আমি তো আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি,[১] স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি;[২] তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছি[৩] এবং যাদেরকে আমি সৃষ্টি করেছি, তাদের অনেকের উপর তাদেরকে যথেষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। [৪]
[১] এই মর্যাদা ও অনুগ্রহ মানুষ হিসাবে প্রত্যেক মানুষ পেয়েছে; তাতে সে মুমিন হোক অথবা কাফের। কেননা, এ মর্যাদা অন্য সৃষ্টিকুল, জীবজন্তু, জড়পদার্থ ও উদ্ভিদ ইত্যাদির তুলনায়। আর এ মর্যাদা বিভিন্ন দিক দিয়ে। যে আকার-আকৃতি, এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ শারীরিক গঠন ও ধরন মহান আল্লাহ মানুষকে দান করেছেন, তা অন্য কোন সৃষ্টি পায়নি। যে জ্ঞান মানুষকে দেওয়া হয়েছে, যার দ্বারা তারা নিজেদের আরাম ও আয়েশের জন্য অসংখ্য জিনিস আবিষ্কার করেছে, জীবজন্তু ইত্যাদি তা থেকে বঞ্চিত। এ ছাড়া এই জ্ঞান দ্বারা তারা ঠিক-বেঠিক, উপকারী-অপকারী এবং ভাল-মন্দের মধ্যে পার্থক্য করতে সক্ষম। এই জ্ঞান দ্বারা তারা আল্লাহর অন্যান্য সৃষ্টিকুল থেকে উপকৃত হয় এবং তাদেরকে নিজেদের বশে রাখে। এই জ্ঞান ও মেধারই মাধ্যমে তারা এমন অট্টালিকা নির্মাণ করে, এমন পোশাক আবিষ্কার করে এবং এমন সব জিনিস বানায় যা তাদেরকে গ্রীষ্মের তাপ, শীতের ঠান্ডা এবং মৌসুমের অন্যান্য ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। অনুরূপ বিশ্বজাহানের সমস্ত জিনিসকে মহান আল্লাহ মানুষের সেবায় লাগিয়ে রেখেছেন। চাঁদ, সূর্য, হাওয়া, পানি এবং অন্যান্য অসংখ্য জিনিস রয়েছে যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হচ্ছে।
[২] স্থলে ঘোড়া, খচ্চর, গাধা, উট এবং নিজেদের তৈরী করা (ট্রেন, মোটরগাড়ী, উড়োজাহাজ, সাইকেল এবং মোটর সাইকেল ইত্যাদি) বাহনে আরোহণ করে এবং সমুদ্রে রয়েছে নৌকা ও জলজাহাজ যাতে তারা আরোহণ করে এবং পণ্যসামগ্রী আমদানি-রফতানি করে।
[৩] মানুষের পানাহারের জন্য যেসব খাদ্য জাতীয় দ্রব্য শস্য ও ফল-মূলাদি তিনি উৎপন্ন করেছেন এবং তাতে যে স্বাদ, তৃপ্তি এবং শক্তি নিহিত রেখেছেন, রকমারি এই খাদ্য, সুস্বাদু ও মজাদার ফলমূল, শক্তিবর্ধক ও পরিতৃপ্তিকর উপাদেয় নানা যৌগিক খাদ্য ও পানীয়, চূর্ণিত, পিষ্ট ও খামির জাতীয় কত শত রকমের খাবার মানুষ ব্যতীত অন্য আর কোন্ সৃষ্টি পেয়েছে?
[৪] উল্লিখিত আলোচনা থেকে বহু সৃষ্টির উপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের কথা পরিষ্কার হয়ে যায়।