5:103 5:104 আয়াতের গ্রুপের জন্য একটি তাফসির পড়ছেন
ما جعل الله من بحيرة ولا سايبة ولا وصيلة ولا حام ولاكن الذين كفروا يفترون على الله الكذب واكثرهم لا يعقلون ١٠٣ واذا قيل لهم تعالوا الى ما انزل الله والى الرسول قالوا حسبنا ما وجدنا عليه اباءنا اولو كان اباوهم لا يعلمون شييا ولا يهتدون ١٠٤
مَا جَعَلَ ٱللَّهُ مِنۢ بَحِيرَةٍۢ وَلَا سَآئِبَةٍۢ وَلَا وَصِيلَةٍۢ وَلَا حَامٍۢ ۙ وَلَـٰكِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ يَفْتَرُونَ عَلَى ٱللَّهِ ٱلْكَذِبَ ۖ وَأَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ ١٠٣ وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا۟ إِلَىٰ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ وَإِلَى ٱلرَّسُولِ قَالُوا۟ حَسْبُنَا مَا وَجَدْنَا عَلَيْهِ ءَابَآءَنَآ ۚ أَوَلَوْ كَانَ ءَابَآؤُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ شَيْـًۭٔا وَلَا يَهْتَدُونَ ١٠٤
مَا
جَعَلَ
اللّٰهُ
مِنْ
بَحِیْرَةٍ
وَّلَا
سَآىِٕبَةٍ
وَّلَا
وَصِیْلَةٍ
وَّلَا
حَامٍ ۙ
وَّلٰكِنَّ
الَّذِیْنَ
كَفَرُوْا
یَفْتَرُوْنَ
عَلَی
اللّٰهِ
الْكَذِبَ ؕ
وَاَكْثَرُهُمْ
لَا
یَعْقِلُوْنَ
۟
وَاِذَا
قِیْلَ
لَهُمْ
تَعَالَوْا
اِلٰی
مَاۤ
اَنْزَلَ
اللّٰهُ
وَاِلَی
الرَّسُوْلِ
قَالُوْا
حَسْبُنَا
مَا
وَجَدْنَا
عَلَیْهِ
اٰبَآءَنَا ؕ
اَوَلَوْ
كَانَ
اٰبَآؤُهُمْ
لَا
یَعْلَمُوْنَ
شَیْـًٔا
وَّلَا
یَهْتَدُوْنَ
۟

১০৩-১০৪ নং আয়াতের তাফসীর: ইমাম বুখারী (রঃ) ইবনে শিহাব (রঃ) ও সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব (রঃ)-এর মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন যে, বাহীরা ঐ জন্তুকে বলা হতো যার দুধ মানুষ দোহন করতো না এবং বলতো যে, এটা প্রতিমার নামে উৎসর্গ করা হয়েছে। ওর দুধ কেউ পানও করতো না। সায়েবা ঐ জন্তুকে বলা হতো যাকে মূর্তির নামে ছেড়ে দেয়া হতো। না ওর উপর কোন বোঝা চাপানো হতো, না ওকে সোয়ারী রূপে ব্যবহার করা হতো। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন- “আমি আমর ইবনে খুযাঈকে দেখেছি যে, তাকে পেটের ভরে টেনে হেঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। সেই সর্বপ্রথম জন্তুকে মূর্তির নামে ছেড়ে দেয়ার প্রথা চালু করেছিল।” “ওয়াসিলা ঐ উস্ত্রীকে বলা হতো যা প্রথমবার একটা নর বাচ্চা প্রসব করতো, তারপর পর্যায়ক্রমে দু'টো মাদী বাচ্চা প্রসব করতো। ঐ ধরনের উন্ত্রীকে প্রতিমার নামে ছেড়ে দেয়া হতো। আর হামী' ঐ বঁড় উটকে বলা হতো যার নসলে কয়েকটা বাচ্চা জন্মলাভ করার পর যখন ওর নসল খুব বৃদ্ধি পেতো তখন ওর দ্বারা বোঝা বহনের কাজ করা হতো না এবং ওকে সওয়ারী হিসেবেও ব্যবহার করা হতো না, বরং মূর্তির নামে ছেড়ে দেয়া হতো। আর ওর নাম তারা হামী’ রাখতো।ইমাম বুখারী (রঃ) যুহরী (রঃ), উরওয়া (রঃ) এবং হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর মাধ্যম দিয়ে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন- “আমি জাহান্নামকে দেখেছি যে, এক আগুন অন্য আগুনকে খেতে আছে, আর আমরকে ওর মধ্যে হেঁচড়িয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেই সর্বপ্রথম সায়েবা’র প্রথা চালু করেছিল।” ইমাম আহমাদ (রঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম সায়েবার প্রথা চালু করেছিল এবং প্রতিমা পূজায় লিপ্ত হয়েছিল। সে হচ্ছে আবু খুযাআ আমর ইবনে আমির। আমি তাকে পেটের ভরে হেঁচড়িয়ে টেনে