وجاءت سيارة فارسلوا واردهم فادلى دلوه قال يا بشرى هاذا غلام واسروه بضاعة والله عليم بما يعملون ١٩
وَجَآءَتْ سَيَّارَةٌۭ فَأَرْسَلُوا۟ وَارِدَهُمْ فَأَدْلَىٰ دَلْوَهُۥ ۖ قَالَ يَـٰبُشْرَىٰ هَـٰذَا غُلَـٰمٌۭ ۚ وَأَسَرُّوهُ بِضَـٰعَةًۭ ۚ وَٱللَّهُ عَلِيمٌۢ بِمَا يَعْمَلُونَ ١٩
وَجَآءَتْ
سَیَّارَةٌ
فَاَرْسَلُوْا
وَارِدَهُمْ
فَاَدْلٰی
دَلْوَهٗ ؕ
قَالَ
یٰبُشْرٰی
هٰذَا
غُلٰمٌ ؕ
وَاَسَرُّوْهُ
بِضَاعَةً ؕ
وَاللّٰهُ
عَلِیْمٌۢ
بِمَا
یَعْمَلُوْنَ
۟

এক যাত্রীদল এসে তারা তাদের পানি সংগ্রাহককে প্রেরণ করল। সে তার পানির বালতি নামিয়ে দিল। সে বলে উঠল, কি সুখবর! এ যে এক কিশোর![১] অতঃপর তারা তাকে পণ্যরূপে লুকিয়ে রাখল।[২] তারা যা করছিল, সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবগত ছিলেন। [৩]

[১] وارد (পানি সংগ্রাহক) সেই ব্যক্তিকে বলা হয়, যে কাফেলা বা যাত্রীদলের জন্য পানি ইত্যাদির ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে কাফেলার আগে আগে যাত্রা করে; যাতে উপযুক্ত স্থানে কাফেলা থাকার ব্যবস্থা হয়। উক্ত পানি সংগ্রাহক যখন কূপের নিকট এল ও পানি উঠানোর জন্য বালতি নিচে নামাল, তখন ইউসুফ (আঃ) তার দড়ি ধরে নিলেন। পানি সংগ্রাহক একটি সুদর্শন শিশু দেখে তাঁকে উপরে টেনে তুলল এবং অতি আনন্দিত হল।

[২] بضاعة বাণিজ্যের পণ্যকে বলা হয়। أسروه (লুকিয়ে রাখল) এর فاعل (কর্তা) কে? অর্থাৎ ইউসুফ (আঃ)-কে ব্যবসার পণ্য হিসাবে কে লুকিয়ে রেখেছিল? এতে মতভেদ আছে। হাফেয ইবনে কাসীর (রঃ) উক্ত কর্মের কর্তা ইউসুফ (আঃ)-এর ভাইদেরকে ধরেছেন। উদ্দেশ্য এই যে, যখন বালতির সাথে ইউসুফ (আঃ) কূপ থেকে বেরিয়ে এলেন, তখন সেখানে তাঁর ভাইরাও উপস্থিত ছিলেন। তারপরেও তাঁরা প্রকৃত ঘটনা লুকিয়ে রেখেছিলেন। তাঁরা এ কথা বলেননি যে, এটা আমাদের ভাই। আর ইউসুফ (আঃ)ও হত্যার ভয়ে তাঁরা যে তাঁর ভাই এ কথা প্রকাশ করেননি। বরং তাঁর ভায়েরা তাঁকে বিক্রির পণ্য বললেও তিনি নিশ্চুপ থাকলেন এবং নিজেকে বিক্রি হওয়াটাই পছন্দ করলেন। সুতরাং সেই পানি সংগ্রাহক কাফেলার লোকদেরকে সুসংবাদ শুনালো যে, একটি ছেলে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এই কথা পূর্ব আলোচনার সাথে মিলে না। (বরং খাপছাড়া মনে হয়।) এর বিপরীত ইমাম শওকানী (রঃ) أسروه শব্দটির কর্তা পানি সংগ্রাহক ও তার সাথীদেরকে ধরে বলেছেন যে, তারা এ কথা প্রকাশ করেনি যে, এই ছেলেটি কূপে পাওয়া গেছে। কারণ তা প্রকাশ করলে কাফেলার সমস্ত লোকই ঐ "বাণিজ্যিক পণ্যে" শরীক হয়ে যেত। বরং কাফেলার লোকদের নিকট গিয়ে এ কথা বলল যে, কূপের মালিক তাদেরকে এই ছেলেটি মিশরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করার জন্য দিয়েছে। কিন্তু সব থেকে উত্তম উক্তি হল এই যে, কাফেলার লোকরা ইউসুফ (আঃ)-কে ব্যবসাপণ্য গণ্য করে লুকিয়ে নিয়েছিল, যাতে তাঁর আত্মীয়-স্বজনরা তাঁর খোঁজে এখানে এসে না যায় এবং বিনা মূল্যে তাকে ফিরিয়ে দিতে না হয়। কারণ কূপে একজন ছেলে পাওয়া যাওয়া, এই কথাই প্রমাণ করে যে, সে কোন স্থানীয় কোন বাসিন্দা হবে এবং খেলাধূলা করতে করতে কূপে পড়ে গিয়ে থাকবে।

[৩] অর্থাৎ ইউসুফ (আঃ)-এর সাথে যা কিছু ঘটছিল, আল্লাহ তাআলা সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত ছিলেন। তার পরেও আল্লাহ তাআলা এত কিছু এই জন্য হতে দিলেন, যাতে আল্লাহর লিখিত ভাগ্য বাস্তবায়িত হয়। তাছাড়া এতে নবী (সাঃ) এর জন্য সান্ত্বনা রয়েছে। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা নিজ পয়গম্বর (সাঃ)-কে জানাচ্ছেন যে, তোমার সম্প্রদায়ের লোকেরা অবশ্যই তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে এবং আমি তা থেকে তাদেরকে বিরত রাখার ক্ষমতাও রাখি। কিন্তু আমি তাদেরকে সেইরূপ ঢিল দিচ্ছি, যেরূপ ইউসুফের ভাইদেরকে ঢিল দিয়েছিলাম এবং শেষ পর্যন্ত আমি ইউসুফকে মিসরের রাজ-সিংহাসনে বসিয়েছিলাম এবং তার ভাইদেরকে অক্ষম ও অসহায় করে তার দরবারে উপস্থিত করেছিলাম। হে নবী! এমন এক সময় আসবে, যখন তোমারও এরূপ মাথা উঁচু হবে এবং এই কুরায়েশ দলপতিরা তোমার ভ্রূর ইঙ্গিত ও মুখের কথার অপেক্ষায় থাকবে। সুতরাং মক্কা বিজয়ের দিন উক্ত অবস্থা অতি সত্ত্বর এসে গিয়েছিল।