আর সেখানে একটি (লূতের) ঘর ব্যতীত কোন আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) আমি পাইনি। [১]
[১] আর এই ঘরটি ছিল আল্লাহর নবী লূত (আঃ)-এর ঘর। যেখানে তাঁর দুই কন্যা এবং তাঁর উপর ঈমান আনয়নকারী কিছু লোক ছিল। বলা হয় যে, এরা মোট তের জন ছিল। এদের মধ্যে লূত (আঃ)-এর স্ত্রী শামিল ছিল না। বরং সে তার ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির অন্তর্ভুক্ত ছিল। (আয়সারুত তাফাসীর) ইসলামের অর্থ, আত্মসমর্পণ করা, আনুগত্য করা ও মেনে নেওয়া। আল্লাহর নির্দেশাবলীর সামনে আনুগত্যের মাথা নতকারীকে মুসলিম বলা হয়। এই দিক দিয়ে প্রত্যেক মু'মিনই মুসলিম। তাই প্রথমে তাদের জন্যে মু'মিন শব্দ ব্যবহার করা হয় এবং পরে আবার তাদেরই জন্য মুসলিম শব্দ ব্যবহার করা হয়। এ থেকে প্রমাণ করা হয়েছে যে, লক্ষ্যার্থে উভয় শব্দের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই; যেমন অনেকে পার্থক্য করে থাকেন। কুরআনে যে কোথাও মু'মিন ও কোথাও মুসলিম শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তো সেটা আরবী অভিধানে যে অর্থগুলো বলা হয়েছে সেই দিক দিয়ে। কাজেই আভিধানিক প্রয়োগের তুলনায় শরীয়তের পরিভাষার গণ্যতা বেশী। আর শরয়ী পরিভাষার দিক দিয়ে এই উভয় শব্দের মধ্যে পার্থক্য কেবল ততটুকুই, যতটুক হাদীসে জিবরীল দ্বারা প্রমাণিত। যখন নবী করীম (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হল, ইসলাম কি? তখন তিনি (সাঃ) বললেন, "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ---'র সাক্ষ্য দেওয়া, নামায কায়েম করা, যাকাত দেওয়া এবং হজ্জ করা ও রোযা রাখা।" আর যখন ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, তখন বললেন, "আল্লাহর উপর, তাঁর ফিরিশতাদের উপর, তাঁর অবতীর্ণ করা কিতাবগুলোর উপর, তাঁর রসূলদের উপর, আখেরাতের উপর এবং ভাগ্যের (ভাল-মন্দের) উপর ঈমান আনা।" অর্থাৎ, অন্তর থেকে এই জিনিসগুলোর প্রতি বিশ্বাস রাখার নাম হল ঈমান এবং বিধি-বিধান ও ফরয কার্যাদি পালন করার নাম হল ইসলাম। এই দিক দিয়ে প্রত্যেক মু'মিনই হল মুসলিম এবং প্রত্যেক মুসলিমই হল মু'মিন। (ফাতহুল ক্বাদীর) আর যাঁরা মু'মিন ও মুসলিমের মধ্যে পার্থক্য করেন, তাঁরা বলেন যে, এ কথা ঠিকই যে, এখানে কুরআন একই দলের জন্য মু'মিন ও মুসলিম শব্দ ব্যবহার করেছে, তবে এর মধ্যে যে পার্থক্য আছে সেই দিক দিয়ে প্রত্যেক মু'মিন হল মুসলিম কিন্তু প্রত্যেক মুসলিমের মু'মিন হওয়া জরুরী নয়। (ইবনে কাসীর) যাই হোক এটা একটি ইলমী মতভেদ। আর প্রত্যেক দলের কাছে সব সব মতের পক্ষে দলীলও আছে।