28:56 28:57 আয়াতের গ্রুপের জন্য একটি তাফসির পড়ছেন
اِنَّكَ
لَا
تَهْدِیْ
مَنْ
اَحْبَبْتَ
وَلٰكِنَّ
اللّٰهَ
یَهْدِیْ
مَنْ
یَّشَآءُ ۚ
وَهُوَ
اَعْلَمُ
بِالْمُهْتَدِیْنَ
۟
وَقَالُوْۤا
اِنْ
نَّتَّبِعِ
الْهُدٰی
مَعَكَ
نُتَخَطَّفْ
مِنْ
اَرْضِنَا ؕ
اَوَلَمْ
نُمَكِّنْ
لَّهُمْ
حَرَمًا
اٰمِنًا
یُّجْبٰۤی
اِلَیْهِ
ثَمَرٰتُ
كُلِّ
شَیْءٍ
رِّزْقًا
مِّنْ
لَّدُنَّا
وَلٰكِنَّ
اَكْثَرَهُمْ
لَا
یَعْلَمُوْنَ
۟

৫৬-৫৭ নং আয়াতের তাফসীরআল্লাহ তা'আলা স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে বলেনঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! কাউকে হিদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত করা তোমার শক্তির বাইরে। তোমার দায়িত্ব শুধু আমার বাণী জনগণের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়া। হিদায়াতের মালিক আমি। আমি যাকে ইচ্ছা হিদায়াত কবূল করার তাওফীক দান করে থাকি। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ তাদেরকে হিদায়াত করার দায়িত্ব তোমার নয়, বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করে থাকেন।” (২:২৭২) অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমার লিলা থাকলেও অধিকাংশ লোক মুমিন নয়।” (১২:১০৩) হিদায়াত লাভের হকদার কে এবং কে পথভ্রষ্ট হবার হকদার এর জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তা'আলারই রয়েছে।সহীহ বুখারী ও সহীহ্ মুসলিমে রয়েছে যে, এ আয়াতটি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চাচা আবু তালিবের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়, যিনি তাঁকে খুবই সাহায্য সহানুভূতি করেছিলেন। সর্বক্ষেত্রেই তিনি তার সহযোগিতা করে এসেছিলেন এবং আন্তরিকভাবে তাকে ভালবাসতেন। কিন্তু তার এ ভালবাসা ছিল আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে প্রকৃতিগত। এ ভালবাসা শরীয়তগত ছিল না। যখন তাঁর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে ইসলামের দাওয়াত দেন। তিনি তাকে ঈমান আনয়নের ব্যাপারে উৎসাহিত করেন। কিন্তু তাঁর তকদীরের লিখন এবং আল্লাহ পাকের ইচ্ছা জয়যুক্ত হয়। তিনি ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান এবং কুফরীর উপরই অটল থাকেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার মৃত্যুর সময় তাঁর নিকট আগমন করেন। আবু জেহেল ও আবদুল্লাহ ইবনে উবাইও তাঁর পাশে উপবিষ্ট ছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেনঃ “হে আমার প্রিয় চাচা! আপনি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু পাঠ করুন। এই কারণে আমি আল্লাহর নিকট আপনার জন্যে সুপারিশ করবো।” তখন আবু জেহেল ও আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তাঁকে বলেঃ “হে আবু তালিব! তুমি কি তোমার পিতা আবদুল মুত্তালিবের ধর্ম হতে ফিরে যাবে?” এভাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বুঝাতে থাকেন এবং তারা দু'জন তাকে ফিরাতে থাকে। অবশেষে তার মুখ দিয়ে শেষ কথা বের হয়ঃ “আমি এ কালেমা পাঠ করবো না, আমি আবদুল মুত্তালিবের ধর্মের উপরই থাকলাম।