19:96 19:98 আয়াতের গ্রুপের জন্য একটি তাফসির পড়ছেন
ان الذين امنوا وعملوا الصالحات سيجعل لهم الرحمان ودا ٩٦ فانما يسرناه بلسانك لتبشر به المتقين وتنذر به قوما لدا ٩٧ وكم اهلكنا قبلهم من قرن هل تحس منهم من احد او تسمع لهم ركزا ٩٨
إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ سَيَجْعَلُ لَهُمُ ٱلرَّحْمَـٰنُ وُدًّۭا ٩٦ فَإِنَّمَا يَسَّرْنَـٰهُ بِلِسَانِكَ لِتُبَشِّرَ بِهِ ٱلْمُتَّقِينَ وَتُنذِرَ بِهِۦ قَوْمًۭا لُّدًّۭا ٩٧ وَكَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُم مِّن قَرْنٍ هَلْ تُحِسُّ مِنْهُم مِّنْ أَحَدٍ أَوْ تَسْمَعُ لَهُمْ رِكْزًۢا ٩٨
اِنَّ
الَّذِیْنَ
اٰمَنُوْا
وَعَمِلُوا
الصّٰلِحٰتِ
سَیَجْعَلُ
لَهُمُ
الرَّحْمٰنُ
وُدًّا
۟
فَاِنَّمَا
یَسَّرْنٰهُ
بِلِسَانِكَ
لِتُبَشِّرَ
بِهِ
الْمُتَّقِیْنَ
وَتُنْذِرَ
بِهٖ
قَوْمًا
لُّدًّا
۟
وَكَمْ
اَهْلَكْنَا
قَبْلَهُمْ
مِّنْ
قَرْنٍ ؕ
هَلْ
تُحِسُّ
مِنْهُمْ
مِّنْ
اَحَدٍ
اَوْ
تَسْمَعُ
لَهُمْ
رِكْزًا
۟۠

৯৬-৯৮ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, যারা একত্ববাদে বিশ্বাসী এবং যাদের আমলে সুন্নাতের নুর রয়েছে, তিনি তাঁর বান্দাদের অন্তরে তাদের মুহব্বত সৃষ্টি করে দেন। যেমন হাদীস শরীফে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে মুহব্বত করেন তখন হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) ডেকে বলেনঃ “আমি অমুক বান্দাকে মুহব্বত করি, সুতরাং তুমিও তাকে মুহব্বত কর। তখন জিবরাঈলও (আঃ) তাকে মুহববত করেন। তারপর জিবরাঈল (আঃ) আকাশে ঘোষণা দিয়ে বলেনঃ “আল্লাহ অমুক বান্দাকে মুহব্বত করেন, সুতরাং তোমরাও তাকে মুহব্বত কর।” তখন সমস্ত আকাশবাসী তাকে মুহব্বত করে। তারপর দুনিয়াবাসীর অন্তরে তার কবুলিয়ত রেখে দেয়া হয়। আর যখন কোন বান্দাকে দুশমন হিসেবে জানেন তখন জিবরাঈলকে ডেকে বলেনঃ “আমি অমুক বান্দাকে ঘৃণা করেছি, সুতরাং তুমিও তাকে ঘৃণা কর।” তখন জিবরাঈল (আঃ) তাকে শত্রু ভাবেন এবং আকাশবাসীর নিকট এই ঘোষণা করেন যে, আল্লাহ অমুক বান্দাকে দুশমন ভেবেছেন, সুতরাং তোমরাও তাকে দুশমন মনে কর।” তখন সবাই তাকে দুশমন মনে করে। তারপর পৃথিবীতে তার শত্রুতাভাব মানুষের অন্তরে সৃষ্টি করে দেয়া হয়।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ), ইমাম বুখারী (রঃ) এবং ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “যে বান্দা মহামহিমান্বিত আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে এবং তার সন্তোষের কাজে নিমগ্ন থাকে, তখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ হযরত জিবরাঈলকে (আঃ) ডেকে বলেনঃ “আমার অমুক বান্দা আমাকে সন্তুষ্ট করতে চায়। জেনে রেখো যে, আমি তার প্রতি সন্তুষ্ট আছি। তার উপর আমি আমার রহমত নাযিল করতে শুরু করেছি।" তখন হযরত জিবরাঈল (আঃ) ঘোষণা করেনঃ “অমুকের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়েছে। তারপর আরশ বহনকারী ফেরেশতারাও ঘোষণা করেন। এরপর তাদের পার্শ্ববর্তী ফেরেশতাগণও ঘোষণা করে দেন। মোট কথা সপ্ত আকাশে এই শব্দ গুঞ্জরিত হয়। তারপর যমীনে তার কবুলিয়ত রেখে দেয়া হয়। (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে। এটা গারীব বা দুর্বল হাদীস) এ ধরনের আর একটি গারীব হাদীস মুসনাদে আহমদেই রয়েছে, যাতে এও আছে যে, প্রেম ও প্রসিদ্ধি কারো নিকৃষ্টতা ও উৎকৃষ্টতার সাথে এটা আকাশ থেকে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে অবতীর্ণ হয়। মুসনাদে আবি হাতিমে এই প্রকারের হাদীসের পরে রাসূলুল্লাহর (সঃ) কুরআনকারীমের এই আয়াতটি পড়াও বর্ণিত আছে। সুতরাং এই আয়াতের ভাবার্থ এই হলো যে, ভাল আমলকারী ঈমানদারের সাথে আল্লাহ তাআলা মুহব্বত করে থাকেন এবং যমীনের উপরেও তার মুহব্বত ও কবলিয়ত অবতীর্ণ হতে থাকে। মু'মিন তাকে ভালবাসতে থাকে। তার ভাল আলোচনা হয় এবং তার মৃত্যুর পরেও তার উত্তম খ্যাতি অবশিষ্ট থেকে যায়।