নিশ্চয়ই আমি আকাশ, পৃথিবী ও পর্বতমালার প্রতি এ আমানত অর্পণ করতে চেয়েছিলাম। ওরা ভয়ে বহন করতে অস্বীকার করল; কিন্তু মানুষ তা বহন করল। [১] নিশ্চয় সে অতিশয় যালেম ও অতিশয় অজ্ঞ। [২]
[১] পূর্বে মহান আল্লাহ আনুগত্যকারীদের প্রাপ্য নেকী এবং অবাধ্যদের শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন, এখন শরয়ী আদেশ ও তার কঠিনতার কথা বর্ণনা করছেন। আমানত বলতে ঐ সকল শরয়ী আদেশ; ফরয ও ওয়াজেব কর্মসমূহকে বুঝানো হয়েছে, যা পালন করলে নেকী ও সওয়াব লাভ হয় এবং তা হতে বৈমুখ হলে বা তা অস্বীকার করলে শাস্তি ভোগ করতে হবে। যখন এই শরীয়তের গুরুভার আকাশ, পৃথিবী ও পর্বতমালার উপর পেশ করা হল, তখন তারা এর যথাযথ হক আদায় করার ব্যাপারে ভীত হয়ে গেল। কিন্তু যখন মানুষের উপর তা পেশ করা হল, তখন তারা আল্লাহর আমানতের (আনুগত্যের) নেকী ও ফযীলত (প্রতিদান ও মাহাত্ম্য) দেখে সেই কঠিন গুরুভার বহন করতে উদ্বুদ্ধ হয়ে গেল। শরয়ী আহ্কামকে 'আমানত' বলে এই ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, তা আদায় করা মানুষের উপর ঐ রকম ওয়াজেব যেমন আমানত আদায় করা ওয়াজেব। 'আমানত অর্পণ' করার অর্থ কি? আকাশ, পৃথিবী ও পর্বতমালা কিভাবেই বা তার প্রত্যুত্তর দিল এবং মানুষ তা কোন্ সময়ে গ্রহণ বা বহন করল? এ সবের পূর্ণ বিবরণ না আমরা জানতে পারি আর না বর্ণনা করতে পারি। আমাদেরকে বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর সকল সৃষ্টির মাঝে বিশেষ অনুভব ও বুঝার শক্তি রেখেছেন; যদিও আমরা তার প্রকৃতত্ব সম্বন্ধে অবগত নই। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাদের কথা বুঝার ক্ষমতা রাখেন। তিনি অবশ্যই সেই আমানতকে (কোন একভাবে) তাদের উপর পেশ করেছিলেন, যা গ্রহণ করতে তারা অস্বীকার করেছে। অবশ্য তারা বিদ্রোহী বা অবাধ্য হয়ে তা অস্বীকার করেনি; বরং তাদের মাঝে এই ভয় ছিল যে, যদি আমরা উক্ত আমানতের দাবী পূর্ণ করতে (সে আমানত যথার্থরূপে রক্ষা করতে) অক্ষম হই, তাহলে তার কঠিন শাস্তি আমাদেরকে ভোগ করতে হবে। মানুষ যেহেতু ত্বরাপ্রবণ, তাই তারা শাস্তির দিকটা না ভেবে প্রতিদান ও পুরস্কার লাভের লোভে উক্ত আমানত কবুল করে নিল।
[২] অর্থাৎ, এই গুরুভার বহন করে নিজের উপর যুলুম করেছে এবং তার দাবী পূরণে বৈমুখ হয়ে অথবা তার মান ও মূল্য সম্বন্ধে উদাসীন থেকে অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছে।