۞ والمحصنات من النساء الا ما ملكت ايمانكم كتاب الله عليكم واحل لكم ما وراء ذالكم ان تبتغوا باموالكم محصنين غير مسافحين فما استمتعتم به منهن فاتوهن اجورهن فريضة ولا جناح عليكم فيما تراضيتم به من بعد الفريضة ان الله كان عليما حكيما ٢٤
۞ وَٱلْمُحْصَنَـٰتُ مِنَ ٱلنِّسَآءِ إِلَّا مَا مَلَكَتْ أَيْمَـٰنُكُمْ ۖ كِتَـٰبَ ٱللَّهِ عَلَيْكُمْ ۚ وَأُحِلَّ لَكُم مَّا وَرَآءَ ذَٰلِكُمْ أَن تَبْتَغُوا۟ بِأَمْوَٰلِكُم مُّحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَـٰفِحِينَ ۚ فَمَا ٱسْتَمْتَعْتُم بِهِۦ مِنْهُنَّ فَـَٔاتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةًۭ ۚ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَٰضَيْتُم بِهِۦ مِنۢ بَعْدِ ٱلْفَرِيضَةِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًۭا ٢٤
وَّالْمُحْصَنٰتُ
مِنَ
النِّسَآءِ
اِلَّا
مَا
مَلَكَتْ
اَیْمَانُكُمْ ۚ
كِتٰبَ
اللّٰهِ
عَلَیْكُمْ ۚ
وَاُحِلَّ
لَكُمْ
مَّا
وَرَآءَ
ذٰلِكُمْ
اَنْ
تَبْتَغُوْا
بِاَمْوَالِكُمْ
مُّحْصِنِیْنَ
غَیْرَ
مُسٰفِحِیْنَ ؕ
فَمَا
اسْتَمْتَعْتُمْ
بِهٖ
مِنْهُنَّ
فَاٰتُوْهُنَّ
اُجُوْرَهُنَّ
فَرِیْضَةً ؕ
وَلَا
جُنَاحَ
عَلَیْكُمْ
فِیْمَا
تَرٰضَیْتُمْ
بِهٖ
مِنْ
بَعْدِ
الْفَرِیْضَةِ ؕ
اِنَّ
اللّٰهَ
كَانَ
عَلِیْمًا
حَكِیْمًا
۟

নারীদের মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী[১] ব্যতীত সকল সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ, তোমাদের জন্য এ হল আল্লাহর বিধান। উল্লিখিত নারীগণ ব্যতীত আর সকলকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য বৈধ করা হল; এই শর্তে যে, তোমরা তাদেরকে নিজ সম্পদের বিনিময়ে বিবাহের মাধ্যমে গ্রহণ করবে, অবৈধ যৌন-সম্পর্কের মাধ্যমে নয়।[২] অতঃপর তোমরা তাদের মধ্যে যাদের (মাধ্যমে দাম্পত্যসুখ) উপভোগ করবে, তাদেরকে নির্ধারিত মোহর অর্পণ কর।[৩] মোহর নির্ধারণের পর কোন বিষয়ে পরস্পর রাযী হলে তাতে তোমাদের কোন দোষ হবে না।[৪] নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

[১] কুরআন কারীমে إِحْصَانٌ শব্দটি চারটি অর্থে ব্যবহার হয়েছে। যথা, (ক) বিবাহ (খ) স্বাধীনতা (গ) সতীত্ব এবং (ঘ) ইসলাম। এই দিক দিয়ে مُحْصَنَات এর হবে চারটি অর্থঃ (ক) বিবাহিতা মহিলাগণ (খ) স্বাধীন মহিলাগণ (গ) সতী-সাধ্বী মহিলাগণ এবং (ঘ) মুসলিম মহিলাগণ। এখানে প্রথম অর্থকে বুঝানো হয়েছে। আয়াতের শানে নুযুল (অবতীর্ণ হওয়ার কারণ) সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, যখন কোন কোন যুদ্ধে কাফেরদের মহিলারা মুসলিমদের হাতে বন্দিনী হল, তখন ঐ সকল মহিলারা বিবাহিতা হওয়ার কারণে মুসলিমরা তাদের সাথে সহবাস করার ব্যাপারে ঘৃণা অনুভব করল। অতঃপর নবী করীম (সাঃ)-কে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-গণ এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে এই আয়াত অবতীর্ণ হল। (ইবনে কাসীর) এ থেকে জানা গেল যে, যুদ্ধলব্ধ কাফের মহিলারা মুসলিমদের হাতে বন্দিনী হয়ে এলে, তাদের সাথে সহবাস করা জায়েয, যদিও তারা বিবাহিতা হয়। তবে গর্ভমুক্ত কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া জরুরী। অর্থাৎ, এক মাসিক দেখার পর অথবা গর্ভবতী হলে প্রসবের পর (নিফাস বন্ধ হলে তবেই) তার সাথে সহবাস করা যাবে।