নিয়ে যাওয়ার অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হতে দেখেছি।” আবদুর রাযযাক (রঃ) যায়েদ ইবনে আসলাম (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “সর্বপ্রথম সায়েবার প্রথা কে চালু করেছিল এবং হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর ধর্মকে পরিবর্তন করেছিল তা আমি জানি।” সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সে কে? তিনি উত্তরে বললেন :“সে ছিল বান্ কাব গোত্রের আমর ইবনে লুহাই। আমি দেখেছি যে, তাকে টেনে হেঁচড়ে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং তার দুর্গন্ধ অনান্য জাহান্নামবাসীদেরকে কষ্ট দিচ্ছে।” ‘বাহীরা বিদআতের আবিষ্কারক কে তাও আমি জানি।” সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সে কে?” তিনি জবাব দিলেনঃ সে ছিল বান্ মুদলাজ গোত্রের একটি লোক। তার দু’টি উষ্ট্রী ছিল। সে ঐ উষ্ট্রী দু'টির কান কেটে দিয়েছিল। প্রথমে সে ঐ উন্ত্রী দু'টির দুগ্ধ পান নিজের উপর হারাম করেছিল। কিন্তু কিছুদিন পর দুধ পান করতে শুরু করে। আমি তাকে জাহান্নামে দেখেছি। উস্ত্রী দু’টি তাকে তাদের মুখ দ্বারা কর্তন করতে রয়েছে এবং খুর দ্বারা দলিত করতে আছে। সেই হচ্ছে লুহাই ইবনে কামআর পুত্র। সে খুযাআর নেতৃস্থানীয় লোকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। জুরহুম গোত্রের পরে কা'বার মুতাওয়াল্লী তারাই হয়েছিল। তারাই সর্বপ্রথম দ্বীনে ইবরাহীম (আঃ)-এর পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। হেজাযে তারাই প্রতিমাপূজার সূচনা করেছিল। জনগণকে প্রতিমাপূজার দিকে ও ওদের নৈকট্য লাভের দিকে আহ্বানকারী তারাই ছিল। জন্তুসমূহের ব্যাপারে অজ্ঞতার যুগে সর্বপ্রথম হেজাযে বিদআতের প্রচলনকারী ছিল তারাই। যেমন মহান আল্লাহ সূরায়ে আনআমে এর বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন (আরবী) অর্থাৎ “ক্ষেতে উৎপাদিত শস্যের বা চতুষ্পদ জন্তুর মাত্র একটা অংশ তারা আল্লাহর নামে মনে করতো এবং অবশিষ্টগুলো প্রতিমার নামে মনে করতো।” (৬:১৩৭)। ‘বাহীরা সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ওটা ঐ উষ্ট্ৰী যে পাচবার বাচ্চা প্রসব করেছে। পঞ্চমবার সে নর বাচ্চা প্রসব করলে তারা তাকে যবেহ করতো। অতঃপর পুরুষ লোকেরা ওর গোশত ভক্ষণ করতো, কিন্তু স্ত্রীলোকেরা ওর গোশত খেতো না। আর ওটা মাদী বাচ্চা প্রসব করলে তারা ওর কান কেটে নিতে এবং বলতো, “এটা হচ্ছে বাহীরা।” সুদ্দী (রঃ) এবং অন্যান্যগণ প্রায় এরূপই বর্ণনা করেছেন। সায়েবা’ সম্পর্কে মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, ওটা ঐ প্রকারের বকরী যে প্রকারের সংজ্ঞা বাহীরা” সম্পর্কে দেয়া হয়েছে। পার্থক্য শুধু এই যে, যখন ওটা ছ’বার বাচ্চা প্রসব করতো তখন পর্যন্ত ওর অবস্থা একইরূপ থাকতো। অতঃপর ওটা একটি বা দুটি নর বাচ্চা প্রসব করতো তখন তারা ওকে যবেহ করতো এবং পুরুষ লোকেরাই শুধু ওর গোশত ভক্ষণ করতো, স্ত্রীলোকেরা ভক্ষণ করতো না। মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (রঃ) বলেন যে, ‘সায়েবা’ ঐ উস্ত্রীকে বলা হতো যে, যখন সে পর্যায়ক্রমে দশটি মাদী বাচ্চা প্রসব করতো তখন তাকে মূর্তির নামে ছেড়ে দেয়া হতো। তাকে সওয়ারী রূপে ব্যবহার করা হতো না, তার নোম কাটা হতো না এবং তার দুধও দোহন করা হতো না। কিন্তু অতিথি আসলে তাকে ঐ উষ্ট্রীর দুগ্ধ পান করানো যেতো। আবু রাওক (রঃ) বলেন যে, ‘সায়েবা ঐ উষ্ট্র বা ছাগল ইত্যাদিকে বলা হতো যে, মানুষ যখন কোন কাজে