তারা অনন্তকাল সেখানে থাকবে, যতকাল আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে;[১] যদি না তোমার প্রতিপালকের অন্য ইচ্ছা হয়।[২] নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক যা ইচ্ছা করেন, তা সম্পাদনে সুনিপুণ।
[১] এই বাক্য দ্বারা কিছু মানুষ এই বিভ্রান্তির শিকার হয়েছে যে, জাহান্নামের আযাব কাফেরদের জন্যও চিরস্থায়ী নয়; বরং সাময়িক। অর্থাৎ, ততদিন থাকবে, যতদিন আকাশ ও পৃথিবী থাকবে। (তারপর শেষ হয়ে যাবে।) কিন্তু এই কথা ঠিক নয়। কারণ এখানে مَا دَامَتِ السَّمَوَاتُ وَالأرضُ কথাটি আরববাসীদের দৈনন্দিন কথাবার্তা ও পরিভাষা অনুযায়ী অবতীর্ণ হয়েছে। আরববাসীদের অভ্যাস ছিল যে, যখন তারা কোন বস্তুর চিরস্থায়িতত্ত্ব প্রমাণ করার উদ্দেশ্য হত, তখন তারা বলত,(هذا دائمٌ دوام السموات والأرض) "এই বস্তু আকাশ ও পৃথিবীর মত চিরস্থায়ী।" সেই পরিভাষাকে কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে, যার অর্থ কাফের ও মুশরিকরা চিরকালব্যাপী জাহান্নামে থাকবে, যা কুরআন বিভিন্ন স্থানে, خَالِدِينَ فِيهَآ أَبَدًا শব্দ দ্বারা বর্ণনা করেছে। তার দ্বিতীয় এক অর্থ এও করা হয়েছে যে, আকাশ ও পৃথিবী থেকে উদ্দেশ্য হল 'জিনস' (শ্রেণী)। অর্থাৎ, ইহলৌকিক আকাশ ও পৃথিবী; যা ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু এ ছাড়া পারলৌকিক আকাশ ও পৃথিবী পৃথক হবে। যেমন কুরআনে তার পরিষ্কার বর্ণনা এসেছে। يوم تبدل الأرض غير الأرض والسموات অর্থাৎ, যেদিন এই পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং আকাশমন্ডলীও।" (সূরা ইবরাহীম ১৪:৪৮) আর পারলৌকিক উক্ত আকাশ ও পৃথিবী, জান্নাত ও জাহান্নামের মত চিরস্থায়ী হবে। এই আয়াতে সেই পারলৌকিক আকাশ-পৃথিবীর কথা বলা হয়েছে, ইহলৌকিক আকাশ-পৃথিবীর কথা নয়, যা ধ্বংস হয়ে যাবে। (ইবনে কাসীর) এই উভয় অর্থের যে কোন অর্থ নেওয়া হলে আয়াতের উদ্দেশ্য পরিষফুটিত হয়ে যাবে এবং উপস্থাপিত সমস্যা দূর হয়ে যাবে। ইমাম শওকানী (রঃ) এর আরো কয়েকটি অর্থ বর্ণনা করেছেন, যা জ্ঞানীরা দেখতে পারেন। (ফাতহুল কাদীর)[২] এই ব্যতিক্রমেরও কয়েকটি অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে। তার মধ্যে সব থেকে সঠিক অর্থ এই যে উক্ত ব্যতিক্রম তওহীদবাদী মু'মিন পাপীদের জন্য। এই অর্থ অনুযায়ী এর পূর্ব আয়াতে شقي (দুর্ভাগ্যবান) শব্দটি ব্যাপক ধরতে হবে। অর্থাৎ কাফের ও পাপী মু'মিন উভয়কে বুঝাবে। আর إلا مَا شَاءَ رَبُّكَ দ্বারা পাপী মু'মিনরা ব্যতিক্রম হয়ে যাবে। আর ما شاء তে مَا হরফটি مَن এর অর্থে ব্যবহার হয়েছে।
০%