২৩-৩১ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-এর উপর যে খাস অনুগ্রহ করেছেন তা তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিতে গিয়ে বলেনঃ আমি ক্রমে ক্রমে অল্প অল্প করে এই কুরআন তোমার উপর অবতীর্ণ করেছি। এখন এই অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে তুমি আমার পথে ধৈর্যের সাথে কাজ করে যাও। আমার ফায়সালার উপর ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ থাকো। তুমি দেখবে যে, আমি তোমাকে অত্যন্ত নিপুণতার সাথে মহাসম্মানিত স্থানে পৌঁছিয়ে দিবো। এই কাফির ও মুনাফিকদের কথার প্রতি তুমি মোটেই ভ্রূক্ষেপ করবে না। তারা তোমাকে এই তাবলীগের কাজে বাধা দিলেও তুমি তাদের বাধা মানবে না। বরং তাবলীগের কাজে তুমি নিয়মিতভাবে চালিয়ে যাবে। তুমি নিরাশ ও মনঃক্ষুন্ন হবে না। আমার সত্ত্বার উপর তুমি ভরসা রাখবে। আমি তোমাকে লোকদের অনিষ্ট হতে রক্ষা করবো। তোমাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমার। (আরবি) বলা হয় বা দুষ্কর্মশীল নাফরমানকে। আর (আরবি) হলো ঐ ব্যক্তি যার অন্তর সত্যকে প্রত্যাখ্যানকারী।মহান আল্লাহ বলেনঃ তুমি সকাল ও সন্ধ্যায় তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ কর। অর্থাৎ দিনের প্রথম ও শেষ ভাগে আল্লাহর নাম স্মরণ কর।আর রাত্রির কিয়দংশে তাঁর প্রতি সিজদায় নত হও এবং রাত্রির দীর্ঘ সময় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর। যেমন আল্লাহ পাক অন্যত্র বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, এটা তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায় যে, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে।” (১৭:৭৯) মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “হে বস্ত্রাবৃত! রাত্রি জাগরণ কর, কিছু অংশ ব্যতীত, অর্ধ রাত্রি কিংবা তদপেক্ষা অল্প অথবা তদপেক্ষা বেশী। আর কুরআন আবৃত্তি কর ধীরে ধীরে, স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে।” (৭৩:১-৪)এরপর কাফিরদেরকে ধমকের সুরে বলা হচ্ছেঃ তোমরা দুনিয়ার প্রেমে পড়ে আখিরাতকে পরিত্যাগ করো না। ওটা বড়ই কঠিন দিন। এই নশ্বর জগতের পিছনে পড়ে ঐ ভয়াবহ দিন হতে উদাসীন থাকা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।অতঃপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ সবারই সৃষ্টিকর্তা আমিই। সবারই গঠন সুদৃঢ় আমিই করেছি। কিয়ামতের দিন তাদেরকে নতুনভাবে সৃষ্টি করার পূর্ণ ক্ষমতাও আমার রয়েছে। এটাকে অর্থাৎ প্রথম সৃষ্টিকে পুনর্বার সৃষ্টিকরণের দলীল বানানো হয়েছে। আবার এর ভাবার্থ এও হবেঃ আমি যখন ইচ্ছা করবো তখন তাদের পরিবর্তে তাদের অনুরূপ এক জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করবো। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “হে লোক সকল! তিনি (আল্লাহ) ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে সরিয়ে অন্যদেরকে আনয়ন করবেন এবং এর উপর আল্লাহ পূর্ণ ক্ষমতাবান।” (৪:১৩৩) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে সরিয়ে দিয়ে অন্য জাতি আনয়ন করবেন এবং ওটা আল্লাহর উপর মোটেই কঠিন কাজ নয়।” (১৪:১৯-২০) এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ নিশ্চয়ই এটা এক উপদেশ, অতএব যার ইচ্ছা সে তার প্রতিপালকের দিকে পথ অবলম্বন করুক। যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যদি তারা আল্লাহর উপর ও পরকালের উপর ঈমান আনতো তবে তাদের উপর কি বোঝা চাপতো? (শেষ পর্যন্ত)!” (৪:৩৯)অতঃপর ইরশাদ হচ্ছেঃ ব্যাপার এই যে, তোমরা ইচ্ছা করবে না যদি না আল্লাহ ইচ্ছা করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। যারা হিদায়াত লাভের যোগ্য পাত্র তাদের জন্যে তিনি হিদায়াতের পথ সহজ করে দেন এবং হিদায়াতের উপকরণ প্রস্তুত করে দেন। আর যে নিজেকে পথভ্রষ্টতার পাত্র বানিয়ে নেয় তাকে তিনি হিদায়াত হতে দূরে সরিয়ে দেন। প্রত্যেক কাজেই তার পূর্ণ নিপুণতা ও পুরো যুক্তি রয়েছে। তিনি যাকে ইচ্ছা করেন নিজের রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দেন এবং সরল সঠিক পথে দাঁড় করিয়ে দেন। আর যাকে ইচ্ছা করেন পথভ্রষ্ট করে থাকেন এবং সরল সঠিক পথে পরিচালিত করেন না। তার হিদায়াতকে না কেউ হারিয়ে দিতে পারে এবং না কেউ তার গুমরাহীকে হিদায়াতে পরিবর্তিত করতে পারে। তার শাস্তি পাপী, যালিম এবং অন্যায়কারীর জন্যে নির্দিষ্ট রয়েছে।