(হে বিশ্বাসিগণ!) নিশ্চয় তোমাদের ধনৈশ্বর্য ও জীবন সম্বন্ধে পরীক্ষা করা হবে।[১] আর তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল, তাদের এবং অংশীবাদী (মুশরিক)দের কাছ থেকে অবশ্যই তোমরা অনেক কষ্টদায়ক কথা শুনতে পাবে। সুতরাং যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং সংযমী হও, তাহলে তা হবে দৃঢ়সংকল্পের কাজ। [২]
[১] ঈমানদারদেরকে তাদের ঈমান অনুযায়ী পরীক্ষা করার কথা আলোচিত হয়েছে। সূরা বাক্বারার ২:১৫৫ নং আয়াতেও এই ধরনের কথা উল্লিখিত হয়েছে। এই আয়াতের তফসীরে একটি ঘটনাও বর্ণিত হয়েছে। তা হল, মুনাফিকদের সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই তখনও (বাহ্যিক) ইসলাম প্রকাশ করেনি এবং বদরের যুদ্ধও তখন পর্যন্ত সংঘটিত হয়নি। এমন এক দিনে নবী করীম (সাঃ) (রোগাক্রান্ত) সা'দ ইবনে উবাদা (রাঃ)-কে দেখার জন্য বানী-হারেস ইবনে খাযরাজে গেলেন। পথে এক মজলিসে কিছু মুশরিক, ইয়াহুদী এবং আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই প্রভৃতি বসেছিল। রসূল (সাঃ)-এর সওয়ারীর পায়ের উড়ন্ত ধুলো তাদের গায়ে লাগলে তারা ক্ষুব্ধ ভাব প্রকাশ করল। তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে তাদেরকে ইসলাম কবুল করার দাওয়াতও দিলেন। ফলে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই বেআদবীমূলক বাক্যও ব্যবহার করল। সেখানে কিছু মুসলিমও ছিলেন। তাঁরা তাদের বিপরীত রসূল (সাঃ)-এর প্রশংসা করলেন। তাদের উভয়ের মধ্যে ঝগড়া বেধে যাওয়ার উপক্রম হলে তিনি তাদেরকে থামালেন। অতঃপর তিনি সা'দ (রাঃ)-এর কাছে পৌঁছে তাঁকে এ ঘটনা শুনান। শুনে সা'দ (রাঃ) বললেন, আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের এই ধরনের কথা বলার কারণ হল, আপনার মদীনা আগমনের পূর্বে এখানের বাসিন্দারা তার মাথায় মুকুট পরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু আপনার আগমনে তার এই সুন্দর স্বপ্ন অবাস্তব রয়ে গেল। এতে সে চরমভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। তার এই ধরনের কথাগুলো উক্ত কারণঘটিত বিদ্বেষ ও ঔদ্ধত্যেরই বহিঃপ্রকাশ। কাজেই আপনি ক্ষমাশীলতা প্রয়োগ করুন।(সহীহ বুখারী থেকে সংগৃহীত সার-সংক্ষেপ)[২] 'তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল' বলতে ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের বুঝানো হয়েছে। এরা বিভিন্নভাবে নবী করীম (সাঃ), ইসলাম এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে নিন্দা গেয়ে বেড়াত। মুশরিকদের অবস্থাও অনুরূপ ছিল। এ ছাড়াও মদীনা আসার পর মুনাফিকগণ বিশেষতঃ তাদের সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই রসূল (সাঃ)-এর ব্যাপারে তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করে বেড়াত। রসূল (সাঃ)-এর মদীনা আসার পূর্বে মদীনাবাসীরা তাদের সর্দারের মাথায় সর্দারীর মুকুট পরানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে নিয়েছিল। রসূল (সাঃ)-এর আগমনের কারণে তার এই স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। এতে সে চরমভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হল। তাই প্রতিশোধ গ্রহণ করার নিমিত্তেও এই লোকটি রসূল (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে গালিগালাজ করার কোন সুযোগ পেলে, তা হাত ছাড়া করে না। (যেমন, পূর্বের টীকায় বুখারীর হাওয়ালায় এই ঘটনার বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।) এই রকম পরিস্থিতিতে মুসলিমদেরকে ক্ষমা, ধৈর্য এবং আল্লাহভীরুতার পথ অবলম্বন করার কথা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সত্যের প্রতি আহবায়কদের বহু কষ্ট ও কঠিন সমস্যার শিকার হওয়ার বিষয়টা সত্য পথের নানা পর্যায়ে স্বাভাবিক ব্যাপার। আর এর চিকিৎসাঃ ধৈর্য ধারণ, আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন বৈ আর কিছুই নয়। (ইবনে কাসীর)