انما حرم عليكم الميتة والدم ولحم الخنزير وما اهل لغير الله به فمن اضطر غير باغ ولا عاد فان الله غفور رحيم ١١٥
إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ ٱلْمَيْتَةَ وَٱلدَّمَ وَلَحْمَ ٱلْخِنزِيرِ وَمَآ أُهِلَّ لِغَيْرِ ٱللَّهِ بِهِۦ ۖ فَمَنِ ٱضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍۢ وَلَا عَادٍۢ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌۭ رَّحِيمٌۭ ١١٥
اِنَّمَا
حَرَّمَ
عَلَیْكُمُ
الْمَیْتَةَ
وَالدَّمَ
وَلَحْمَ
الْخِنْزِیْرِ
وَمَاۤ
اُهِلَّ
لِغَیْرِ
اللّٰهِ
بِهٖ ۚ
فَمَنِ
اضْطُرَّ
غَیْرَ
بَاغٍ
وَّلَا
عَادٍ
فَاِنَّ
اللّٰهَ
غَفُوْرٌ
رَّحِیْمٌ
۟

আল্লাহ তো শুধু মৃত, রক্ত, শূকরের গোশত এবং যার যবেহকালে আল্লাহর পরিবর্তে অন্যের নাম নেওয়া হয়েছে তা-ই তোমাদের জন্য অবৈধ করেছেন; কিন্তু কেউ অন্যায়কারী কিংবা সীমালংঘনকারী না হয়ে (তা খেতে) অনন্যোপায় হলে নিশ্চয় আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [১]

[১] এই আয়াত এর পূর্বে আরো তিনবার উল্লিখিত হয়েছে। সূরা বাক্বারাহ ২:১৭৩ নং, সূরা মায়িদা ৫:৩ নং এবং সূরা আনআম ৬:১৪৫ নং আয়াতে। চতুর্থবার মহান আল্লাহ আবার আয়াতটি উল্লেখ করেছেন। এখানে إنما হাসর (সীমিতকরণ)এর জন্য। কিন্তু এখানে 'হাসরে হাকিকী' (প্রকৃত সীমিতকরণ উদ্দিষ্ট) নয়; বরং 'হাসরে ইযাফী' (তূলনামূলক সীমিতকরণ উদ্দিষ্ট)। অর্থাৎ সম্বোধিত ব্যক্তিদের আকীদা ও বিশ্বাসকে সামনে রেখে সীমিতকরণ করা হয়েছে। নচেৎ আরো অন্যান্য জীবজন্তুও হারাম। অবশ্য এই আয়াতে এ কথা স্পষ্ট যে, এখানে যে চারটি হারাম জিনিসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে মহান আল্লাহ তা থেকে মুসলিমদেরকে তাকীদের সাথে বাঁচাতে চান। যার প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে। তবে এখানে {وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللّهِ بِهِ} (যার যবেহ কালে আল্লাহর পরিবর্তে অন্যের নাম নেওয়া হয়েছে) এই চতুর্থ নম্বরের অর্থে দুর্বল ও দূর ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে শিরকের চোরা দরজা খোলার চেষ্টা করা হয়। এই জন্য এখানে এর অধিক আলোকপাত প্রয়োজন। যে পশু আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয়, তার কয়েকটি অবস্থা হতে পারে। (ক) আল্লাহ ছাড়া অন্যের নৈকট্য ও সন্তুষ্টির জন্য কোন পশু যবেহ করা এবং যবেহ করার সময় তারই নাম নেওয়া। (খ) উদ্দেশ্য আল্লাহ ছাড়া অন্যের নৈকট্য লাভ করা কিন্তু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম নেওয়া, যেমন কবর পূজারীদের নিকট প্রচলিত। তারা বুযুর্গদের নামে পশু নির্দিষ্ট করে রাখে; যেমন এই মোরগ বা খাসিটি অমুক পীর বা মাযারের জন্য বা এই গরু অমুক পীরের জন্য বা এই পশু আব্দুল কাদের জীলানীর জন্য ইত্যাদি। তারা তা 'বিসমিল্লাহ' বলেই যবেহ করে। সেই জন্য তারা বলে, প্রথমটি নিঃসন্দেহে হারাম; কিন্তু এই দ্বিতীয়টি হারাম নয়; বরং তা হালাল। কারণ তা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে