وَظَلَّلْنَا
عَلَیْكُمُ
الْغَمَامَ
وَاَنْزَلْنَا
عَلَیْكُمُ
الْمَنَّ
وَالسَّلْوٰی ؕ
كُلُوْا
مِنْ
طَیِّبٰتِ
مَا
رَزَقْنٰكُمْ ؕ
وَمَا
ظَلَمُوْنَا
وَلٰكِنْ
كَانُوْۤا
اَنْفُسَهُمْ
یَظْلِمُوْنَ
۟

উপরে বর্ণিত হয়েছিল যে, আল্লাহ তাদেরকে অমুক অমুক বিপদ হতে রক্ষা করেছিলেন। এখানে বর্ণিত হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ তাদেরকে অমুক অমুক সুখ সম্ভোগ দান করেছেন।(আরবি) শব্দটি (আরবি)শব্দের বহুবচন। এটা আকাশকে ঢেকে রাখে বলে একে (আরবি) বলা হয়ে থাকে। এটা একটা সাদা রঙ্গের মেঘ ছিল যা তীহের মাঠে তাদের উপর ছায়া করেছিল। যেমন সুনান-ই-নাসাঈ ইত্যাদি হাদীস গ্রন্থের মধ্যে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত একটি সুদীর্ঘ হাদীসে রয়েছে। ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বলেন যে, হযরত ইবনে উমার (রাঃ), রাবী' বিন আনাস (রঃ), আবু মুযলিজ (রঃ), যহহাক (রঃ) এবং সুদ্দী (রঃ) এটাই বলেছেন। হাসান (রঃ) এবং কাতাদাও (রঃ) এ কথাই বলেন। অন্যান্য লোক বলেন যে, এ মেঘ সাধারণ মেঘ হতে বেশী ঠাণ্ডা ও উত্তম ছিল। হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এটা ঐ মেঘ ছিল যার মধ্যে মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন আগমন করবেন। আবূ হুযাইফার (রঃ) এটাই উক্তি।এ আয়াতটির মধ্যে এর বর্ণনা রয়েছেঃ ‘এসব লোক কি এরই অপেক্ষা করছে যে, আল্লাহ তাআলা মেঘের মধ্যে আসবেন এবং তার ফেরেশতামণ্ডলী?' এটা ঐ মেঘ যার মধ্যে বদরের যুদ্ধে ফেরেশতাগণ অবতরণ করেছিলেন।‘মান্না’ ও ‘সালওয়া’যে মান্না, তাদেরকে দেয়া হতো তা গাছের উপর অবতারণ করা হতো। তারা সকালে গিয়ে তা জমা করতো এবং ইচ্ছে মত খেয়ে নিতো। ওটা আঠা জাতীয় জিনিস ছিল। কেউ কেউ বলেন যে, শিশিরের সঙ্গে ওর সাদৃশ্য ছিল। কাতাদাহ (রঃ) বলেন যে, শিলার মত মান্না তাদের ঘরে নেমে আসতো, যা দুধের চেয়ে সাদা ও মধু অপেক্ষা বেশী মিষ্ট ছিল। সুবেহ সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত অবতারিত হতে থাকতো। প্রত্যেক লোক তার বাড়ীর জন্যে ঐ পরিমাণ নিয়ে নিতো যা ঐ দিনের জন্যে যথেষ্ট হতো। কেউ বেশী নিলে তা পচে যেতো। শুক্রবারে তারা শুক্র ও শনি এ দু’দিনের জন্যে গ্রহণ করতো। কেননা, শনিবার ছিল তাদের জন্যে সাপ্তাহিক খুশীর দিন। সে দিন তারা জীবিকা অন্বেষণ করতো। রাবী' বিন আনাস (রঃ) বলেন যে, মান্না' ছিল মধু জাতীয় জিনিস যা তারা পানি দিয়ে মিশিয়ে পান করতো। শাবঈ (রঃ) বলেনঃ “তোমাদের এ মধু ঐ মান্না’ -এর সত্তর ভাগের একভাগ। মাত্র। কবিতাতেও মান্না মধু অর্থে এসেছে। মোটকথা এই যে, তা একটি জিনিস ছিল যা তারা বিনা পরিশ্রমে লাভ করতো। শুধু ওটাকেই খেলে ওটা ছিল খাওয়ার জিনিস, পানির সাথে মিশ্রিত করলে তা ছিল পানের জিনিস এবং অন্য কিছুর সঙ্গে মিশ্রিত করলে তা অন্য জিনিস হয়ে যেতো। কিন্তু এখানে মান্নার ভাবার্থ এটা নয়, বরং ভাবার্থ হচ্ছে পৃথক একটা খাওয়ার জিনিস।