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বললেনঃ “আচ্ছা, আমি আপনার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা। করতে থাকবো। তবে যদি আল্লাহ আমাকে এর থেকে বিরত রাখেন এবং নিষেধ। করে দেন তাহলে অন্য কথা।” তৎক্ষণাৎ এ আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ (আরবি) অর্থাৎ “নবী (সঃ) ও মুমিনদের জন্যে মোটেই উচিত নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে যদিও তারা তাদের নিকটতম আত্মীয় হয়।” (৯:১১৩) আর আবূ তালিবের ব্যাপারে (আরবি) এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (এটা ইমাম মুসলিম (রঃ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন) হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু তালিবের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বলেনঃ “হে চাচা! লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করুন, আমি কিয়ামতের দিন এর সাক্ষ্য দান করবো।” উত্তরে আবূ তালিব বলেনঃ “হে আমার ভ্রাতুস্পুত্র! আমার যদি আমার বংশ কুরায়েশদের বিদ্রুপ বলে ভয় না থাকতো যে, আমি মৃত্যুর ভয়ে ভীত হয়ে এ কালেমা পাঠ করছি তবে অবশ্যই আমি এটা পাঠ করতাম। আর এভাবে তোমার চক্ষু ঠাণ্ডা করতাম।” ঐ সময় আল্লাহ তা'আলা .. (আরবি)-এ আয়াত অবতীর্ণ করেন। (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেন)অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, শেষ পর্যন্ত তিনি কালেমা পড়তে অস্বীকার করেন এবং পরিষ্কারভাবে বলে দেন- “হে আমার ভ্রাতুস্পুত্র! আমি তো আমার বড়দের ধর্মের উপর রয়েছি।” তাঁর মৃত্যু একথারই উপর হয় যে, তিনি আবদুল মুত্তালিবের মাযহাবের উপর রয়েছেন।হযরত সাঈদ ইবনে আবি রাশেদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রোমক সম্রাট কায়সারের দূত যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দরবারে হাযির হয় এবং কায়সারের পত্রখানা নবী (সঃ)-এর সামনে পেশ করে তখন নবী (সঃ) তা নিজের ক্রোড়ে রেখে দেন। অতঃপর দূতকে বলেনঃ “তুমি কোন গোত্রের লোক?” সে উত্তরে বলেঃ “আমি তানূখ গোত্রের লোক।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেনঃ “তুমি কি চাও যে, তুমি তোমার পিতা হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর দ্বীনের উপর এসে যাবে?” জবাবে সে বলেঃ “আমি যে কওমের দূত, যে পর্যন্ত না আমি তাদের পয়গামের জবাব তাদের কাছে পৌছাতে পারবো, তাদের মাযহাব পরিত্যাগ করতে পারবো না।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) মুচকি হেসে তার সাহাবীদের দিকে তাকিয়ে (আরবি) এই আয়াতটিই পাঠ করেন। (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)মুশরিকরা তাদের ঈমান আনয়ন না করার একটি কারণ এও বর্ণনা করতো যে, তারা যদি রাসূলুল্লাহ (সঃ) কর্তৃক আনীত হিদায়াত মেনে নেয় তবে তাদের ভয় হচ্ছে যে, এই ধর্মের বিরোধী লোকেরা যে তাদের চতুর্দিকে রয়েছে তারা তাদের শত্রু হয়ে যাবে, তাদেরকে কষ্ট দেবে এবং তাদেরকে ধ্বংস করে ফেলবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, এটাও তাদের ভুল কৌশল। আল্লাহ পাক তো তাদেরকে এক নিরাপদ হারামে অর্থাৎ মক্কা শরীফে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, যেখানে দুনিয়ার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত নিরাপত্তা বিরাজ করছে। তাহলে কুফরীর অবস্থায় যখন তারা সেখানে নিরাপত্তা লাভ করছে, তখন আল্লাহর দ্বীন গ্রহণ করলে কি করে ঐ নিরাপত্তা উঠে যেতে পারে? এটাতো ঐ শহর যেখানে তায়েফ ইত্যাদি বিভিন্ন শহর হতে ফলমূল, ব্যবসার মাল ইত্যাদি বহুল পরিমাণে আমদানী হয়ে থাকে। সমস্ত জিনিস এখানে অতি সহজে চলে আসে এবং এভাবে মহান আল্লাহ তাদেরকে রিযক পৌঁছিয়ে থাকেন। কিন্তু তাদের অধিকাংশই এটা জানে না। এজন্যেই তারা এরূপ বাজে ওর পেশ করে থাকে। বর্ণিত আছে যে, এ কথা যে বলেছিল তার নাম ছিল হারিস ইবনে আমির ইবনে নাওফিল।

আপনার Quran.com অভিজ্ঞতা সর্বাধিক করুন!
এখনই আপনার সফর শুরু করুন:

%