হারাম ইবনু হিব্বান (রঃ) বলেন যে, যে বান্দা সত্য ও আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর দিকে ঝুঁকে পড়ে, আল্লাহ তাআলা মু'মিনদের অন্তরকে তার দিকে ঝুঁকিয়ে দেন এবং তারা তাকে ভালবাসতে শুরু করে দেয়।হযরত উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) বলেন যে, বান্দা যে ভাল-মন্দ কাজ করে, আল্লাহ তাকে তারই ঐ চাদর দ্বারা ঢেকে দেন।হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেনঃ একটি লোক ইচ্ছা করে যে, সে আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে করবে যেন জনগণের মধ্যে তার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর সে আল্লাহ তাআলার ইবাদত শুরু করে দেয়। দেখা যায় যে, সে মসজিদে সবারই আগে যায় এবং সবারই পরে বেরিয়ে আসে। এভাবে সাত মাস কেটে যায়। কিন্তু সে শুনতে পায় যে, লোকেরা তাকে ‘রিয়াকার' (লোক দেখানো ইবাদতকারী) বলছে। এই অবস্থা দেখে সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে যে, সে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই আমল করবে। অতঃপর সে আন্তরিকতার সাথে আমল শুরু করে দেয়। ফল এই দাড়ায় যে, অল্পদিনের মধ্যেই সমস্ত লোক বলতে শুরু করেঃ অমুক ব্যক্তির উপর আল্লাহ তাআলা রহম করুন! এইভাবে সে প্রকৃত দ্বীনদার ও আল্লাহ ভক্ত হয়ে যায়। তাফসীরে ইবনু জারীরে রয়েছে যে, এই আয়াতটি হযরত আবদুর রহমান ইবনু আউফের (রাঃ) ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। (কিন্তু এই উক্তিটি সঠিক নয়। কেননা, এই পূর্ণ সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এর কোন আয়াত মদীনায় অবতীর্ণ হওয়া প্রমাণিত নয়। আর ইমাম সাহেব (রঃ) যে হাদীসটি আনয়ন করেছেন, সনদের দিক দিয়ে সেটাও বিশুদ্ধ নয়। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী)মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি এই কুরআনকে তোমার ভাষায় অর্থাৎ আরবী ভাষায় সহজ করে দিয়েছি। এই ভাষা বাকরীতি ও বাক্যালংকারের দিক দিয়ে সর্বোত্তম ভাষা। হে নবী (সঃ)! এই কুরআনকে আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করার কারণ এই যে যেন তুমি খোদাভীরু ও ঈমানদার লোকদেরকে আল্লাহর সুসংবাদ শুনিয়ে দিতে পার। আর যারা বিতণ্ডাপ্রবণ ও সত্য থেকে বিমুখ তাদেরকে আল্লাহর পাকড়াও ও তার শাস্তি থেকে সতর্ক করতে পার। যেমন কুরায়েশ কাফিরদেরকে। মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তাদের পূর্বে আমি কত মানব গোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দিয়েছি যারা আল্লাহর আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং নবীদেরকে অস্বীকার করেছিল। তুমি তাদের কাউকেও দেখতে পাওকি? অথবা ক্ষীণতম শব্দও শুনতে পাও কি? অর্থাৎ তাদের কেউই অবশিষ্ট নেই, সবাই ধ্বংস হয়ে গেছে। (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে হালকা ও ধীর শব্দ।