সহীহ বুখারী শরীফে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন মান্না ব্যাঙ-এর ছাতার অন্তর্গত এবং ওর পানি চক্ষু রোগের ঔষধ। ইমাম তিরমিযী (রঃ) একে হাসান বলেছেন। জামেউত তিরমিযীর মধ্যে আছেঃ “আজওয়াহ নামক মদীনার এক প্রকার খেজুর হচ্ছে বেহেশতী খাদ্য ও বিষক্রিয়া নষ্টকারী এবং ব্যাঙের ছাতা মান্না এর অন্তর্গত ও চক্ষুরোগে আরোগ্যদানকারী।" এ হাদীসটি হাসান গারীব। আরও বহু পন্থায় এটা বর্ণিত আছে। তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই-এর মধ্যে একটি হাদীস বর্ণিত আছে যে, ঐ গাছের ব্যাপারে সাহাবীগণের (রাঃ) মধ্যে মতভেদ রয়েছে যা মাটির উপরে হয় এবং যার মূল শক্ত হয় না। কেউ বললেন যে, ওটা ব্যাঙের ছাতা। তখন তিনি বললেন যে, ব্যাঙের ছাতা তো মান্না'-এর অন্তর্ভুক্ত এবং ওর পানি চক্ষু রোগের ঔষধ।' সালওয়া এক প্রকার পাখী, চড়ুই পাখি হতে কিছু বড়, বরং অনেকটা লাল। দক্ষিণা বায়ু প্রবাহিত হতো এবং ঐ পাখিগুলোকে জমা করে দিতো। বানী ইসরাঈল নিজেদের প্রয়োজন মত ওগুলো ধরতো এবং যবাহ করে খেতো। একদিন খেয়ে বেশী হলে তা শড়ে যেতো। শুক্রবারে তারা দুই দিনের জন্যে জমা করতো। কেননা, শনিবার তাদের জন্যে সাপ্তাহিক খুশীর দিন ছিল। সেই দিন তারা ইবাদতে মশগুল থাকতত এবং ঐদিন শিকার করা তাদের জন্যে নিষিদ্ধ ছিল। কোন কোন লোক বলেছেন যে, ঐ পাখিগুলো কবুতরের সমান ছিল। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে এক মাইল জায়গা ব্যাপী ঐ পাখিগুলোর বর্শা পরিমাণ উঁচু স্থূপ জমে যেতো। ঐ তীহের মাঠে ঐ দু'টো জিনিস তাদের খাদ্যরূপে প্রেরিত হতো, যেখানে তারা তাদের নবীকে বলেছিলঃ 'এ জঙ্গলে আমাদের আহারের ব্যবস্থা কিরূপে হবে?' তখন তাদের উপর ‘মান্না’ ও ‘সালওয়া' অবতারিত হয়েছিল। হযরত মূসাকে (আঃ) পানির জন্যে আবেদন জানানো হলে বিশ্বপ্রভু তাঁকে একটি পাথরের উপর লাঠি মারতে বলেন। লাঠি মারতেই ওটা হতে বারোটি ঝরণা প্রবাহিত হয়। বানী ইসরাঈলের বারোটি দল ছিল। প্রত্যেক দল নিজের জন্যে একটি করে ঝরণা ভাগ করে নেয়। সেই মরুময় প্রান্তরে ছায়া ছাড়া চলা কঠিন বলে তারা ছায়ার জন্যে প্রার্থনা জানায়। তখন মহান আল্লাহ তুর পাহাড় দ্বারা তাদের উপর ছায়া করে দেন। এখন বাকী থাকে বস্ত্র। আল্লাহর হুকুমে যে কাপড় তারা পরেছিল, তাদের দেহ বাড়ার সাথে সাথে কাপড়ও বাড়তে থাকলো। এক বছরের শিশুর কাপড় তার দেহ বেড়ে ওঠার সাথে সাথে বেড়ে যেতো। সেই কাপড় ছিড়তেও না ময়লাও হতো না। