আমি তাকে (রসূলকে) কবিতা শিখাইনি এবং এ তার পক্ষে শোভনীয়ও নয়। এ তো কেবল এক উপদেশ এবং সুস্পষ্ট কুরআন;[১]
[১] মক্কার মুশরিকরা নবী (সাঃ)-কে মিথ্যুক প্রমাণ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলত। তার মধ্যে একটা কথা এই ছিল যে, তুমি কবি এবং এই কুরআন তোমারই কবিতার ছন্দ মাত্র। আল্লাহ তাআলা তাদের এই কথা খন্ডন করে বললেন যে, সে না কবি, আর না কুরআন কবিতামালার সমষ্টি; বরং এ হল নসীহত ও উপদেশমালা। কাব্যে সাধারণতঃ অতিরঞ্জন ও বাড়াবাড়ি এবং কখনো অবজ্ঞা ও তাচ্ছিল্য থাকে। কবিতায় শুধু কবির আবেগ ও আকাশ-কুসুম কল্পনা থাকে। তার ভিত্তি হয় মিথ্যার উপরে। এ ছাড়া কবিরা শুধু বাক্য বিশারদ হয়, কাজের কাজী নয়। যার কারণে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, শুধু এই নয় যে, আমি আমার পয়গম্বরকে কবিতা শিক্ষা দিইনি এবং তাঁর প্রতি কবিতা অহী করিনি; বরং কুরআনের বাকরীতি ও প্রকৃতি এই রকম করেছি যে, কবিতার সাথে তার কোন সম্পর্ক ও সাদৃশ্যই নেই। আর এ জন্যই মহানবী (সাঃ) যখন কারোর কবিতা পড়তেন তখন অধিকাংশ ভুল পড়তেন এবং কবিতার ছন্দ ও ওজন ভেঙ্গে যেত; যার উদাহরণ হাদীসে বিদ্যমান। এই সতর্কতা অবলম্বন এই জন্য করা হয়েছে, যাতে অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে পূর্ণ প্রমাণ প্রতিষ্ঠা হয়, তাদের সন্দেহের অবসান ঘটে এবং তারা যেন বলতে না পারে যে, কুরআন তাঁর রচিত কাব্য। যেমন উক্ত সন্দেহ অবসানের নিমিত্তেই তিনি নিরক্ষর ছিলেন; যাতে মানুষ কুরআন সম্পর্কে এ কথা বলতে না পারে যে, এটা তিনি অমুক ব্যক্তি থেকে শিক্ষা অর্জন করে তা সাজিয়ে-গুছিয়ে রচনা করেছেন। অবশ্য কোন কোন সময় তাঁর মুবারক মুখ থেকে এমন বাক্য বের হয়ে যাওয়া, যা কবিতা ছত্র ও ছন্দের মত হয়ে থাকে, তা তাঁর কবি হওয়ার প্রমাণ হতে পারে না। কারণ এগুলি তাঁর ইচ্ছা ছাড়াই অবলীলাক্রমে মুখে এসে যেত এবং তা কবিতার ছাঁচে পড়ে যাওয়াটা আকস্মিক ব্যাপার ছিল, যেমন হুনাইনের দিন তাঁর মুখে ইচ্ছা ছাড়াই (যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠ্য) এই কবিতা আবৃত্ত হয়েছিলঃ أَنَا النَّبِيُّ لاَ كَذِب - أَنَا ابْنُ عَبْْدِ الْمُطَّلِبْ অন্য এক সময় তাঁর আঙ্গুল যখম হলে তিনি বলেছিলেন,هَلْ أَنْتِ إِلاَّ إِصْبَعٌ دَمِيْتِ - وَفِيْ سَبِيْلِ اللهِ مَا لَقِيْتِ (বুখারী, মুসলিমঃ জিহাদ অধ্যায়)