34:12 34:13 আয়াতের গ্রুপের জন্য একটি তাফসির পড়ছেন
وَلِسُلَیْمٰنَ
الرِّیْحَ
غُدُوُّهَا
شَهْرٌ
وَّرَوَاحُهَا
شَهْرٌ ۚ
وَاَسَلْنَا
لَهٗ
عَیْنَ
الْقِطْرِ ؕ
وَمِنَ
الْجِنِّ
مَنْ
یَّعْمَلُ
بَیْنَ
یَدَیْهِ
بِاِذْنِ
رَبِّهٖ ؕ
وَمَنْ
یَّزِغْ
مِنْهُمْ
عَنْ
اَمْرِنَا
نُذِقْهُ
مِنْ
عَذَابِ
السَّعِیْرِ
۟
یَعْمَلُوْنَ
لَهٗ
مَا
یَشَآءُ
مِنْ
مَّحَارِیْبَ
وَتَمَاثِیْلَ
وَجِفَانٍ
كَالْجَوَابِ
وَقُدُوْرٍ
رّٰسِیٰتٍ ؕ
اِعْمَلُوْۤا
اٰلَ
دَاوٗدَ
شُكْرًا ؕ
وَقَلِیْلٌ
مِّنْ
عِبَادِیَ
الشَّكُوْرُ
۟

১২-১৩ নং আয়াতের তাফসীর: হযরত দাউদ (আঃ)-এর উপর আল্লাহ তা'আলা যে নিয়ামতরাজি অবতীর্ণ। করেছিলেন সেগুলোর বর্ণনা দেয়ার পর তাঁর পুত্র হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর উপর যেসব নিয়ামত নাযিল করেছিলেন সেগুলোর বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেনঃ “আমি বাতাসকে তার অধীন ও অনুগত করে দিয়েছিলাম। সে সকাল হতে হতেই এক মাসের পথ অতিক্রম করতো এবং এই পরিমাণ পথ সন্ধ্যায়ও অতিক্রম করতো। যেমন সিংহাসনে বসে দামেস্ক হতে লোক-লকর ও সাজ-সরঞ্জামসহ উড়ে গিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে ইমতাখারে পৌঁছে যেতেন। দ্রুতগামী অশ্বারোহীর জন্যে এটা এক মাসের পথ ছিল। অনুরূপভাবে সিরিয়া হতে সন্ধ্যায় উড়ে সন্ধ্যাতেই তিনি কাবুলে পৌঁছে যেতেন। মহান আল্লাহ্ তাঁর জন্যে তামাকে পানি করে দিয়ে এর নহর বইয়ে দিয়েছিলেন। যখন যে কাজে যে অবস্থায় লাগাতে ইচ্ছা করতেন, বিনা কষ্টে অতি সহজে সেই কাজে ওটাকে লাগাতে পারতেন। তাঁর সময় থেকেই তাম্র মানুষের কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সুদ্দী (রঃ) বলেছেন যে, তিনদিন পর্যন্ত এগুলো বয়ে চলেছিল। মহামহিমান্বিত আল্লাহ জ্বিনদেরকে তার অধীনস্থ ও অনুগত করে দিয়েছিলেন। তিনি যখন কোন কাজ করতে ইচ্ছা করতেন তখন সেই কাজ তাঁর সামনে তাদের দ্বারা করিয়ে নিতেন। কোন জ্বিন কাজে ফাকি দিলে সাথে সাথে তাকে তা জানিয়ে দেয়া হতো। মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেনঃ “জ্বিনদের তিনটি শ্রেণী আছে। একটি হলো পরনির্ভরশীল, দ্বিতীয়টি সর্প এবং তৃতীয় শ্রেণীটি ওরাই যারা সওয়ারীর উপর আরোহণ করে, আবার হেঁটেও চলে।” হাদীসটি অত্যন্ত গারীব বা দুর্বল।ইবনে নাআম (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, জ্বিনেরা তিন প্রকার। এক প্রকারের জন্যে আযাব ও সওয়াব আছে। দ্বিতীয়টি আকাশ ও পাতালে উড়ে বেড়ায় এবং তৃতীয় প্রকারের জ্বিনেরা হলো সাপ ও কুকুর। মানুষও তিন প্রকারের। এক প্রকারের মানুষকে আল্লাহ্ তা'আলা স্বীয় আরশের ছায়ায় স্থান দিবেন, যেদিন তার ছায়া ছাড়া অন্য কোন ছায়া থাকবে না। দ্বিতীয় প্রকারের মানুষ চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায়, বরং ওদের চেয়েও নিকৃষ্ট। তৃতীয় শ্রেণীর মানুষ আকারে মানুষ বটে, কিন্তু তাদের অন্তর শয়তানীতে পরিপূর্ণ। অর্থাৎ তারা মানবরূপী শয়তান।হযরত হাসান (রঃ) বলেছেন যে, জ্বিন ইবলীসের বংশধর এবং মানুষ হযরত আদম (আঃ)-এর বংশধর। উভয়ের মধ্যেই মুমিনও আছে, কাফিরও আছে। আযাব ও সওয়াব উভয়েই সমানভাবে প্রাপ্ত হবে। উভয়ের মধ্যেই ঈমানদার এবং লী-আল্লাহ্ও আছে আবার উভয়ের মধ্যেই বে-ঈমান এবং শয়তানও আছে।(আরবী) বলা হয় উৎকৃষ্ট ইমারতকে, বাড়ীর উৎকৃষ্টতম অংশকে এবং কোন সমাবেশের সভাপতির আসনকে। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, (আরবী) হলো ঐ সব ইমারত যেগুলো মহল্লার মধ্যে নিম্নমানের। যহহাক (রঃ)-এর মতে মসজিদের গম্বুজকে (আরবী) বলা হয় এবং বড় বড় ইমারত ও মসজিদকেও বলা হয়। ইবনে যায়েদ (রঃ) বলেন যে, বাড়ীর আসবাবপত্রকে (আরবী) বলা হয়।মূর্তিগুলো শীশার তৈরী ছিল। কাতাদাহ (রঃ) বলেছেন যে, মূর্তিগুলো ছিল শীশা ও মাটি দ্বারা নির্মিত।