বের হতো এবং ঐ কাজ সমাধা হয়ে যেতো তখন ঐ জন্তুকে সায়েবা' বানানো হতো এবং মূর্তির নামে উৎসর্গ করা হতো, ওর বাচ্চাগুলোকে মূর্তির নামে উৎসর্গীকৃত মনে করা হতো। সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, কোন লোক যখন কোন উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে বের হতো, কিংবা রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করতো, অথবা তার মালধন অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেতো, তখন সে নিজের কিছু মাল প্রতিমার নামে উৎসর্গ করতো। এই মালে বা জন্তুতে কেউ কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে তাকে কঠিন শাস্তি দেয়া হতো।‘ওয়াসীলা সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ওটা ছিল ঐ ছাগী, যে সাতবার বাচ্চা প্রসব করতো এবং সপ্তমবারে সে মৃত নর বাচ্চা প্রসব করলে ঐ বকরীর গোশতে শুধু পুরুষেরাই শরীক হতে পারতো, স্ত্রীলোকেরা শরীক হতে পারতো না। কিন্তু সপ্তমবারে ঐ বকরীটি মাদী বাচ্চা প্রসব করলে ওকে তারা জীবিতাবস্থাতেই রাখতো। আর একই সাথে নর ও মাদী বাচ্চা প্রসব করলে দু'টোকেই জীবিতাবস্থায় ছেড়ে দেয়া হতো এবং তারা বলতো-মাদীটি নরটিকেও ওয়াসীলা বানিয়ে দিয়েছে। এখন এটাও আমাদের জন্যে হারাম। মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (রঃ) বলেন যে, ‘ওয়াসীলা’ ঐ বকরীকে বলা হতো যা পাঁচবারে দশটি মাদী বাচ্চা প্রসব করতে অর্থাৎ প্রতিবার দু’টি করে মাদী বাচ্চা প্রসব করতো। প্রতিবারের বাচ্চাদ্বয়কে ‘ওয়াসীলা' রূপে ছেড়ে দেয়া হতো। এরপর নর অথবা মাদী যে বাচ্চাই প্রসব করুক না কেন, শুধু পুরুষদেরকেই ওর হকদার মনে করা হতো, স্ত্রীদেরকে নয়। কিন্তু মৃত বাচ্চা প্রসব করলে পুরুষলোক ও স্ত্রীলোক সবাই অংশীদার হতো।‘হামী’ সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, কোন নরের মাধ্যমে দশটি বাচ্চা জন্মগ্রহণ করলে তাকেও প্রতিমার নামে ছেড়ে দেয়া হতো এবং ওটাকেই ‘হামী' বলা হতো। ওর উপর বোঝা চাপানো হতো না এবং ওর লোম কাটা হতো না। যে কোন লোকের ক্ষেতের ফসল সে খেতে পারতো এবং যে কোন প্রস্রবণ থেকে ঐ জন্তুটি পানি পান করতে পারতো। কেউই ওকে বাধা দিতো না। এ আয়াতের তাফসীরে এগুলো ছাড়া অন্য কিছুও বলা হয়েছে। মহান আল্লাহর- (আরবী) এ কথার ভাবার্থ এই যে, কাফিররা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে থাকে। আল্লাহ এগুলোকে শরীয়তের কাজরূপে নির্ধারণ করেননি এবং এগুলো তার নৈকট্য লাভের উপায়ও নয়। এটা মুশরিকদের আল্লাহ পাকের উপর মিথ্যারোপ ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা নিজেরাই ঐগুলোকে শরীয়তের পালনীয় কাজ বলে বরণ করে নিয়েছে। আর ওটাকেই তারা আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম মনে করেছে। অথচ ওটা কখনও তার নৈকট্য লাভের মাধ্যম হতে পারে। বরং তাদেরকে তাদের এ কৃতকর্মের শাস্তি ভোগ করতে হবে।(আরবী) অর্থাৎ যখন তাদেরকে বলা হয়-তোমরা আল্লাহর অহীর দিকে ও তাঁর রাসূলের দিকে এসো, তখন তারা বলে-আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের রীতি নীতির উপরই প্রতিষ্ঠিত রয়েছি, এটাই আমাদের জন্যে যথেষ্ট। তারা কি এটা বুঝে না যে, তাদের পূর্বপুরুষরাও বাতিল ও মিথ্যা রীতিনীতির উপর থাকতে পারে? তারাও হক ও সত্য থেকে দূরে ও হিদায়াত থেকে বঞ্চিত থাকতে পারে? সুতরাং কিরূপে তোমরা তাদের অনুসরণ করতে পার? সত্য ব্যাপার এটাই যে, একমাত্র ভ্রান্ত ও মূর্খ লোকেরাই এরূপ মন্তব্য করতে পারে।