قال لا ياتيكما طعام ترزقانه الا نباتكما بتاويله قبل ان ياتيكما ذالكما مما علمني ربي اني تركت ملة قوم لا يومنون بالله وهم بالاخرة هم كافرون ٣٧
قَالَ لَا يَأْتِيكُمَا طَعَامٌۭ تُرْزَقَانِهِۦٓ إِلَّا نَبَّأْتُكُمَا بِتَأْوِيلِهِۦ قَبْلَ أَن يَأْتِيَكُمَا ۚ ذَٰلِكُمَا مِمَّا عَلَّمَنِى رَبِّىٓ ۚ إِنِّى تَرَكْتُ مِلَّةَ قَوْمٍۢ لَّا يُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَهُم بِٱلْـَٔاخِرَةِ هُمْ كَـٰفِرُونَ ٣٧
قَالَ
لَا
یَاْتِیْكُمَا
طَعَامٌ
تُرْزَقٰنِهٖۤ
اِلَّا
نَبَّاْتُكُمَا
بِتَاْوِیْلِهٖ
قَبْلَ
اَنْ
یَّاْتِیَكُمَا ؕ
ذٰلِكُمَا
مِمَّا
عَلَّمَنِیْ
رَبِّیْ ؕ
اِنِّیْ
تَرَكْتُ
مِلَّةَ
قَوْمٍ
لَّا
یُؤْمِنُوْنَ
بِاللّٰهِ
وَهُمْ
بِالْاٰخِرَةِ
هُمْ
كٰفِرُوْنَ
۟

ইউসুফ বললেন, ‘তোমাদেরকে যে খাদ্য দেয়া হয় তা আসার আগে আমি তোমাদেরকে স্বপ্নের তাৎপর্য জানিয়ে দেব [১]। আমি যা তোমাদেরকে বলব তা, আমার রব আমাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা থেকে বলব। নিশ্চয় আমি বর্জন করেছি সে সম্প্রদায়ের ধর্মমত যারা আল্লাহ্র উপর ঈমান আনে না। আর যারা আখিরাতের সাথে কুফরীকারী’।

[১] আলোচ্য আয়াতসমূহে ইউসুফ ‘আলাইহিস্ সালাম-এর কাহিনীর একটি প্রাসঙ্গিক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। ঘটনা এই যে, ইউসুফ ‘আলাইহিস্ সালাম-এর নিষ্পাপ চরিত্র ও পবিত্রতা দিবালোকের মত ফুটে উঠা সত্ত্বেও আযীযে-মিসর ও তার স্ত্রী লোক-নিন্দা বন্ধ করার উদ্দেশ্যে কিছু দিনের জন্য ইউসুফ ‘আলাইহিস্ সালাম-কে কারাগারে প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এটা প্রকৃতপক্ষে ইউসুফ ‘আলাইহিস্ সালাম-এর দো’আ ও বাসনার বাস্তব রূপায়ণ ছিল। কেননা, আযীযে-মিসরের গৃহে বাস করে চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা করা কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ইউসুফ ‘আলাইহিস্ সালাম কারাগারে পৌঁছলে সাথে আরো দু’জন অভিযুক্ত কয়েদীও কারাগারে প্রবেশ করল। তাদের একজন বাদশাহকে মদ্যপান করাত এবং অপরজন বাবুর্চি ছিল। তাদের বিরুদ্ধে বাদশাহর খাদ্যে বিষ মিশ্রিত করার অভিযোগ ছিল। মোকাদ্দমার তদন্ত চলছিল বলে তাদেরকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছিল। ইউসুফ ‘আলাইহিস্ সালাম কারাগারে প্রবেশ করে নবীসুলভ চরিত্র, দয়া ও অনুকম্পার কারণে সব কয়েদীর প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন এবং সাধ্যমত তাদের দেখাশোনা করতেন। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার সেবা-শুশ্রুষা করতেন। কাউকে চিন্তিত ও উৎকণ্ঠিত দেখলে তাকে সান্ত্বনা দিতেন। ধৈর্য শিক্ষা এবং মুক্তির আশা দিয়ে তার হিম্মত বাড়াতেন। নিজে কষ্ট করে অপরের সুখ-শান্তি নিশ্চিত করতেন এবং আল্লাহ্‌র ইবাদাতে মশগুল থাকতেন। তার এহেন অবস্থা দেখে কারাগারের সব কয়েদী তার ভক্ত হয়ে গেল। তিনি তাদেরকে বলেছিলেন যে, আমি স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে জানি। ইউসুফ ‘আলাইহিস্ সালাম-এর সাথে কারাগারে প্রবেশকারী দু’জন কয়েদী একদিন বললঃ আমাদের দৃষ্টিতে আপনি একজন সৎ ও মহানুভব ব্যক্তি। তাই আপনার কাছে আমরা স্বপ্নের ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করতে চাই। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা ও অন্যান্য তাফসীরবিদগণ বলেনঃ তারা বাস্তবিকই এ স্বপ্ন দেখেছিল। আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেনঃ প্রকৃত স্বপ্ন ছিল না। শুধু ইউসুফ ‘আলাইহিস্ সালাম-এর মহানুভবতা ও সততা পরীক্ষার উদ্দেশ্যে স্বপ্ন রচনা করা হয়েছিল। [দেখুন, কুরতুবী]

