undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
٣

হযরত লোকমান নবী ছিলেন কি না এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশ গুরুজনের মতে তিনি নবী ছিলেন না; বরং পরহেযগার, অলী এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দা ছিলেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একজন হাবশী ক্রীতদাস ও ছুতার ছিলেন। হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব (রঃ) বলেন যে, তিনি মিসরে বসবাসকারী একজন হাবশী ছিলেন। তাঁকে জ্ঞান দান করা হয়েছিল, কিন্তু নবুওয়াত দেয়া হয়নি।হযরত লোকমান সম্পর্কে হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “তিনি ছিলেন বেঁটে, উঁচু নাক ও মোটা ঠোট বিশিষ্ট একজন জ্ঞানী ব্যক্তি।”আব্দুর রহমান ইবনে হারমালা (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা এক কৃষ্ণ বর্ণের হাবশী ক্রীতদাস হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব (রঃ)-এর নিকট আগমন করে। তাকে তিনি বলেনঃ “তোমার দেহের রঙ কালো বলে তুমি নিজেকে ঘৃণ্য মনে করো না। তিনজন লোক, যারা সমস্ত লোক অপেক্ষা উত্তম ছিলেন তাঁরা। সবাই কালো বর্ণের ছিলেন। প্রথম হলেন হযরত বিলাল (রাঃ), যিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর গোলাম ছিলেন। দ্বিতীয় হলেন হযরত মুহাজ্জা (রাঃ), যিনি ছিলেন হযরত উমার ফারুক (রাঃ)-এর গোলাম। তৃতীয় হলেন হযরত লোকমান হাকীম, যিনি ছিলেন হাবশের একজন সাধারণ অধিবাসী।হযরত খালিদ রাবঈ (রঃ) বলেন যে, হযরত লোকমান ছিলেন একজন হাবশী ক্রীতদাস ও ছুতার। একদা তার মনিব তাঁকে বলেঃ “তুমি একটি বকরী যবেহ কর এবং ওর গোশতের উৎকৃষ্ট দু’টি টুকরা আমার কাছে নিয়ে এসো।” তিনি হৃৎপিণ্ড ও জিহ্বা নিয়ে আসলেন। কিছুদিন পর পুনরায় তাঁর মনিব তাঁকে এই আদেশই করলো এবং বকরীর গোশতের নিকৃষ্ট দু’টি খণ্ড আনতে বললো। তিনি এবারও উক্ত দুটি জিনিসই নিয়ে আসলেন। তার মনিব তখন বললো: “ব্যাপার কি? এটা কি ধরনের কাজ হলো?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “এ দু’টি যখন ভাল থাকে তখন দেহের কোন অঙ্গই এ দু’টির চেয়ে ভাল নয়। আবার এ দুটি জিনিস যখন খারাপ হয়ে যায় তখন সবচেয়ে নিকৃষ্ট জিনিস এ দু’টোই হয়ে থাকে।” হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, হযরত লোকমান নবী ছিলেন না, একজন সৎ লোক ছিলেন। তিনি ছিলেন কালো বর্ণের একজন ক্রীতদাস। তাঁর ঠোট ছিল মোটা এবং পদযুগল ছিল মাংসপূর্ণ।