যবেহ করা হয়নি। আর এভাবে শিরকের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে; যদিও ফকীহগণ দ্বিতীয় অবস্থাকেও হারাম বলে গণ্য করেছেন। যেহেতু এটাও {وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللهِ بِهِ} এর অর্ন্তভুক্ত। তাফসীর বায়যাবীর টিকায় রয়েছে যে, যে পশু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয় তা হারাম; যদিও সেটি আল্লাহর নামেই যবেহ করা হয়। উলামাগণ এ ব্যাপারে একমত যে, যদি কোন মুসলমান গায়রুল্লাহর নামে পশু যবেহ করে, তাহলে সে মুরতাদ হয়ে যায় এবং তার যবেহকৃত পশু মুর্তাদের যবেহ বলে গণ্য হয়। হানাফী ফিকহের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ দুর্রে মুখতারে রয়েছে, কোন রাজা বা অন্য কোন বুযুর্গ ব্যক্তির আগমনে (সৌজন্য বা মেহমান-নেওয়াযীর উদ্দেশে নয় বরং তার সন্তুষ্টি বা তা'যীমের জন্য) পশু যবেহ করা হারাম। কারণ তা {وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللهِ بِهِ} এরই পর্যায়ভুক্ত; যদিও তা আল্লাহর নামেই যবেহ করা হয়। আল্লামা শামী এর সমর্থন করেছেন। (কিতাবুয যাবায়েহ ১২৭৭ হিজরী পুরাতন ছাপা, ২৭৭পৃঃ, ফাতওয়া শামী ৫/২০৩ মায়মানা প্রেস মিসর।) অবশ্য কিছু ফুকহা দ্বিতীয় অবস্থাকে {وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللهِ بِهِ} এর উদ্দিষ্ট অর্থ বা তার পর্যায়ভুক্ত গণ্য করেন না। কিন্তু তাতে একই হেতু (আল্লাহ ছাড়া অন্যের নৈকট্যলাভ) থাকার জন্য হারাম মনে করেন। অতএব হারাম গণ্য করায় কোন মতভেদ নাই। শুধু দলীল গ্রহণের ধরন ভিন্ন। তাছাড়া এটি {وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ} (যা দেবীর নামে বা আস্তানায় বলি দেওয়া হয়েছে) এর অন্তর্ভুক্ত। যাকে সুরা মায়িদায় হারাম ও নিষিদ্ধ বস্তুসমূহের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীস থেকেও বুঝা যায় যে, আস্তানা, থান ও মাযারে যবেহ করা পশু হারাম। কারণ সেখানে যবেহ করা বা সেখানে নিয়ে গিয়ে বিলির উদ্দেশ্য আল্লাহ ছাড়া অন্যের সন্তুষ্টি অর্জন করাই হয়ে থাকে। একটি হাদীসে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি এসে রসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বললেন, 'আমি বুওয়ানা নামক জায়গায় উট যবাই করার মানত করেছি।' নবী (সাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, "সেখানে জাহেলিয়াতের যুগে কোন দেব-দেবী ছিল কি, যার পূজা করা হত?" সাহাবীগণ বললেন, 'না।' তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, "সেখানে তাদের কোন ঈদ-অনুষ্ঠান পালন করা হতো কি?" তাঁরা বললেন, 'না।' তখন নবী (সাঃ) প্রশ্নকারীকে মানত পূরণ করার অনুমতি দিলেন। (আবূ দাঊদঃ কসম ও নযর অধ্যায়) এখান হতে বুঝা গেল যে, দেব-দেবী সরিয়ে নেওয়ার পরও অনাবাদ আস্তানায় পশু যবেহ করা বৈধ নয়। তাহলে ঐ সকল আস্তানায় ও মাযারে গিয়ে পশু যবেহ করা কিভাবে বৈধ হতে পারে, যা পূজা ও নযর-নিয়াযের আড্ডায় পরিণত? أعاذنا الله منه