আর ‘আমরা আল্লাহর রসূল মারয়্যাম-পুত্র ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি’ তাদের এ উক্তির জন্য (অভিশপ্ত হয়েছিল)। অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি এবং ক্রুসবিদ্ধও করেনি,[১] বরং তাদের জন্য (অন্য একজনকে ঈসার) আকৃতি দান করা হয়েছিল।[২] নিঃসন্দেহে যারা তার সম্বন্ধে মতভেদ করেছিল, বস্তুতঃ তারা এ সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত ছিল এবং অনুমানের অনুসরণ ছাড়া এ সম্পর্কে তাদের কোন জ্ঞানই ছিল না।[৩] আর এ নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করেনি।
[১] এই আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইয়াহুদীরা ঈসা (আঃ)-কে হত্যা করতে বা শূলে চড়াতে (ক্রুসবিদ্ধ করতে) কোনটিতেই সফল হয়নি যেমনটি তাঁদের উদ্দেশ্য, পরিকল্পনা ও অভিপ্রায় ছিল। এ প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা সূরা আলে-ইমরানের ৩:৫৫ নং আয়াতের টীকায় বর্ণনা করা হয়েছে।[২] এর ব্যাখ্যা হলো, যখন ঈসা (আঃ) ইয়াহুদীদের হত্যা করার চক্রান্তের কথা জানতে পারলেন, তখন তাঁর ভক্ত ও সহচরবৃন্দকে এক স্থানে সমবেত করলেন, যাদের সংখ্যা ১২ অথবা ১৭ ছিল। এবং তাঁদেরকে বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আমার স্থানে নিহত হুতে প্রস্তুত আছ? যাকে আল্লাহ তা'আলা আমার মত আকার-আকৃতি দান করবেন। তাঁদের মধ্যে একজন যুবক প্রস্তুত হয়ে গেলেন। সুতরাং ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর নির্দেশে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হল। এরপর ইয়াহুদীরা এসে ঐ যুবককে নিয়ে গেল এবং ক্রুসবিদ্ধ করল, যাঁকে মহান আল্লাহ ঈসা (আঃ)-এর মত আকৃতি দান করেছিলেন। আর ইয়াহুদীদের ধারণা হল যে, তারা ঈসাকেই ক্রুসবিদ্ধ করতে কৃতকার্য ও সক্ষম হয়েছে। অথচ তিনি ঐ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না; বরং তাঁকে জীবিত অবস্থায় সশরীরে নিরাপদে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর, ইবনে কাসীর)[৩] ঈসা (আঃ)-এর মত আকৃতিবিশিষ্ট লোকটিকে হত্যা করার পর ইয়াহুদীদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়; একদল বলে, ঈসাকে হত্যা করা হয়েছে। অন্য একদল বলে, ক্রুসবিদ্ধ ব্যক্তি ঈসা নয়; বরং অন্য কোন ব্যক্তি। এরা ঈসা (আঃ)-কে হত্যা ও ক্রুসবিদ্ধ করার কথা অস্বীকার করে। আবার অন্য একদল বলে, তারা ঈসা (আঃ)-কে আসমানে চড়তে স্বচক্ষে দেখেছে। কিছু মুফাসসির বলেন, উক্ত মতভেদ থেকে উদ্দেশ্য হল, স্বয়ং নাসারাদের নাস্তরিয়া নামক একটি ফির্কা বলে যে, ঈসা (আঃ)-কে তাঁর মানবিক দেহ হিসাবে ক্রুসবিদ্ধ করা হয়েছে; কিন্তু ঈশ্বর হিসাবে নয়। আবার মালকানিয়া নামক একটি ফির্কা বলে, মানবিক ও ঐশ্বরিক উভয়ভাবেই তাঁকে হত্যা ও ক্রুসবিদ্ধ করা হয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর) যাই হোক তারা মতবিরোধ, সংশয় ও সন্দেহের শিকার।