তিনিই দুটি সাগরকে প্রবাহিত করেছেন, একটির পানি মিষ্ট, সুপেয় এবং অপরটির পানি লোনা, ক্ষারবিশিষ্ট।[১] আর উভয়ের মধ্যে তিনি রেখে দিয়েছেন এক সীমারেখা, এক অনতিক্রম্য ব্যবধান। [২]
[১] মিষ্টি পানিকে فُرَات বলা হয়। এর মূল অর্থঃ কেটে দেওয়া, ভেঙ্গে দেওয়া। যেহেতু মিষ্টি পানি পিপাসাকে কেটে দেয় অর্থাৎ, দূর করে দেয়, সেহেতু তাকে 'ফুরাত' বলা হয়। আর أُجَاج অর্থ ক্ষারবিশিষ্ট।
[২] যা এক অপরের সাথে মিলিত হতে দেয় না। আবার কেউ কেউ حِجْرًا مَّحْجُوْرًا এর অর্থ করেছেন حَرَامًا مُّحَرَّمًا ওদের উপর হারাম করে দেওয়া হয়েছে যে, মিষ্টি পানি লবণাক্ত ও লবণাক্ত পানি মিষ্টি যেন না হয়। আবার কেউ কেউ مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ এর অর্থ করেছেন خَلَقَ المَاءَين দুই পানি সৃষ্টি করেছেন; এক মিষ্টি ও একটি লবণাক্ত। মিষ্টি পানি ঐসব পানি, যা নদী, ঝরনা ও কূপের পানিরূপে আবাদীর মধ্যে প্রাপ্ত হয়, যা মানুষ নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করে। আর লবণাক্ত পানি ঐসব মহা সমুদ্রের পানি, যা পূর্বে পশ্চিমে বিস্তৃত। যার জন্য বলা হয় যে, পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগ পানি ও এক ভাগ স্থল; যার উপর মানুষ ও জীবজন্তু বসবাস করছে। সমুদ্র স্থির, তবে তাতে জোয়ার-ভাটা হয় এবং ঢেউ-সংঘাত বাধে। সমুদ্রের পানিকে লবণাক্ত করার মধ্যে অনেক হিকমত রয়েছে। মিষ্টি পানি কোন জায়গায় বেশিক্ষণ স্থির থাকলে তা খারাপ হয়ে যায়। তার রঙ, গন্ধ ও সবাদে পরিবর্তন ঘটে। আর লবণাক্ত পানি খারাপ হয় না এবং তার রঙ, গন্ধ ও সবাদে পরিবর্তনও আসে না। যদি ঐ সব স্থির সমুদ্রের পানিও মিষ্টি হত, তাহলে তা দুর্গন্ধময় হয়ে যেত। আর যার কারণে মানুষ ও জীবজন্তুর পৃথিবীতে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়ত। তার উপর আবার তাতে মৃত জীবের দুর্গন্ধ। আল্লাহর হিকমত এই যে হাজার হাজার বছর ধরে এই সমস্ত সমুদ্র বিদ্যমান এবং তাতে হাজার হাজার জীব-জন্তু মরে গলে যায়। কিন্তু মহান আল্লাহ ওর মধ্যে লবণের এমন ভাগ রেখেছেন যে, যাতে পানির মধ্যে সামান্যতম দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় না। সমুদ্র হতে উত্থিত বাতাসও পরিষ্কার ও সবাস্থ্যকর এবং তার পানিও পবিত্র; এমনকি মৃত সামুদ্রিক প্রাণীও হালাল। যেমনটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
(মুআত্তা ইমাম মালিক, ইবনে মাজাহ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী পবিত্রতা অধ্যায়, নাসাঈ পানির বর্ণনা পরিচ্ছেদ।)