তারা বলে, ‘তার নিকট কোন ফিরিশতা অবতীর্ণ করা হয় না কেন?’ আমি যদি কোন ফিরিশতা অবতীর্ণ করতাম, তাহলে তাদের কর্মের চূড়ান্ত মীমাংসা তো হয়েই যেত। অতঃপর তাদেরকে কোন অবকাশ দেওয়া হত না। [১]
[১] মহান আল্লাহ মানুষের হিদায়াতের জন্য নবী ও রসূল প্রেরণ করেছেন, তাঁরা সবাই ছিলেন মানুষেরই মধ্য থেকে। প্রত্যেক জাতিতে তাদেরই মধ্য হতে একজনকে অহী এবং রিসালাত দানে ধন্য করতেন। কারণ, এ ছাড়া কোন রসূলই (দ্বীনের) তবলীগ এবং দাওয়াতের দায়িত্ব পালন করতে পারতেন না। যেমন, যদি ফিরিশতাকে আল্লাহ রসূল বানিয়ে প্রেরণ করতেন, তাহলে প্রথমতঃ তাঁরা মানুষের ভাষায় কথোপকথন করতে পারতেন না এবং দ্বিতীয়তঃ তাঁরা মানবিক স্বভাব-প্রকৃতি থেকে মুক্ত হওয়ার কারণে মানুষের বিভিন্ন অবস্থার বিভিন্ন ভাব ও আচরণকে বুঝতেও পারতেন না। এই অবস্থায় হিদায়াত ও পথপ্রদর্শনের দায়িত্ব কিভাবে তাঁরা আদায় করতে পারতেন? তাই মানুষের প্রতি আল্লাহর এটা বড়ই অনুগ্রহ যে, তিনি মানুষকেই নবী ও রসূল বানিয়েছেন। আর এটাকে কুরআনেও মহান আল্লাহ অনুগ্রহ স্বরূপ উল্লেখ করেছেন। {لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْ أَنْفُسِهِمْ} "আল্লাহ মু'মিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের মাঝে তাদেরই মধ্য হতে একজন রসূল পাঠিয়েছেন।" (সূরা আলে ইমরান ৩:১৬৪) কিন্তু নবীদের মানুষ হওয়া কাফেরদের বিস্ময় ও বিচলিত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তারা মনে করত যে, রসূল মানুষের মধ্য থেকে নয়, বরং ফিরিশতাদের মধ্য হতে হওয়া উচিত। অর্থাৎ, তাদের মতে, মানুষ রসূল হওয়ার উপযুক্ত নয়। যেমন, বর্তমানের বিদআতীরাও এটা মনে করে। تَشَابَهَتْ قُلُوْبُهُمْ কাফের ও মুশরিকরা রসূলদের মানুষ হওয়ার কথা তো অস্বীকার করতে পারত না। কারণ, তারা তাঁদের বংশ পরিচয়ের ব্যাপারে প্রতিটি জিনিস সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে অবগত ছিল, ফলে তারা রিসালাতকে অস্বীকার করত। পক্ষান্তরে বর্তমানের বিদআতীরা রিসালাতের কথা তো অস্বীকার করে না, কিন্তু মানুষ হওয়াকে রসূল হওয়ার পরিপন্থী মনে করে রসূলদের মানুষ হওয়ার কথা অস্বীকার করে। যাই হোক মহান আল্লাহ এই আয়াতে বলছেন, যদি আমি কাফেরদের দাবী অনুযায়ী কোন ফিরিশতাকে রসূল বানিয়ে প্রেরণ করতাম অথবা এই রসূলের সত্যায়নের জন্য কোন ফিরিশতা অবতীর্ণ করতাম (যেমন, এখানে এই কথাটাই বলা হয়েছে) অতঃপর তারা যদি তার উপর ঈমান না আনত, তবে কোন অবকাশ না দিয়েই তাদেরকে ধ্বংস করে দেওয়া হত।
0%