১২ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
এ আয়াতটিকে مبايعة النساء বা মহিলাদের বাইআতের আয়াত বলা হয়। যখন মক্কা বিজয় হল তখন মক্কার মহিলাগণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আগমন করে বাইআত গ্রহণ করতে লাগল। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন : যে সকল মহিলা হিজরত করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসত তাদেরকে এ আয়াত দ্বারা পরীক্ষা করতেন। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন : মু’মিনা নারী এ সকল শর্ত মেনে নিলে তাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন : আমি কথার মাধ্যমে তোমার বাইআত গ্রহণ করলাম। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন : আল্লাহ তা‘আলার শপথ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাত কখনো কোন মহিলার হাত স্পর্শ করেনি। (সহীহ বুখারী হা. ৫২৮৮)
قد بايعتك علي ذلك
অর্থাৎ এভাবে তোমার বাইআত নিলাম। এরূপ কথার মাধ্যমেই তিনি বাইআত নিতেন। (সহীহ বুখারী হা. ৪৮৯১)
উম্মু আতিয়াহ (রাঃ) বলেন : আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে বাইআত গ্রহণ করতাম। তখন তিনি আমাদের কাছে এ আয়াত পাঠ করতেন। আর আমাদেরকে মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে বুকের কাপড় ছিঁড়ে, গালে শরীরে আঘাত করে আওয়াজের সাথে কান্না করতে নিষেধ করেছেন। তখন এক মহিলা হাত গুটিয়ে নিল। বলল : অমুক মহিলা আমার অমুকের মৃত্যুর সময় বিলাপ করে কান্নাতে সাহায্য করেছিল। অতএব এর বিনিময় হিসাবে তার মৃত্যুতে আমাকে বিলাপ করে কান্না করতে হবেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে কিছুই বললেন না। এরপর সে মহিলা চলে গেলে তারপর কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে বাইআত করলো। (সহীহ বুখারী হা. ৪৮৯২)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বকর, উমার ও উসমান (রাঃ)-এর ঈদুল ফিতরের সালাতে উপস্থিত ছিলাম। তারা প্রত্যেকেই খুৎবা প্রদানের পূর্বেই সালাত আদায় করেছেন, অতঃপর খুৎবা প্রদান করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুৎবা অবস্থায় মিম্বার হতে নেমে পড়েন। এখনো যেন ঐ দৃশ্য আমার চোখের সামনে রয়েছে। লোকদেরকে বসানো হচ্ছিল এবং তিনি তাদের মধ্য দিয়ে আসছিলেন। অবশেষে স্ত্রীলোকদের নিকট আসলেন। তাঁর সাথে বেলাল (রাঃ) ছিলেন। সেখানে এ আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন। (সহীহ বুখারী হা. ৪৮৯৫)
এ কথাগুলোর বাইআত আকাবার বাইআতেও নিয়েছিলেন। সেখানে বলা হয়েছে যদি এ শর্তগুলো পূরণ কর তাহলে তোমাদের জন্য জান্নাত। (সহীহ বুখারী হা. ৩৮৯৩)
এ বাইআতগুলোতে সালাত, সিয়াম, হাজ্জ ও যাকাতের কথা উল্লেখ নেই। কারণ এগুলো ইসলামের রুকন এবং দীনের অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিধান। তাই উল্লেখ করার প্রয়োজন হয় না। সেজন্য বিশেষ করে এ আয়াতে বর্ণিত জিনিসের বাইআত গ্রহণ করতেন কারণ এ অপরাধগুলোর প্রচলন সমাজে বেশি ছিল, বিশেষ করে মহিলাদের মাঝে।
وَّلَا يَسْرِقْنَ
(চুরি করবে না) তবে স্বামী যদি কৃপণ হয় আর স্ত্রী ও সন্তানাদীর ব্যয় যথারীতি বহন না করে তাহলে যতটুকু না হলেই নয় ততটুকু স্বামীর অজান্তে না বলে নিতে পারবে। যেমন বুখারীতে এ সম্পর্কে আবূ সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা থেকে বর্ণনা আছে। (সহীহ বুখারী হা. ৫৩৭০)
(وَلَا يَعْصِيْنَكَ فِيْ مَعْرُوْفٍ)
উম্মু সালামাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে বিলাপ করে কান্না করবে না। অন্যত্র তিনি বলেন :
لَيْسَ مِنَّا مَنْ ضَرَبَ الخُدُودَ، وَشَقَّ الجُيُوبَ، وَدَعَا بِدَعْوَي الجَاهِلِيَّةِ
যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে গাল চাপড়ায়, চুল ছেঁড়ে, কাপড় ফাড়ে এবং জাহিলি যুগের রীতিনীতি ডেকে নিয়ে আসে সে আমাদের মধ্যে নয়। (সহীহ বুখারী হা. ১২৯৭-১২৯৮)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে জিনিসগুলোর বাইআত নিতেন তা জানতে পারলাম।
২. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কোন দিন কোন মহিলার হাত স্পর্শ করেননি।
৩. বাইআত নেবেন একমাত্র ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান। কোন পীর, ফকীর ও দরবেশ ইত্যাদি নয়।
৪. স্বামী কৃপণতাবশত ভরণপোষণ বহন না করলে স্ত্রী না বলে ভরণপোষণের অর্থ নিলে চুরির অন্তর্ভুক্ত হবে না।
৫. মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে গাল চাপড়িয়ে, কাপড় ছেঁড়া ও উচ্চস্বরে কান্না ইত্যাদি হারাম। এর অন্তর্ভুক্ত হল শোক দিবস পালন করা, চল্লিশা, কুলখানি ও তৃতীয় দিনের আয়োজন ইত্যাদি।
৬. ইসলামী বিধানের আওতায় নারী-পুরুষ সবাই সমান।