وكذالك جعلناكم امة وسطا لتكونوا شهداء على الناس ويكون الرسول عليكم شهيدا وما جعلنا القبلة التي كنت عليها الا لنعلم من يتبع الرسول ممن ينقلب على عقبيه وان كانت لكبيرة الا على الذين هدى الله وما كان الله ليضيع ايمانكم ان الله بالناس لرءوف رحيم ١٤٣
وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَـٰكُمْ أُمَّةًۭ وَسَطًۭا لِّتَكُونُوا۟ شُهَدَآءَ عَلَى ٱلنَّاسِ وَيَكُونَ ٱلرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًۭا ۗ وَمَا جَعَلْنَا ٱلْقِبْلَةَ ٱلَّتِى كُنتَ عَلَيْهَآ إِلَّا لِنَعْلَمَ مَن يَتَّبِعُ ٱلرَّسُولَ مِمَّن يَنقَلِبُ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ ۚ وَإِن كَانَتْ لَكَبِيرَةً إِلَّا عَلَى ٱلَّذِينَ هَدَى ٱللَّهُ ۗ وَمَا كَانَ ٱللَّهُ لِيُضِيعَ إِيمَـٰنَكُمْ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ بِٱلنَّاسِ لَرَءُوفٌۭ رَّحِيمٌۭ ١٤٣
وَكَذٰلِكَ
جَعَلْنٰكُمْ
اُمَّةً
وَّسَطًا
لِّتَكُوْنُوْا
شُهَدَآءَ
عَلَی
النَّاسِ
وَیَكُوْنَ
الرَّسُوْلُ
عَلَیْكُمْ
شَهِیْدًا ؕ
وَمَا
جَعَلْنَا
الْقِبْلَةَ
الَّتِیْ
كُنْتَ
عَلَیْهَاۤ
اِلَّا
لِنَعْلَمَ
مَنْ
یَّتَّبِعُ
الرَّسُوْلَ
مِمَّنْ
یَّنْقَلِبُ
عَلٰی
عَقِبَیْهِ ؕ
وَاِنْ
كَانَتْ
لَكَبِیْرَةً
اِلَّا
عَلَی
الَّذِیْنَ
هَدَی
اللّٰهُ ؕ
وَمَا
كَانَ
اللّٰهُ
لِیُضِیْعَ
اِیْمَانَكُمْ ؕ
اِنَّ
اللّٰهَ
بِالنَّاسِ
لَرَءُوْفٌ
رَّحِیْمٌ
۟

এভাবে আমি তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থী জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছি, [১] যাতে তোমরা মানব জাতির জন্য সাক্ষীস্বরূপ হতে পার এবং রসূল তোমাদের জন্য সাক্ষীস্বরূপ হবে। তুমি এ যাবৎ যে ক্বিবলার অনুসরণ করছিলে, তা এই উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম, যাতে আমি জানতে পারি[২] যে, কে রসূলের অনুসরণ করে এবং কে ফিরে যায়? আল্লাহ যাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেছেন, তারা ছাড়া অন্যের কাছে এ (পরিবর্তন) নিশ্চয় কঠিন ব্যাপার।[৩] আর আল্লাহ এরূপ নন যে, তিনি তোমাদের বিশ্বাস (ঈমান তথা নামায)কে ব্যর্থ করবেন।[৪] নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অতি দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।

[১] وَسَطٌ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল, মধ্যম। কিন্তু তা শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম অর্থেও ব্যবহার হয়। আর এখানে এই (সর্বোত্তম) অর্থেই ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ, যেমন তোমাদেরকে সর্বোত্তম ক্বিবলা দেওয়া হয়েছে, অনুরূপ তোমাদেরকে সর্বোত্তম উম্মতও করা হয়েছে এবং এর উদ্দেশ্য হল, তোমরা মানুষের জন্য সাক্ষ্য দেবে। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে,

