তোমরা ওদেরকে পিতৃপরিচয়ে ডাক; আল্লাহর দৃষ্টিতে এটিই ন্যায়সঙ্গত,[১] যদি তোমরা ওদের পিতৃপরিচয় না জান, তবে ওদেরকে তোমরা ধর্মীয় ভাই এবং বন্ধুরূপে গণ্য কর।[২] যে বিষয়ে তোমরা ভুল কর, সে বিষয়ে তোমাদের কোন অপরাধ নেই,[৩] কিন্তু তোমাদের আন্তরিক ইচ্ছা থাকলে (তাতে অপরাধ আছে)।[৪] আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
[১] এই আদেশ দ্বারা সেই প্রচলিত প্রথাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, যা জাহেলী যুগ থেকে চলে আসছিল এবং ইসলামের প্রারম্ভিক যুগেও প্রচলিত ছিল। আর তা হল পোষ্যপুত্রকে আপন পুত্র ভাবা। সাহাবায়ে কিরামগণ বলেন, আমরা (اُدْعُوْهُمْ لِآبَآئِهِمْ) আয়াত অবতীর্ণ হওয়া পর্যন্ত যায়েদ বিন হারেসাহ (রাঃ)-কে (যাঁকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মুক্ত করে বেটা বানিয়ে নিয়েছিলেন) যায়েদ বিন মুহাম্মাদ বলে ডাকতাম। (বুখারীঃ সূরা আহযাবের তফসীর) উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর আবু হুযাইফা (রাঃ) যিনি সালেমকে পোষ্যপুত্র বানিয়ে রেখেছিলেন, তাঁর ঘরে এক সমস্যা দেখা দিল যে, যখন পোষ্যপুত্রকে আপন সন্তান ভাবতে নিষেধ করে দেওয়া হল, তখন তার স্ত্রীর জন্য তার থেকে পর্দা করা অপরিহার্য হয়ে গেল। নবী (সাঃ) আবু হুযাইফার স্ত্রীকে বললেন, "তুমি তাকে দুধ পান করিয়ে দুধ-বেটা বানিয়ে নাও। কারণ এতে তুমি তার জন্য মাহরাম হয়ে যাবে।" সুতরাং তাঁরা তাই করলেন। (মুসলিমঃ শিশুদের দুধপান অধ্যায়, আবূ দাঊদঃ বিবাহ অধ্যায়) অনেকের মতে, এ সমাধান তাঁর জন্যই খাস।
[২] অর্থাৎ, যাদের আসল পিতার খবর জানো, তাদেরকে অন্যের দিকে সম্বদ্ধ না করে তাদের আসল পিতার দিকে সম্বদ্ধ কর। তবে যাদের পিতার পরিচয় জানা নেই, তোমরা তাদেরকে বেটা নয়; বরং ভাই বা বন্ধু মনে কর।
[৩] কারণ ভুলে গিয়ে বা ভুল করে কৃত অপরাধ ক্ষমার্হ; যেমন হাদীসেও বলা হয়েছে।
[৪] অর্থাৎ, যে ব্যক্তি জেনেশুনে (পিতা-পুত্রের) সম্পর্ক অন্যের দিকে জুড়বে, সে বড় পাপী হবে। হাদীসে এসেছে, "যে ব্যক্তি জেনেশুনে নিজেকে অন্য পিতার দিকে সম্পৃক্ত করে, সে কুফরী করে।" (বুখারীঃ মানাক্বিব অধ্যায়)