ড শক্তি[৩] ও রয়েছে মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ,[৪] আর যাতে আল্লাহ জানতে পারেন যে, কে না দেখেও তাঁকে ও তাঁর রসূলদেরকে সাহায্য করে।[৫] নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রমশালী। [৬]
[১] ميزان (তুলাদন্ড) বলতে ন্যায়নীতি বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, আমি লোকদেরকে সুবিচার করার নির্দেশ দিয়েছি। কেউ কেউ এর অনুবাদ করেছেন দাঁড়িপাল্লা। দাঁড়িপাল্লা অবতীর্ণ করার অর্থ হল, আমি দাঁড়িপাল্লার দিকে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছি যে, এর দ্বারা ওজন করে মানুষকে পুরো পুরো প্রাপ্য দিয়ে দাও।
[২] এখানে অবতীর্ণ করার অর্থ সৃষ্টি করা ও তার শিল্পকাজ শিখানো। লোহা থেকে অসংখ্য জিনিস তৈরী হয়। এসব আল্লাহর প্রেরণা দান ও তাঁর দিগ্দর্শনের ফল; যা তিনি মানুষের প্রতি করেছেন।
[৩] অর্থাৎ, লোহা থেকে যুদ্ধাস্ত্র তৈরী হয়। যেমন, তরবারি, বর্শা, বন্দুক এবং আধুনিক এ্যাটম বোম, তোপ-কামান, যুদ্ধ-বিমান, ডুবোজাহাজ, রকেট ও ট্যাঙ্ক ইত্যাদি অনেক জিনিস। যার দ্বারা শত্রুর উপর আক্রমণও করা যায় এবং নিজেদের প্রতিরক্ষাও করা যায়।
[৪] অর্থাৎ, যুদ্ধাস্ত্র ছাড়া লোহা থেকে আরো এমন অনেক জিনিষ তৈরী হয়, যা বাড়িতেও বিভিন্ন সাংসারিক কাজে আসে। যেমন, ছুরি, চাকু, কাঁচি, হাতুড়ি, সূচ, অনুরূপ চাষী, ছুতার ও রাজমিস্ত্রীর কাজের আসবাব-পত্র সহ ছোট-বড় অসংখ্য মেশিন ও জিনিস-পত্র। (এই লোহা থেকে গাড়ি তৈরী হয় এবং তারই উপর তা চলে।)
[৫] এর সংযোগ হল لِيَقُوْمَ এর সাথে। অর্থাৎ, রসূলদেরকে এই জন্য প্রেরণ করেছেন যে, যাতে তিনি জেনে নেন কে তাঁর রসূলদের উপর আল্লাহকে না দেখেই ঈমান নিয়ে আসে এবং তাঁদের সাহায্য করে।
[৬] তাঁর এর প্রয়োজন নেই যে, মানুষ তাঁর দ্বীনের এবং তাঁর রসূলগণের সাহায্য করুক। বরং তিনি চাইলে কারো সাহায্য ছাড়াই তাঁদেরকে জয়ী করতে পারেন। কিন্তু মানুষদেরকে তিনি তাঁদের সাহায্য করার নির্দেশ কেবল তাদেরই মঙ্গলার্থে দিয়েছেন। এইভাবে যাতে তারা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে তাঁর ক্ষমা ও করুণার অধিকারী হয়ে যায়।