{لِيَكُونَ الرَّسُولُ شَهِيدًا عَلَيْكُمْ وَتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ} "যাতে রসূল তোমাদের জন্যে সাক্ষ্যদাতা এবং তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলীর জন্যে।" (সূরা হাজ্জ ২২:৭৮ আয়াত) কোন কোন হাদীসে এর বিশ্লেষণ এইভাবে এসেছে যে, যখন মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন নবীদেরকে জিজ্ঞাসা করবেন, 'তোমরা কি আমার আদেশ মানুষদের নিকট পৌঁছে দিয়েছিলে?' তাঁরা বলবেন, 'হ্যাঁ।' আল্লাহ তাআলা বলবেন, 'তোমাদের কি কোন সাক্ষী আছে?' তাঁরা বলবেন, 'হ্যাঁ, মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং তাঁর উম্মত।' তখন এই উম্মত সাক্ষ্য দেবে। আর এই জন্য وَسَط এর অনুবাদ ন্যায়পন্থীও করা হয়। (ইবনে কাসীর) এ শব্দের আর একটি অর্থ, মধ্যপন্থীও করা হয়। অর্থাৎ, উম্মতে মুহাম্মাদী হল মধ্যপন্থী অর্থাৎ, অতিরঞ্জন ও অবজ্ঞা থেকে তারা পবিত্র। আর এটাই হল ইসলামের শিক্ষা। এতে অতিরঞ্জন (কোন কিছুকে নিয়ে বাড়াবাড়ি) এবং অবজ্ঞা (কোন জিনিসকে তার উপযুক্ত মর্যাদা থেকে একেবারে নীচে নামানোরও কোন অবকাশ) নেই।

[২] لِنَعْلَمَ (যাতে আমি জানতে পারি) আল্লাহ তো আগে থেকেই জানেন। আসলে এর অর্থ হল, যাতে আমি দৃঢ় প্রত্যয়ীদেরকে সংশয়ীদের থেকে পৃথক করে দি এবং মানুষের সামনেও যেন উক্ত দুই শ্রেণীর লোক স্পষ্ট হয়ে যায়। (ফাতহুল ক্বাদীর)

[৩] এখানে ক্বিবলা পরিবর্তনের একটি উদ্দেশ্যর কথা বলা হচ্ছে। নিষ্ঠাবান মু'মিনরা তো কেবল আল্লাহর রসূল (সাঃ)-এর চোখের ইঙ্গিতের অপেক্ষায় থাকতেন। কাজেই তাঁদের জন্য একদিক থেকে অন্য দিকে ফিরে যাওয়া কোন সমস্যার ব্যাপার ছিল না, বরং একটি মসজিদে তো ক্বিবলা পরিবর্তনের নির্দেশ তখন পৌঁছে, যখন তাঁরা রুকু'তে ছিলেন। তাঁরা রুকু'র অবস্থাতেই নিজেদের মুখমন্ডল কা'বার দিকে ফিরিয়ে নিলেন। এটাকে 'মসজিদে ক্বিবলাতাইন' (অর্থাৎ, সেই মসজিদ যেখানে একটিই নামায দু'টি ক্বিবলার দিকে মুখ করে পড়া হয়েছে।) বলা হয়। অনুরূপ ঘটনা ক্বুবার মসজিদেও ঘটেছে।

[৪] কোন কোন সাহাবা (রাঃ)-এর মনে এই সমস্যার উদয় হল যে, যে সাহাবাগণ বায়তুল মুক্বাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামায পড়ার যুগে মৃত্যুবরণ করেছেন অথবা আমরা যতদিন সেদিকে মুখ করে নামায পড়েছি, সে সবই মনে হয় বিফলে গেছে, তার মনে হয় কোন সওয়াব পাওয়া যাবে না। মহান আল্লাহ বললেন, তোমাদের ঐ নামাযগুলো ব্যর্থ হবে না; বরং তোমরা তার পূর্ণ সওয়াব পাবে। আর এখানে নামাযকে বিশ্বাস বা ঈমান বলে আখ্যায়িত করে এ কথাও পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে যে, নামায ব্যতীত ঈমানের কোন মূল্য নেই। ঈমান তখনই ঈমান বলে গণ্য হবে, যখন নামায ও আল্লাহর অন্যান্য বিধানসমূহের যত্ন নেওয়া হবে।