(দান) অভাবগ্রস্ত লোকদের প্রাপ্য; যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে, জীবিকার সন্ধানে ভূপৃষ্ঠে ঘোরা-ফেরা করতে পারে না।[১] তারা কিছু চায় না বলে, অবিবেচক লোকেরা তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে। তুমি তাদেরকে তাদের লক্ষণ দেখে চিনতে পারবে; তারা লোকেদের কাছে নাছোড়বান্দা হয়ে যাচ্ঞা করে না। [২] আর তোমরা যা কিছু ধন-সম্পদ দান কর, আল্লাহ তা সবিশেষ জ্ঞাত।
[১] এ থেকে সেই মুহাজিরদের বুঝানো হয়েছে যাঁরা মক্কা ত্যাগ করে আসেন এবং আল্লাহর পথে এসে প্রত্যেক জিনিস থেকে বঞ্চিত হতে হয়। সব কিছুই তাঁদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। দ্বীনী জ্ঞান অন্বেষণকারী ছাত্র-ছাত্রী এবং আলেমরাও এরই আওতায় পড়তে পারে।
[২] অর্থাৎ, ঈমানদারদের গুণ হল, অভাব-অনটন সত্ত্বেও তারা চাওয়া ও ভিক্ষা করা থেকে বাঁচতে চেষ্টা করে এবং নাছোড় বান্দা হয়ে চাওয়া থেকে বিরত থাকে। কেউ কেউ إلحاف এর অর্থ করেছেন, মোটেই না চাওয়া। কেননা, তাদের প্রথম গুণ বলা হয়েছে যে, তারা যাচ্ঞা করে না। (ফাতহুল ক্বাদীর) আর কেউ কেউ বলেছেন, তারা চাওয়াতে বারবার আবেদন ও কাকুতি-মিনতি করে না এবং অপ্রয়োজনীয় জিনিস লোকের কাছে প্রার্থনা করে না। কারণ, إلحاف হল, প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও (স্বভাবগত কারণে) মানুষের কাছে চাওয়া। এই অর্থের সমর্থন সেই হাদীসসমূহ দ্বারাও হয়ে যায় যাতে বলা হয়েছে, "মিসকীন তো সে নয়, যে একটি-দু'টি খেজুরের জন্য অথবা এক-দু' লুকমা খাবারের জন্য দ্বারে দ্বারে গিয়ে চেয়ে বেড়ায়, বরং আসল মিসকীন তো সেই, যে (অভাব সত্ত্বেও) চাওয়া থেকে বেঁচে থাকে।" অতঃপর নবী করীম (সাঃ) প্রমাণস্বরূপ
{لاَ يَسْئَلُوْنَ النَّاسَ إلْحَافًا} আয়াতটি পাঠ করেন। (সহীহ বুখারী ১৪৭৬নং) এই জন্য পেশাদার ভিক্ষুকের পরিবর্তে মুহাজির, দ্বীনী জ্ঞান অন্বেষণকারী ছাত্র-ছাত্রী, উলামা এবং চাইতে পারে না অথবা চাইতে লজ্জাবোধ করে এমন গুপ্ত অভাবীদের খোঁজ করে তাদের সহযোগিতা করা উচিত। কারণ, অন্যের সামনে হাতপাতা মানুষের আত্মসম্মান পরিপন্থী ও মর্যাদাহানিকর কর্ম। তাছাড়া হাদীসে এসেছে যে, যার কাছে তার প্রয়োজনের যথেষ্ট সামগ্রী থাকা সত্ত্বেও মানুষের কাছে ভিক্ষা চায়, কিয়ামতের দিন তার মুখমন্ডল ক্ষত-বিক্ষত হবে। (সুনানে আরবাআহ) আর বুখারী ও মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে যে, "যে ব্যক্তি সব সময় মানুষের কাছে চায়, কিয়ামতের দিন তার মুখমন্ডলে গোশত থাকবে না।" (বুখারী ১৪৭৫, মুসলিম ১০৪০নং)