মোটকথা, তাদের একজন অর্থাৎ যে ব্যক্তি বাদশাহকে মদ্যপান করাত, সে বললঃ আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আঙ্গুর থেকে শরাব বের করছি। দ্বিতীয় জন অর্থাৎ বাবুর্চি বললঃ আমি দেখি যে, আমার মাথায় রুটিভর্তি একটি ঝুড়ি রয়েছে। তা থেকে পাখিরা ঠুকরে ঠুকরে আহার করছে। তারা উভয় স্বপ্নের ব্যাখ্যা বলে দিতে অনুরোধ জানাল। এখানে ইউসুফ ‘আলাইহিস্ সালাম-কে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করা হয়েছে; কিন্তু তিনি নবীসুলভ ভঙ্গিতে এ প্রশ্নের উত্তর দানের পূর্বে ঈমানের দাওয়াত ও দ্বীন প্রচারের কাজ আরম্ভ করে দিলেন। প্রচারের মূলনীতি অনুযায়ী প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে সর্বপ্রথম তাদের অন্তরে আস্থা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে তিনি বললেন যে, যা কিছুই তোমরা স্বপ্নে দেখ না কেন আমি তার তা'বীর জানি। তোমাদের কাছে প্রাত্যহিক যে খাবার আসে তা আসার পূর্বেই আমি তোমাদেরকে তোমাদের স্বপ্নের তা'বীর বলে দেব। [ইবন কাসীর; সা’দী] কোন কোন মুফাসসির এর অর্থ করেছেন ভিন্ন রকম। তারা বলেনঃ এর অর্থ আমি তোমাদের যাবতীয় স্বপ্নের তা'বীর বলে দিতে পারি। তারপর তিনি একথার প্রতি তাদের আস্থা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে একটি মু'জিযা উল্লেখ করলেন যে, তোমাদের জন্য প্রত্যহ যে খাদ্য তোমাদের বাসা থেকে কিংবা অন্য কোন জায়গা থেকে আসে, তা আসার আগেই আমি তোমাদেরকে খাদ্যের প্রকার, গুণাগুণ, পরিমাণ ও সময় সম্পর্কে বলে দেই। তারা বলল, বলে দিন। তিনি বললেন, তোমাদের জন্য এরকম এরকম খাবার আসবে। বাস্তবেও তাই ঘটে। আর এটা ছিল আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে তাকে গায়েবী বিষয় জানিয়ে দেয়ার অন্তর্ভুক্ত। [কুরতুবী]