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন জায়গায় এসব নিয়ামতের বর্ণনা রয়েছে।হাজলী (রঃ) বলেন যে, সালওয়া’ মধুকে বলা হয়। কিন্তু এটা তার ভুল কথা। সাওরাজ (রঃ) এবং জাওহারী (রঃ) এই দু'জনও একথাই বলেছেন এবং এর প্রমাণরূপে আরব কবিদের কবিতা ও কতকগুলো আরবী বাকরীতি পেশ করেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন যে, এটা একটা ঔষধের নাম। কাসাঈ (রঃ) বলেন যে, (আরবি) শব্দটি এক বচন এবং এর বহু বচন (আরবি) এসে থাকে। আবার কেউ কেউ বলেন যে, এর এক বচন ও বহু বচনের একই রূপ। অর্থাৎ- (আরবি) শব্দটি। মোট কথা এই দু'টি আল্লাহ তা'আলার নিয়ামত ছিল, যা খাওয়া তাদের জন্যে বৈধ ছিল। কিন্তু ঐ লোকগুলো তার ঐ সব নিয়ামতের জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনি এবং ওটাই ছিল তাদের নাসের উপর অত্যাচার।সাহাবীদের (রাঃ) বৈশিষ্ট্য এবং তাদের মর্যাদাবানী ইসরাঈলের এ নক্সাকে সামনে রেখে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাহাবীদের (রাঃ) অবস্থার প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, তাঁরা কঠিন কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়েও এবং সীমাহীন দুঃখ কষ্ট সহ্য করেও রাসূলুল্লাহর (সঃ) আনুগত্যের উপর ও আল্লাহ তা'আলার ইবাদতের উপর অটল ছিলেন। না তাঁরা মুজিযা দেখতে চেয়েছিলেন, না দুনিয়ার কোন আরাম চেয়েছিলেন। তাকের যুদ্ধে তারা ক্ষুধার জ্বালায় যখন কাতর হয়ে পড়েন, তখন যার কাছে যেটুকু খাবার ছিল সবকে জমা করে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর নিকট হাজির করে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাদের এ খাবারে বরকতের জন্য প্রার্থনা করুন।” আল্লাহর রাসূল (সঃ) প্রার্থনা করেন। আল্লাহ তা'আলা সে প্রার্থনা মঞ্জুর করতঃ তাতে বরকত দান করেন। তাঁরা খেয়ে পরিতৃপ্ত হন এবং খাবারের পাত্র ভর্তি করে নেন। পিপাসায় তাদের প্রাণ শুকিয়ে গেলে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দু'আর বরকতে এক খণ্ড মেঘ এসে পানি বর্ষিয়ে দেয়। তারা নিজেরা পান করেন পশুকে পান করান এবং মশক, কলস ইত্যাদি ভর্তি করে নেন। সুতরাং সাহাবীদের এই অটলতা, দৃঢ়তা, পূর্ণ আনুগত্য এবং খাটি একত্ববাদীতা তাদেরকে হযরত মূসা (আঃ)-এর সহচরদের উপর নিশ্চিতরূপে মর্যাদা দান করেছে।