(আরবী) শব্দটি (আরবী) শব্দের বহুবচন। (আরবী) ঐ হাউজকে বলা হয় যাতে পানি আসতে থাকে। এগুলো পুকুরের মত ছিল। খুব বড় বড় লগন (খাদ্য রাখার বড় পাত্র) ছিল যাতে হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর বিরাট বাহিনীর জন্যে এক সাথে। খাদ্য তৈরী করা সম্ভব হয়। আর তার দ্বারা তাদের সামনে খাদ্য হাযির করাও সম্ভব হতে পারে। ডেগগুলো খুব বড় ও ভারি হওয়ার কারণে ওগুলোকে এদিক ওদিক সরানো ও নড়াননা-চড়ানো সম্ভবপর হতো না।তাদেরকে আল্লাহ তা'আলা বলে দিয়েছিলেনঃ হে দাউদ পরিবার! কৃতজ্ঞতার সাথে তোমরা কাজ করতে থাকো।(আরবী) শব্দটি (আরবী) ছাড়াই (আরবী) রূপে ব্যবহৃত হয়েছে অথবা (আরবী) হয়েছে এবং দুটোই হয়েছে উহ্যরূপে। এতে এই ইঙ্গিত রয়েছে যে, শোকর যেমন কথা ও নিয়ত দ্বারা হয়, তেমনি কাজ দ্বারাও হয়। যেমন কবি বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমার পক্ষ থেকে নিয়ামত তোমাদের তিন প্রকারের উপকার করতে পারে। (অর্থাৎ তিন প্রকারে আমি তোমাদের নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে পারি)। হাতের দ্বারা, মুখের দ্বারা ও লুক্কায়িত অন্তর দ্বারা। এখানে কবিও আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া তিন প্রকারে প্রকাশ করার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন যে, শুকরিয়া তিন প্রকারে আদায় করা চলে। অর্থাৎ কর্মের মাধ্যমে, মৌখিক কথার মাধ্যমে ও অন্তরের মাধ্যমে।হযরত আবু আবদির রহমান (রঃ) বলেন যে, নামাযও শোকর, রোযাও শোকর এবং প্রত্যেক ভাল আমল যা মহিমান্বিত আল্লাহর জন্যে করা হয় সবই শোকর। অর্থাৎ এগুলো সবই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যম। আর সর্বোৎকৃষ্ট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হচ্ছে হামদ বা আল্লাহর প্রশংসা-কীর্তন করা।মুহাম্মাদ ইবনে কা'ব কারাযী (রঃ) বলেন যে, আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হচ্ছে। তাকওয়া ও সৎ আমল। (এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত দাউদ (আঃ)-এর পরিবার দুই প্রকারেই আল্লাহ তা'আলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন। অর্থাৎ কথার দ্বারাও এবং কাজের দ্বারাও।হযরত সাবিত বানানী (রঃ) বলেনঃ হযরত দাউদ (আঃ) স্বীয় পরিবার, সন্তানাদি এবং নারীদের উপর সময়ের পাবন্দীর সাথে নফল নামায় এমনভাবে বন্টন করে দিয়েছিলেন যে, সর্বসময়ে কেউ না কেউ নামাযে রত থাকতেন।রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলার নিকট হযরত দাউদ (আঃ)-এর নামাযই ছিল সবেচেয়ে পছন্দনীয়। তিনি রাত্রির অর্ধাংশ শুইতেন, এক তৃতীয়াংশ দাড়িয়ে নামায পড়তেন এবং এক ষষ্ঠাংশ ঘুমাতেন। অনুরূপভাবে আল্লাহ তা'আলার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় রোযা ছিল হযরত দাউদ (আঃ)-এর রোষা। তিনি একদিন রোযা অবস্থায় থাকতেন এবং একদিন রোযাহীন বা বেরোযা অবস্থায় থাকতেন। তাঁর মধ্যে আর একটি উত্তম গুণ এই ছিল যে, তিনি ক্ষেত্র হতে কখনো পালাতেন না।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলছেন, (একদা) সুলাইমান ইবনে দাউদ (আঃ)-এর মাতা সুলাইমান (আঃ)-কে বলেনঃ “হে আমার প্রিয় বৎস! রাত্রে অধিক ঘুমাবে না। কেননা, রাত্রের অধিক ঘুম কিয়ামতের দিন মানুষকে দরিদ্র করে ছাড়বে।” (এ হাদীসটি আবু আবদিল্লাহ ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)এখানে ইবনে আবি হাতিম (রঃ) হযরত দাউদ (আঃ) সম্পর্কে একটি অত্যন্ত দীর্ঘ ও বিস্ময়কর আসার বর্ণনা করেছেন। তাতে এও আছে যে, হযরত দাউদ (আঃ) আল্লাহ তা'আলার নিকট আরয করেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! কিরূপে আমি আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো? কৃতজ্ঞতা প্রকাশ তো আপনার একটি নিয়ামত!” জবাবে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ যখন তুমি জানতে পারলে যে, সমস্ত নিয়ামত আমারই পক্ষ থেকে আসে তখনই তুমি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে।”মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই কৃতজ্ঞ। একটি একটি সত্য ও বাস্তব ব্যাপার সম্পর্কে খবর দান।