বিশ্বাসী (মুমিন) তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহকে স্মরণ করার সময় কম্পিত হয় এবং যখন তাঁর আয়াত তাদের নিকট পাঠ করা হয়, তখন তা তাদের বিশ্বাস (ঈমান) বৃদ্ধি করে এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই ভরসা রাখে। [১]
[১] এই আয়াতে ঈমানদারদের চারটি গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছেঃ (ক) তারা আল্লাহ ও তদীয় রসূলের আনুগত্য করে; কেবল আল্লাহর অর্থাৎ, কুরআনের আনুগত্য নয়। (খ) আল্লাহর স্মরণের সময় আল্লাহর মহত্ত্বে তাদের অন্তর কেঁপে ওঠে। (গ) কুরআন পাঠ করলে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। (যার দ্বারা বুঝা যায়, ঈমান কম-বেশি হয়; যেমন মুহাদ্দিসগণের অভিমত।) (ঘ) তারা নিজ প্রভু (আল্লাহর) উপর ভরসা করে। ভরসা করার অর্থঃ যথাসাধ্য বাহ্যিক সকল উপায়-উপকরণ অবলম্বন করার পর আল্লাহর উপর ভরসা করা। অর্থাৎ, বাহ্যিক উপায় অবলম্বন পরিহার করে না, কারণ তা অবলম্বন করার আদেশ মহান আল্লাহই দিয়েছেন। তবে বাহ্যিক উপায়কেই তারা সব কিছু মনে করে না; বরং তাদের দৃঢ়-বিশ্বাস যে, আসলে সকল কর্ম আল্লাহর ইচ্ছাতেই সম্পন্ন হয়। অতএব যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা না হবে, ততক্ষণ বাহ্যিক উপায় অবলম্বন কোনই কাজে আসবে না। আর এই দৃঢ়-বিশ্বাস ও ভরসার কারণে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া হতে এক পলও গাফেল থাকে না। পরবর্তীতে আরো কিছু গুণের কথা বর্ণনা করা হচ্ছে। এই সকল গুণের অধিকারীদেরকে মহান আল্লাহ প্রকৃত মু'মিন গণ্য করেছেন এবং ক্ষমা, দয়া ও উত্তম জীবনোপকরণের সুসংবাদ দিয়েছেন। (আল্লাহ আমাদেরকে যেন তাদের দলভুক্ত করেন।)
বদর যুদ্ধের প্রেক্ষাপটঃ- বদর যুদ্ধ হিজরী দ্বিতীয় সনে সংঘটিত হয়। এটি কাফেরদের সাথে প্রথম যুদ্ধ। এ ছাড়া এ যুদ্ধের কোন পরিকল্পনা ছিল না; বরং তা হঠাৎ সংঘটিত হয়ে যায়। যোদ্ধা ও যুদ্ধাস্ত্র অল্প থাকার কারণে কোন কোন মুসলিম মানসিকভাবে প্রস্তুতও ছিলেন না। এর প্রেক্ষাপট ছিল এরূপ যে, আবু সুফিয়ান (যিনি তখনও ইসলাম গ্রহণ করেননি) এর নেতৃত্বে একটি বাণিজ্য কাফেলা শাম হতে মক্কায় ফিরছিল। এদিকে মুসলিমদের হিজরত করার ফলে তাদের ধন-সম্পদ মক্কায় থেকে গিয়েছিল বা কাফেররা ছিনিয়ে নিয়েছিল। সেই সাথে মক্কার কাফেরদের শক্তি ভেঙ্গে দেওয়াও ছিল সময়ের দাবী। উক্ত সকল কারণে রসূল (সাঃ) বাণিজ্য কাফেলার উপর আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেন এবং এই উদ্দেশ্যে মুসলিমগণ মদীনা ত্যাগ করেন। আবূ সুফিয়ানের নিকট এই সংবাদ পৌঁছে যায়। সুতরাং তিনি রাস্তা পরিবর্তন করে ফেলেন এবং মক্কায় এ সংবাদ পৌঁছে দেন। যার ফলে আবূ জাহল একটি সেনাদল নিয়ে কাফেলার হিফাযতের জন্য বদরের দিকে রওনা হয়। যখন নবী (সাঃ) এই পরিস্থিতি জানতে পারেন তখন তা সাহাবাদের নিকট খুলে বলেন। সেই সাথে আল্লাহর প্রতিশ্রুতির কথাও ব্যক্ত করেন যে, (বাণিজ্য কাফেলা অথবা সেনাদল) এই দুয়ের মধ্যে একটির সাক্ষাৎ পাবে। তবুও কিছু সাহাবী যুদ্ধের ব্যাপারে দ্বিধা প্রকাশ করে বাণিজ্য কাফেলার পিছু নেওয়ার পরামর্শ দিলেন। পক্ষান্তরে অন্যান্য সাহাবীগণ রসূল (সাঃ) সাথে থেকে যুদ্ধে পরিপূর্ণ সাহায্য-সহযোগিতা করার আশ্বাস দিলেন। এই প্রেক্ষিতেই উক্ত আয়াতসমূহ অবতীর্ণ হয়।