আর আল্লাহ তোমাদেরকে নির্গত করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভ হতে এমন অবস্থায় যে, তোমরা কিছুই জানতে না[১] এবং তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং হৃদয়; [২] যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। [৩]
[১] شيئا অনির্দিষ্ট। অর্থাৎ, তোমরা কিছুই জানতে না। না ভাল-মন্দ, আর না লাভ-নোকসান।
[২] যাতে কান দ্বারা তোমরা শব্দ শুনতে পারো, চোখ দ্বারা সকল জিনিস দেখতে পারো। আর অন্তর অর্থাৎ, জ্ঞান (কেননা অন্তর জ্ঞানের কেন্দ্রস্থল) দান করেছেন, যাতে নানা জিনিসের মধ্যে পার্থক্য করতে পারো, লাভ-ক্ষতি বুঝতে পারো। মানুষ ধীরে ধীরে যত বড় হয়, তার জ্ঞান-বুদ্ধি ও শক্তি বাড়তে থাকে। এমন কি যখন সে পূর্ণ বয়সে (পূর্ণ যৌবনে) পদার্পণ করে, তখন তার ঐ সকল শক্তিও পরিপূর্ণতা লাভ করে।
[৩] এই সকল শক্তি মহান আল্লাহ এই জন্য দান করেছেন, যাতে মানুষ এই সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এমনভাবে ব্যবহার করবে, যাতে আল্লাহ খুশি হন। তা দিয়ে আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদত করবে। এটিই হল আল্লাহর অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা। হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত, মহান আল্লাহ বলেন, "আমার বান্দা যে সব জিনিস দিয়ে আমার নৈকট্য লাভ করে তার মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় হল আমি যা তাদের উপর ফরয করেছি। তাছাড়া নফল ইবাদত দ্বারাও সে আমার অধিক নৈকট্য লাভে সচেষ্ট হয়। পরিশেষে আমি তাকে ভালবাসতে শুরু করি। আর যখন আমি তাকে ভালবাসতে শুরু করি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শোনে, তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে, তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে চলে। সে চাইলে তাকে দান করি, আশ্রয় চাইলে তাকে আশ্রয় দিই।" (বুখারীঃ কিতাবুর রিক্বাক) কিছু লোক এই হাদীসের ভুল অর্থ নিয়ে আল্লাহর অলীদেরকে আল্লাহ প্রদত্ত শক্তির মালিক বলে মনে করে। অথচ হাদীসের স্পষ্ট অর্থ হল যে, যখন বান্দা আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যে নিষ্ঠাবান হয়। তখন তার প্রতিটি কর্ম আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়ে থাকে। সে তার কান দিয়ে ঐ কথাই শোনে, চোখ দিয়ে ঐ জিনিসই দেখে, যাতে আল্লাহর অনুমতি আছে। যে জিনিস হাত দিয়ে ধরে বা যে পথে চলে, তা শরীয়ত সমর্থিত। আল্লাহর অবাধ্যতায় তা ব্যবহার করে না; বরং তা একমাত্র তাঁর আনুগত্যে ব্যবহার করে।