পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি রক্তপিন্ডে, অতঃপর রক্তপিন্ডকে পরিণত করি গোশতপিন্ডে এবং গোশতপিন্ডকে পরিণত করি অস্থিপঞ্জরে; অতঃপর অস্থি-পঞ্জরকে ঢেকে দিই গোশত দ্বারা;[১] অবশেষে ওকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে; [২] অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান! [৩]
[১] এর কিছু বিবরণ সূরা হজ্জের শুরুতে (২২:৫ নং আয়াতে) বর্ণিত হয়েছে। এখানে আবার বর্ণনা করা হয়েছে। যদিও ওখানে مُخَلَّقَة (পূর্ণাকৃতি)এর যে বর্ণনা ছিল এখানে তা স্পষ্ট করা হয়েছে এভাবে যে, مُضغَة (গোশতপিন্ড)-কে অস্থি বা হাড়ে পরিণত করা হয়, অতঃপর তার উপর গোশত চড়িয়ে দেওয়া হয়। مُضغَة (গোশতপিন্ড)-কে অস্থিতে পরিণত করার উদ্দেশ্য মানুষের কাঠামোকে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করানো। কারণ, শুধু মাংসের মধ্যে শক্তি ও কঠিনতা নেই। আবার যদি কেবলমাত্র অস্থি-পঞ্জরের খাঁচা (কঙ্কাল)টা রাখা হত, তাহলে মানুষের সেই শোভা ও সৌন্দর্য প্রকাশ পেত না, যা প্রতিটি মানুষের মধ্যে বিদ্যমান। সেই কারণে সেই হাড়ের উপর এক বিশেষ নিয়মে ও প্রয়োজন মাফিক গোশত চড়ানো হয়েছে; কোথাও কম, কোথাও বেশি। যাতে মানুষের দৈহিক গঠনে কোন ধরনের অসামঞ্জস্য ও অসৌন্দর্য প্রকাশ না পায়; বরং সে রূপ ও সৌন্দর্যের এক সুশোভন অবয়ব এবং আল্লাহর সৃষ্টির এক সুন্দর নমুনা হয়। এই কথাটিই কুরআনের এক জায়গায় এভাবে বর্ণিত হয়েছে, 'নিশ্চয় আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে।' (সূরা তীন ৯৫:৪ নং আয়াত)[২] এর অর্থ সেই কচি শিশু, যে ৯ মাস পর এক বিশেষ রূপ নিয়ে মায়ের পেট হতে বের হয়ে ভুমিষ্ট হয় এবং সাথে সাথে নড়া চড়া শোনা, দেখা ও অনুভব করার শক্তিসমুহ তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে।[৩] خَالِقِين (স্রষ্টাদল) বলতে সেই সমস্ত কারিগরদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা পরিমাণ ও পরিমাপ অনুযায়ী বিভিন্ন জিনিসকে জোড়া লাগিয়ে কোন নতুন জিনিস তৈরী করে থাকে। অর্থাৎ, সেই সকল কারিগরদের মধ্যে আল্লাহর সমতুল্য কারিগর আর কে আছে, যে এই শ্রেণীর কারিগরির নমুনা পেশ করতে পারে, যা আল্লাহ মানুষের সুন্দর অবয়ব রূপে পেশ করেছেন? অতএব সবার চেয়ে বড় কল্যাণময় সেই আল্লাহ যিনি সর্বোত্তম স্রষ্টা ও সর্বশ্রেষ্ঠ কারিগর।