27:36 27:37 আয়াতের গ্রুপের জন্য একটি তাফসির পড়ছেন
فَلَمَّا
جَآءَ
سُلَیْمٰنَ
قَالَ
اَتُمِدُّوْنَنِ
بِمَالٍ ؗ
فَمَاۤ
اٰتٰىنِ
اللّٰهُ
خَیْرٌ
مِّمَّاۤ
اٰتٰىكُمْ ۚ
بَلْ
اَنْتُمْ
بِهَدِیَّتِكُمْ
تَفْرَحُوْنَ
۟
اِرْجِعْ
اِلَیْهِمْ
فَلَنَاْتِیَنَّهُمْ
بِجُنُوْدٍ
لَّا
قِبَلَ
لَهُمْ
بِهَا
وَلَنُخْرِجَنَّهُمْ
مِّنْهَاۤ
اَذِلَّةً
وَّهُمْ
صٰغِرُوْنَ
۟

৩৬-৩৭ নং আয়াতের তাফসীরবিলকীস খুবই মূল্যবান উপঢৌকন হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর নিকট প্রেরণ করলো। যেমন সোনা, মণি-মাণিক্য, বহু সংখ্যক সোনার ইষ্টক, সোনার পাত্র ইত্যাদি। কেউ কেউ বলেন যে, কিছু ছেলেকে মেয়ের পোশাকে এবং কতকগুলো মেয়েকে ছেলের পোশাকে পাঠিয়েছিল। আর বলেছিলঃ “যদি হ্যরত সুলাইমান (আঃ) তাদেরকে চিনে নিতে পারেন তবে তাকে নবী বলে মেনে নেয়া হবে।”যখন তারা হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর নিকট পৌঁছে তখন তিনি তাদের সকলকেই অযু করার নির্দেশ দেন। মেয়েরা তো বরতন হতে পানি ঢেলে হাত ধৌত করলো, আর ছেলেরা বরতনের মধ্যেই হাত ডুবিয়ে দিয়ে পানি নিলো। এর দ্বারা হযরত সুলাইমান (আঃ) তাদের চিনে নিয়ে পৃথক পৃথক করে দিলেন আর বললেনঃ “এরা ছেলে এবং এরা মেয়ে।”অন্য কেউ কেউ বলেছেন যে, মেয়েরা প্রথমে তাদের হাতের ভিতরের অংশ। ধুয়েছিল এবং ছেলেরা প্রথমে তাদের হাতের বাইরের অংশ ধৌত করেছিল। এইভাবে তিনি তাদেরকে পৃথক পৃথকভাবে চিনতে পেরেছিলেন।এটাও বর্ণিত আছে যে, তাদের মধ্যে একটি দল নির্দেশ প্রাপ্তির পর হাত ধুতে শুরু করে এবং অঙ্গুলী পর্যন্ত ধৌত করে। আর অন্য দল তাদের বিপরীত হাতের অঙ্গুলী হতে ধুতে শুরু করে হাতের কনুই পর্যন্ত নিয়ে যায়। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। এটাও বর্ণিত আছে যে, বিলকীস হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর নিকট একটি বরতন পাঠিয়েছিল এবং বলে পাঠিয়েছিল যে, তিনি যেন বরতনটিকে এমন পানি দ্বারা পূর্ণ করেন যা যমীনেরও নয় এবং আসমানেরও নয়। তখন হযরত সুলাইমান (আঃ) ঘোড়া-দৌড়ের ব্যবস্থা করেন। ঘোড়াগুলোর ঘর্ম বের হলে তিনি ঐ ঘর্ম দ্বারা বরতনটি পূর্ণ করে দেন। প্রায় এ সবগুলোই বানী ইসরাঈলের উক্তি। এখন এগুলোর মধ্যে কোনটা সত্য ও কোনটা মিথ্যা তা একমাত্র আল্লাহ পাকই জানেন। কুরআন কারীমের প্রকাশ্য শব্দ দ্বারা তো জানা যাচ্ছে যে, হযরত সুলাইমান (আঃ) ঐ রাণীর উপঢৌকনের প্রতি ভ্রুক্ষেপই করেননি। বরং তা দেখা মাত্রই বলেছিলেনঃ “তোমরা কি আমাকে ধন-সম্পদ ঘুষ দিয়ে নিজেদেরকে শিরকের উপর বাকী রাখার ইচ্ছা করছো? এটা কখনো সম্ভব নয়। আল্লাহ তা'আলা আমাকে বহু কিছু দিয়েছেন। রাজ্য-রাজত্ব, ধন-মাল, সৈন্য-সামন্ত সবকিছুই আমার কাছে বিদ্যমান রয়েছে। যে কোন দিক দিয়েই আমি তোমাদের অপেক্ষা উত্তম অবস্থায় রয়েছি। তোমরা এগুলো নিয়ে তোমাদের লোকদের নিকট ফিরে যাও। জেনে রেখো যে, আমি অবশ্যই তোমাদের বিরুদ্ধে নিয়ে আসবো এক সৈন্যবাহিনী যার মুকাবিলা করার শক্তি তোমাদের নেই। আমি অবশ্যই তোমাদেরকে তথা হতে বহিষ্কার করবো লাঞ্ছিতভাবে এবং তোমরা হবে অবনমিত।এটাও বলা হয়েছে যে, বিলকীসের দূতেরা হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর নিকট পৌঁছার পূর্বেই তাঁর নির্দেশক্রমে জ্বিনেরা এক হাজার প্রাসাদ নির্মাণ করে। যখন দূতেরা রাজধানীতে পৌঁছে তখন প্রাসাদগুলো দেখে তো তাদের আক্কেল গুড়ম! তারা বলেঃ “বাদশাহ তো আমাদের উপঢৌকনগুলো ঘৃণার চক্ষে দেখবেন। এখানে তো সোনা মাটির সমানও মর্যাদা রাখে না।” এর দ্বারা এটাও প্রমাণিত হলো যে, বিদেশী লোকদের উদ্দেশ্যে কিছু লৌকিকতা করা বাদশাহদের জন্যে জায়েয।এরপর হযরত সুলাইমান (আঃ) দূতদেরকে বললেনঃ “তোমরা এই উপঢৌকনগুলো ফিরিয়ে নিয়ে যাও এবং তাদেরকে গিয়ে বলো যে, তারা যেন মুকাবিলার জন্যে প্রস্তুত হয়ে যায়। জেনে রেখো যে, আমি তাদের বিরুদ্ধে এমন এক সেনাবাহিনী নিয়ে আসবো যাদের মুকাবিলা করার শক্তি তাদের নেই। আমি অবশ্যই তাদেরকে তথা হতে বহিষ্কার করবো লাঞ্ছিতভাবে। আমি তাদের সিংহাসন ও রাজমুকুটকে পদদলিত করবো।”যখন দূতেরা উপঢৌকনগুলো ফিরিয়ে নিয়ে বিলকীসের নিকট গিয়ে পৌঁছলো এবং শাহী পয়গাম তাকে জানিয়ে দিলো তখন হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর নবুওয়াত সম্পর্কে তার আর কোন সন্দেহ থাকলো না। সুতরাং সমস্ত সৈন্য-সামন্ত ও প্রজাসহ সে মুসলমান হয়ে গেল এবং সে তার সেনাবাহিনীকে সাথে নিয়ে হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর নিকট হাযির হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো। যখন হযরত সুলাইমান (আঃ) বিলকীসের সংকল্পের কথা জানতে পারলেন তখন তিনি অত্যন্ত খুশী হলেন এবং আল্লাহ তা'আলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন।