যাতে আমি আমার ছেড়ে আসা জীবনে সৎকর্ম করতে পারি।’[১] না, এটা হবার নয়;[২] এটা তো তার একটা উক্তি মাত্র;[৩] তাদের সামনে ‘বারযাখ’ (যবনিকা) থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত।[৪]
[১] এই কামনা প্রতিটি কাফের মৃত্যুর সময়, পুনর্জীবিত হওয়ার সময়, আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হওয়ার সময় এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ হওয়ার সময় করে থাকে ও করবে। কিন্তু এতে কোন লাভ হবে না। কুরআন কারীমে এ বিষয়টিকে বিভিন্ন জায়গায় বর্ণনা করা হয়েছে। যেমনঃ সূরা মুনাফিকূন ৬৩:১০-১১, ইবরাহীম ১৪:৪৪, আ'রাফ ৭:৫৩, সাজদাহ ৩২:১২, আনআম ৬:২৭-২৮, শূরা ৪২:৪৪, মু'মিন ৪০:১১-১২, ফাত্বির ৩৫:৩৭ আয়াত ইত্যাদি।[২] كَلا শব্দটি ধমকরূপে প্রয়োগ করা হয়েছে। অর্থাৎ এ রকম কখনই হবে না যে, তাদেরকে পৃথিবীতে পুনর্বার পাঠিয়ে দেয়া হবে।[৩] এর একটি অর্থ এই যে, এ রকম কথা তো প্রত্যেক কাফের তার মৃত্যুর সময় বলে থাকে। দ্বিতীয় অর্থ হল, এটা শুধু তাদের মুখের কথা; যা কাজে পরিণত হওয়ার নয়। অর্থাৎ, তাদেরকে পৃথিবীতে পুনর্বার পাঠিয়ে দেওয়া হলেও তাদের এ কথা কথাই থেকে যাবে; সৎকাজের সুমতি তাদের হবে না। যেমন, এক জায়গায় বলা হয়েছে "যদি তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, তাহলেও যা করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল তারা তাই করবে।" (সূরা আনআম ৬:২৮) ক্বাতাদাহ (রহঃ) বলেন, কাফেরদের এই কামনায় আমাদের জন্য বড় শিক্ষা রয়েছে। কাফের নিজ বংশে ও গোত্রে ফিরে যাওয়ার কামনা করবে না। বরং পৃথিবীতে সৎকর্ম করার কামনা করবে। সেই জন্য জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে মূল্যবান মনে করে অধিকাধিক সৎকর্ম করা উচিত। যাতে কাল কিয়ামত দিবসে এ রকম কামনা করার প্রয়োজন না হয়। (ইবনে কাসীর)[৪] দুই জিনিসের মধ্যেকার পর্দা ও আড়ালকে 'বারযাখ' বলে। ইহকাল ও পরকাল জীবনের মধ্যকার যে একটি জীবন রয়েছে, তাকেই 'বারযাখ' বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কারণ, মৃত্যুর পরপরই পৃথিবীর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। আর আখেরাতের জীবন তখন শুরু হবে, যখন সমস্ত মানুষকে পুনর্বার জীবিত করা হবে। এর মধ্যকার জীবন যা কবরে বা পশু-পক্ষীর পেটে কিংবা পুড়িয়ে ছাই করে দিলে শেষ পর্যন্ত মাটির ধূলিকণা আকারে অতিবাহিত হয়, তাকে 'বারযাখী জীবন' বলে। মানুষের এই অস্তিত্ব যেখানেই থাক আর যেভাবেই থাক, শেষ পর্যন্ত মাটিতে মিশে মাটিতে পরিণত হবে অথবা ছাই হয়ে হাওয়ায় উড়ে যাবে, অথবা সমুদ্রে ভাসিয়ে দেওয়া হবে অথবা কোন জন্তুর খাদ্যে পরিণত হবে। পরিশেষে মহান আল্লাহ সকলকে এক নতুন অস্তিত্ব দান করে হাশরের মাঠে জমা করবেন।