অন্য এক বুযর্গ ব্যক্তি হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বানী ইসরাঈলের একজন বিচারক ছিলেন। আর একটি উক্তিতে আছে যে, হযরত দাউদ (আঃ)-এর যুগে হযরত লোকমান জীবিত ছিলেন। একদা তিনি কোন এক মজলিসে ওয়াজ করছিলেন। তখন একজন রাখাল তাকে বলেঃ “তুমি কি ঐ ব্যক্তি নও যে অমুক অমুক জায়গায় আমার সাথে বকরী চরাতে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “হ্যা, আমি ঐ ব্যক্তিই বটে।” রাখালটি তখন তাকে প্রশ্ন করে- “তাহলে তুমি কি করে এ মর্যাদা লাভ করলে?” জবাবে তিনি বলেনঃ “সত্য কথা বলা এবং বাজে কথা না বলার কারণেই আমি এই মর্যাদা লাভ করেছি।” অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, তিনি তাঁর উচ্চ মর্যাদা লাভের কারণ বর্ণনায় বলেনঃ “আমার এ উচ্চ মর্যাদা লাভের কারণ হলো আল্লাহর অনুগ্রহ, বিশ্বস্ততা, সত্যবাদিতা এবং বাজে কাজ বর্জন।” মোটকথা, এরূপই পরিষ্কার রিওয়াইয়াত রয়েছে যে, তিনি নবী ছিলেন না। এসব বর্ণনায় এও রয়েছে যে, তিনি গোলাম ছিলেন। এর দ্বারাও এটা প্রমাণিত হয় যে, তিনি নবী ছিলেন না। কেননা, দাসত্ব নবুওয়াতের বিপরীত। নবীরা সবাই উচ্চ ও সম্ভ্রান্ত বংশোদ্ভূত ছিলেন। এ জন্যেই পূর্বযুগীয় জমহুর উলামার উক্তি এই যে, হযরত লোকমান নবী ছিলেন না। হ্যা, তবে ইকরামা (রঃ) বলেন যে, তিনি নবী ছিলেন। কিন্তু এটা সঠিক প্রমাণিত হবে যদি সনদ সহীহ হয়। কিন্তু এর সনদে জাবির ইবনে ইয়াযীদ জুফী রয়েছেন, যিনি দুর্বল। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। বর্ণিত আছে যে, হযরত লোকমান হাকীমকে কোন একটি লোক জিজ্ঞেস করলো: “তুমি তো লোকমান, তুমি কি বানু হাসহাসের গোলাম নও।” তিনি উত্তর দিলেনঃ “হ্যা, তাই।” লোকটি আবার প্রশ্ন করলো: “তুমি কি বী চরাতে না?” তিনি জবাবে বলেনঃ “হ্যা, চরাতাম বটে।” পুনরায় লোকটি জিজ্ঞেস করলো: “তুমি কি কৃষ্ণ বর্ণের লোক নও?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আমি যে কৃষ্ণ বর্ণের লোক তা তো দেখতেই পাচ্ছ ভাই। এখন তুমি আমাকে কি বলতে চাও, বল।” লোকটি বললো: “তাহলে বল তো, তোমার মধ্যে কি এমন গুণ আছে যার কারণে তোমার মজলিস সদা লোকে ভরপুর থাকে? জনগণ তোমার দ্বারে আসে এবং তোমার কথা আগ্রহের সাথে শ্রবণ করে?” তিনি জবাব দিলেনঃ “আমি তোমাকে যে কথাগুলো বলছি সেগুলোর উপর আমল কর, দেখবে, তুমিও আমারই মত হয়ে গেছে। কথাগুলো হলো- হারাম জিনিস হতে চক্ষু বন্ধ রাখবে, জিহ্বাকে অশ্লীল কথা হতে সংযত রাখবে, হালাল খাদ্য খাবে, স্বীয় গুপ্তাঙ্গের হিফাযত করবে, সত্য কথা বলবে, অঙ্গীকার পূরণ করবে, অতিথির সম্মান করবে, প্রতিবেশীর প্রতি লক্ষ্য রাখবে এবং বাজে ও অনর্থক কাজ পরিত্যাগ করবে। এসব গুণের কারণেই আমি এই মর্যাদা লাভ করেছি।” একদা হযরত আবু দারদা (রাঃ) হযরত লোকমান হাকীমের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন যে, হযরত লোকমান কোন বড় পরিবারের লোক ছিলেন না এবং ধনী ও সম্ভ্রান্ত বংশেরও ছিলেন না। হ্যা, তবে তাঁর মধ্যে বহু উত্তম গুণের সমাবেশ ঘটেছিল। তিনি ছিলেন চরিত্রবান, স্বল্পভাষী, চিন্তাশীল ও দূরদর্শী। তিনি দিনে শয়ন করতেন না, লোকজনের সামনে থুথু ফেলতেন না, মানুষের সামনে প্রস্রাব, পায়খানা ও গোসল করতেন না, বাজে কাজ হতে দূরে থাকতেন। তিনি হাসতেন না এবং যে কথা বলতেন তা জ্ঞানপূর্ণ কথাই হতো। তাঁর ছেলে মারা গেলে তিনি ক্রন্দন করেননি। তিনি বাদশাহ ও আমীরদের দরবারে একমাত্র এ উদ্দেশ্যেই গমন করতেন যে, যেন চিন্তা-গবেষণা এবং শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণের সুযোগ লাভ হয়। এ জন্যেই তিনি বুযর্গী লাভ করেছিলেন।