স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক আদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের সন্তান-সন্ততি বাহির করেন এবং তাদের নিজেদের সম্বন্ধে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন এবং বলেন, ‘আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই?’ তারা বলে, ‘নিশ্চয়ই। আমরা সাক্ষী রইলাম।’[১] (এ স্বীকৃতি গ্রহণ) এ জন্য যে, তোমরা যেন কিয়ামতের দিন না বল, ‘আমরা তো এ বিষয়ে জানতাম না।’
[১] এটিকে 'আলাসতু' অঙ্গীকার বলা হয় যা ألست بربكم হতে তৈরী। এই অঙ্গীকার আদম (আঃ)-এর সৃষ্টির পর তাঁর সৃষ্টজাত সকল সন্তানের নিকট হতে নেওয়া হয়েছিল। একটি সহীহ হাদীসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, আরাফার দিনে নু'মান নামক জায়গায় মহান আল্লাহ আদম-সন্তান হতে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন। আদম (আঃ)-এর সকল সন্তানকে তার পৃষ্ঠদেশ হতে বের করলেন এবং তাদেরকে নিজের সামনে (পিঁপড়ের আকারে) ছড়িয়ে দিলেন ও তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'আমি কি তোমাদের রব (প্রভু) নই।' সকলে বলেছিল, بَلَى شَهِدنَا অবশ্যই, আমরা সকলেই আপনার রব হওয়ার সাক্ষ্য দিচ্ছি। (মুসনাদে আহমাদ, হাকেম ২/৫৪৪, সিলসিলাহ সহীহাহ ১৬২৩নং) ইমাম শাওকানী এ হাদীসটি সম্পর্কে বলেন, এর সূত্রে কোন প্রকার ত্রুটি নেই। ইমাম শাওকানী আরো বলেন, তখনকার জগৎকে 'আলামুয যার্র' (পিপীলিকা জগৎ) বলা হয়। এটিই এর সঠিক ও যথার্থ ব্যাখ্যা। এর থেকে সরে যাওয়া ও অন্য অর্থ নেওয়া সঠিক নয়। কারণ, এটি আল্লাহর রসূলের হাদীস ও সাহাবাদের উক্তি দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং এটিকে 'মাজায' (রূপক বা ভাবগত) অর্থে ব্যবহার করাও উচিত নয়। মোটকথা, আল্লাহর রব হওয়ার সাক্ষ্য প্রত্যেক মানুষের প্রকৃতিতে সন্নিবিষ্ট আছে। এই ভাবার্থকেই আল্লাহর রসূল (সাঃ) এইভাবে বর্ণনা করেছেন, "প্রতিটি শিশু (ইসলামী ধর্মবোধের) প্রকৃতি নিয়ে জন্ম নেয়। পরে তার মাতা-পিতা তাকে ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান বা অগ্নিপূজক বানিয়ে নেয়। যেমন জন্তুর বাচ্চা সম্পূর্ণ জন্ম হয়, তার নাক ও কান কাটা থাকে না।" (বুখারীঃ জানাযা অধ্যায়, মুসলিমঃ তকদীর অধ্যায়) সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, মহান আল্লাহ বলেন, 'আমি আমার বান্দাদেরকে একনিষ্ঠ (একমাত্র ইসলামের প্রতি অনুগত) রূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর শয়তান তাদেরকে ইসলামী প্রকৃতি হতে পথভ্রষ্ট করে দেয়।' (মুসলিমঃ জানাযা অধ্যায়) এই প্রকৃতিই আল্লাহর একত্ব ও তাঁর অবতীর্ণকৃত শরীয়ত। যা এখন ইসলাম নামে সংরক্ষিত।