ومن الليل فتهجد به نافلة لك عسى ان يبعثك ربك مقاما محمودا ٧٩
وَمِنَ ٱلَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِۦ نَافِلَةًۭ لَّكَ عَسَىٰٓ أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًۭا مَّحْمُودًۭا ٧٩
وَمِنَ
الَّیْلِ
فَتَهَجَّدْ
بِهٖ
نَافِلَةً
لَّكَ ۖۗ
عَسٰۤی
اَنْ
یَّبْعَثَكَ
رَبُّكَ
مَقَامًا
مَّحْمُوْدًا
۟

আর রাত্রির কিছু অংশে তা দিয়ে[১] তাহাজ্জুদ[২] পড়; এটা তোমার জন্য এক অতিরিক্ত কর্তব্য।[৩] আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে। [৪]

[১] অর্থাৎ, কুরআন পড়ার মাধ্যমে।

[২] কেউ কেউ বলেন, تهجد শব্দটি সেই শ্রেণীভুক্ত শব্দ, যাতে বিপরীতমুখী দু' রকম অর্থ পাওয়া যায়। এর অর্থ ঘুমানোও হয়, আবার ঘুম থেকে জাগাও হয়। এখানে দ্বিতীয় অর্থেই ব্যবহূত হয়েছে। অর্থাৎ, রাতে ঘুম থেকে ওঠো এবং নফল নামায পড়। কেউ বলেন, هجود এর প্রকৃত অর্থই হল, রাতে ঘুমানো। কিন্তু باب تفعُّل এর ছাঁচে পড়ে তাতে تجنب (বেঁচে থাকা) এর অর্থ সৃষ্টি হয়ে যায়। যেমন, إثم মানে পাপ, কিন্তু ঐ ছাঁচে পড়ে تَأَثُّم এর অর্থ হয়, পাপ থেকে বিরত বা বেঁচে থাকা। অনুরূপ تهجد এর অর্থ হবে, ঘুম থেকে বিরত বা বেঁচে থাকা। আর مُتَهَجِّدٌ হবে সে, যে রাতে না ঘুমিয়ে কিয়াম করে। মোট কথা তাহাজ্জুদের অর্থ হল, রাতের শেষ প্রহরে উঠে নফল নামায পড়া। সারা রাত قيام الليل (নামায) পড়া সুন্নতের বিপরীত। নবী (সাঃ) রাতের প্রথমাংশে ঘুমাতেন এবং শেষাংশে উঠে তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। আর এটাই হল সুন্নতী তরীকা।

[৩] কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন, এটা একটি অতিরিক্ত ফরয, যা নবী (সাঃ)-এর জন্য নির্দিষ্ট ছিল। এইভাবে তারা বলেন যে, নবী (সাঃ)-এর উপর তাহাজ্জুদের নামাযও ঐরূপ ফরয ছিল, যেমন পাঁচ অক্ত নামায ফরয ছিল। অবশ্য উম্মতের জন্য তাহাজ্জুদের নামায ফরয নয়। কেউ কেউ বলেন যে, نَافِلَةً (অতিরিক্ত) এর অর্থ হল, তাহাজ্জুদের এই নামায রসূল (সাঃ)-এর মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত জিনিস। কারণ, তিনি হলেন, مغفور الذنب (পাপ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত)। পক্ষান্তরে উম্মতের জন্য উক্ত আমল এবং অন্যান্য সমস্ত নেক আমল পাপসমূহের কাফফারা হয়। আবার কেউ কেউ বলেছেন, نَافِلَةً মানে নফলই। অর্থাৎ, এ নামায না রসূল (সাঃ)-এর উপর ফরয ছিল, আর না তাঁর উম্মতের উপর। এটি একটি অতিরিক্ত নফল ইবাদত, যার ফযীলত অবশ্যই অনেক। এই সময়ে আল্লাহ তাঁর ইবাদতে বড়ই সন্তুষ্ট হন। আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেছেন, "রমযানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোযা হল আল্লাহর মাস মুহার্রমের রোযা। আর ফরয নামাযের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামায হল রাতের (তাহাজ্জুদের) নামায।" (মুসলিম ১১৬৩নং, আবু দাঊদ তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে খুযাইমাহ) তিনি বলেন, "জান্নাতের মধ্যে এমন একটি কক্ষ আছে, যার বাহিরের অংশ ভিতর থেকে এবং ভিতরের অংশ বাহির থেকে দেখা যাবে।" তা শুনে আবু মালেক আশআরী (রাঃ) বললেন, 'সে কক্ষ কার জন্য হবে, হে আল্লাহর রসূল?' তিনি বললেন, "যে ব্যক্তি উত্তম কথা বলে, অন্নদান করে ও লোকেরা যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন নামাযে রত হয়; তার জন্য।" (ত্বাবারানী, হাকেম, সহীহ তারগীব ৬১১নং) তিনি বলেন, "আল্লাহ তাআলা প্রত্যহ রাত্রের শেষ তৃতীয়াংশে নীচের আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, 'কে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আমার নিকট কিছু চাইবে? আমি তাকে দান করব। এবং কে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব।" (বুখারী, মুসলিম, সুনান আরবাআহ, মিশকাত ১২২৩নং) তিনি বলেন, "তোমরা তাহাজ্জুদের নামাযে অভ্যাসী হও। কারণ, তা তোমাদের পূর্বতন নেক বান্দাদের অভ্যাস; তা তোমাদের প্রভুর নৈকট্যদানকারী ও পাপক্ষালনকারী এবং গোনাহ হতে বিরতকারী আমল।" (তিরমিযী, ইবনে আবিদ্দুনয়্যা, ইবনে খুযাইমাহ, হাকেম, সহীহ তারগীব ৬১৮ নং)

[৪] এটা হল সেই স্থান, যা কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ নবী (সাঃ)-কে দান করবেন এবং সেই স্থানে সিজদায় পড়ে আল্লাহর অসীম প্রশংসা বর্ণনা করবেন। অতঃপর আল্লাহ জাল্লা শানুহ বলবেন, 'হে মুহাম্মাদ! মাথা তোল, কি চাও বল, তোমাকে দেওয়া হবে। তুমি সুপারিশ কর, মঞ্জুর করা হবে।' তখন তিনি সেই বড় সুপারিশটি করবেন, যার পর লোকদের হিসাব-নিকাশ আরম্ভ হবে। (আশা এখানে নিশ্চিতের অর্থে।)