হযরত কাতাদা (রঃ) একটি বিস্ময়কর কথা বর্ণনা করেছেন। তা এই যে, হযরত লোকমানকে নবুওয়াত ও হিকমতের মধ্যে যে কোন একটি গ্রহণের অধিকার দেয়া হলে তিনি হিকমতকেই গ্রহণ করেন। তখন রাত্রে তাঁর ঘুমন্ত অবস্থায় হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাঁর নিকট আগমন করেন এবং সারা রাত ধরে তাঁর উপর হিকমত বর্ষণ করতে থাকেন। সকাল হলে দেখা যায় যে, তাঁর মুখ দিয়ে যতগুলো কথা বের হচ্ছে সবই জ্ঞানপূর্ণ কথা। তাঁকে নবুওয়াতের উপর হিকমতকে পছন্দ করার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “যদি আল্লাহ্ আমাকে নবী বানিয়ে দিতেন তবে তো কোন কথাই থাকতো না। আমি ইনশাআল্লাহ নবুওয়াতের দায়িত্ব ভালভাবেই পালন করতে পারতাম। কিন্তু যখন আমাকে নবুওয়াত ও হিকমতের মধ্যে একটিকে বেছে নেয়ার অধিকার দেয়া হলো তখন আমি ভয় পেলাম যে, হয়তো নবুওয়াতের দায়িত্ব আমি ভালরূপে পালন করতে পারবো না। তাই আমি হিকমতকেই গ্রহণ করলাম।” (এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এতে একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন সাঈদ ইবনে বাশীর, যিনি দুর্বল। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন)হযরত কাতাদা (রঃ) এ আয়াতের তাফসীরে বর্ণনা করেছেন যে, হিকমত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো হিকমতের মাধ্যমে ইসলামকে ভালভাবে হৃদয়ঙ্গম করা। হযরত লোকমান নবী ছিলেন না এবং তাঁর কাছে অহীও আসতো না। সুতরাং হিকমত দ্বারা বোধশক্তি, জ্ঞান ও শিক্ষাকে বুঝানো হয়েছে।মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি লোকমানকে নির্দেশ দিয়েছিলাম- আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। জেনে রেখো যে, যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তা নিজেরই মঙ্গলের জন্যে করে, এতে আল্লাহর লাভ-লোকসান কিছুই নেই। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “যারা সঙ্কর্ম করে তারা নিজেদেরই জন্যে রচনা করে সুখ-শয্যা।” (৩০:৪৪) এখানে বলা হয়েছেঃ যে অকৃতজ্ঞ হয় তার জানা উচিত যে, এতে আল্লাহর কোন ক্ষতি নেই। আল্লাহ তো অভাবমুক্ত, প্রশংসিত। তিনি বান্দাদের কাজের ব্যাপারে বেপরোয়া। বান্দাদের সবাই আল্লাহ তা'আলার মুখাপেক্ষী, কিন্তু আল্লাহ তা'আলা কারো মুখাপেক্ষী নন। সমগ্র ধরাবাসী যদি কাফির হয়ে যায়। তাহলেও তার কিছুই আসে যায় না। তিনি সকল হতেই অভাবমুক্ত। তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। আমরা তার ছাড়া আর কারো দাসত্ব করি না।