ক্রীতদাসীদের মাসআলাঃ কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময় দাস-দাসীর রাখার প্রথা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। কুরআন এ প্রথাকে উচ্ছেদ তো করেনি, তবে তাদের ব্যাপারে এমন কৌশল ও যুক্তিময় পথ অবলম্বন করা হয়, যাতে তারা খুব বেশী বেশী সুযোগ-সুবিধা অর্জন করতে পারে এবং দাস-প্রথার প্রবণতা হ্রাস পায়। দু'টি মাধ্যমে এই প্রথা প্রচলিত ছিল। প্রথমটি হল, কোন কোন গোত্র এমন ছিল যাদের পুরুষ ও নারীকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ক্রয়-বিক্রয় করা হত। এই ক্রীত নর-নারীকেই ক্রীতদাস ও দাসী বলা হয়। মনিবের অধিকার হত তাদের দ্বারা সর্ব প্রকার ফয়দা ও উপকার অর্জন করা। আর দ্বিতীয়টি হল, যুদ্ধে বন্দী হওয়ার মাধ্যমে। কাফেরদের বন্দী মহিলাদেরকে মুসলিম যোদ্ধাদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হত এবং তারা দাসী হয়ে তাঁদের সাথে জীবন-যাপন করত। বন্দিনীদের জন্য এটাই ছিল উত্তম ব্যবস্থা। কারণ, তাদেরকে যদি সমাজে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেওয়া হত, তাহলে তাদের মাধ্যমে ফিৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি হত। (বিস্তারিত জানার জন্য দ্রষ্টব্যঃ মৌলানা সাঈদ আহমদ আকবার আবাদী রচিত বই 'আররিক্কু ফীল ইসলাম' (ইসলামে দাসত্বের তাৎপর্য) মোট কথা হল, (স্বামীর বিবাহ বন্ধনে থাকা অবস্থায়) সধবা মুসলিম মহিলাদেরকে বিবাহ করা যেমন হারাম, তেমনি সধবা কাফের মহিলারাদেরকেও বিবাহ করা হারাম, তবে যদি তারা মুসলিমদের অধিকারে এসে যায়, তাহলে তারা গর্ভমুক্ত কি না এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁদের জন্য (যৌন-সংসর্গ) হালাল হবে।

[২] অর্থাৎ, কুরআন ও হাদীসে যে মহিলাদের সাথে বিবাহ করা হারাম বলে ঘোষিত হয়েছে, তাদেরকে ছাড়া অন্য মহিলাদেরকে বিবাহ করা জায়েয চারটি শর্তের ভিত্তিতে। (ক) তলব করতে হবে। অর্থাৎ, উভয় পক্ষের মধ্যে ইজাব ও কবুল (প্রস্তাব ও গ্রহণ) হতে হবে (এক পক্ষ প্রস্তাব দিবে এবং অপর পক্ষ কবুল করবে)। (খ) দেনমোহর আদায় করতে হবে। (গ) তাকে সব সময়ের জন্য বিবাহ বন্ধনে রাখা উদ্দেশ্য হবে, কেবল কাম-প্রবৃত্তি চরিতার্থ করাই লক্ষ্য হবে না। (যেমন, ব্যভিচারে অথবা শীয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত মুতআ' তথা কেবল যৌনক্ষুধা নিবারণের লক্ষ্যে কয়েক দিন বা কয়েক ঘণ্টার জন্য সাময়িকভাবে চুক্তিবিবাহ হয়ে থাকে)। (ঘ) গোপন প্রেমের মাধ্যমে যেন না হয়, বরং সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিবাহ হবে। এই চারটি শর্ত আলোচ্য আয়াত থেকেই সংগৃহীত। এ থেকে যেমন প্রমাণিত হয় যে, শীয়া সম্প্রদায়ের প্রচলিত মুতআ' বিবাহ বাতিল, অনুরূপ প্রচলিত 'হালালা' (রীতিমত তিন তালাকের পর অন্য এক পুরুষের সাথে বিবাহের মাধ্যমে স্বামীর জন্য স্ত্রীকে হালাল করার) পদ্ধতিও না-জায়েয। কারণ, এতেও মহিলাকে সব সময়ের জন্য বিবাহ বন্ধনে রাখা উদ্দেশ্য হয় না, বরং প্রচলিত নিয়মানুযায়ী এই বিবাহ কেবল এক রাতের জন্য হয়।

[৩] এখানে এ ব্যাপারে তাকীদ করা হচ্ছে যে, যে মহিলাদের সাথে তোমরা বৈধ বিবাহের মাধ্যমে যৌনসুখ ও স্বাদ গ্রহণ কর, তাদেরকে তাদের নির্দিষ্ট মোহর অবশ্যই আদায় করে দাও।

[৪] এখানে পরস্পরের সম্মতিক্রমে মোহরের মধ্যে কম-বেশী করার অধিকার দেওয়া হয়েছে।

বিঃ দ্রষ্টব্যঃ استمتاع 'ইস্তিমতা' শব্দ থেকে শীয়া সম্প্রদায় মুতআ' বিবাহের বৈধতা সাব্যস্ত করে। অথচ এর অর্থ হল, বিবাহের পর সহবাসের মাধ্যমে যৌনসুখ উপভোগ করা; যেমন এ কথা পূর্বেও বলা হয়েছে। অবশ্য মুতআ' বিবাহ ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে বৈধ ছিল, কিন্তু তার বৈধতা এই আয়াতের ভিত্তিতে ছিল না, বরং সেই প্রথা অনুযায়ী ছিল, যা ইসলামের পূর্বে থেকেই চলে আসছিল। অতঃপর নবী করীম (সাঃ) একেবারে পরিষ্কার ভাষায় কিয়ামত পর্যন্ত তা হারাম ঘোষণা করে দিলেন।