বল, ‘তোমাদের ঊর্ধ্বদেশ[১] অথবা পদতল[২] হতে শাস্তি প্রেরণ করতে, তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করতে এবং এক দলকে অপর দলের নিপীড়নের আস্বাদ গ্রহণ করাতে তিনিই সক্ষম।’[৩] দেখ, কিরূপ বিভিন্ন প্রকারে আয়াতসমূহ বিবৃত করি; যাতে তারা অনুধাবন করে।
[১] অর্থাৎ, আসমান হতে। যেমন, অতি বৃষ্টি, ঝড়-ঝঞ্ঝা, শিলাবৃষ্টি, বজ্রাঘাত দ্বারা আযাব কিংবা (উচ্চশ্রেণী) শাসকদের পক্ষ হতে যুলুম-অত্যাচার।[২] যেমন, ভূমি ধস, বান-বন্যা; যাতে সব কিছুই ডুবে যায়। অথবা অর্থ হল, (নিম্নশ্রেণী) ক্রীতদাস ও ভৃত্য-চাকরদের তরফ হতে আযাব। তাদের আন্তরিকতাহীন ও বিশ্বাসঘাতক হয়ে যাওয়া।[৩] يَلْبِسَكُمْ أَي: يَخْلُطَ أَمْرَكُمْ অর্থাৎ, তোমাদের যাবতীয় কার্যকলাপকে এমন গোলমেলে ও সন্দিগ্ধ করে দেবেন যে, তার কারণে তোমরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। وَيُذِيْقُ، أَي: يَقْتُلُ بَعْضُكُمْ بَعْضًا فَتُذِيْقَ كُلُّ طَائِفَةٍ الأخرَى أَلَمَ الْحَرْبِ অর্থাৎ, তোমাদের একজন অপরজনকে হত্যা করবে। এইভাবে প্রত্যেক দল অপর দলকে যুদ্ধের স্বাদ আস্বাদন করাবে। (আয়সারুত্ তাফাসীর) হাদীসে এসেছে, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন যে, "আমি আল্লাহ তাআলার কাছে তিনটি দু'আ করি। (ক) আমার উম্মতকে ডুবিয়ে যেন ধ্বংস না করা হয়। (খ) ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দ্বারা তাদের বিনাশ সাধন যেন না হয়। (গ) তাদের আপোসে যেন লড়াই-ঝগড়া (গৃহযুদ্ধ) না হয়। মহান আল্লাহ প্রথম দু'টি দু'আ কবুল করলেন এবং তৃতীয় দু'আ থেকে আমাকে বঞ্চিত করলেন।" (সহীহ মুসলিম ২২১৬নং) অর্থাৎ, আল্লাহর জ্ঞানে এ কথা ছিল যে, মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উম্মতের মধ্যে অনৈক্য ও বিরোধ সংঘটিত হবে। আর তার কারণ হবে আল্লাহর অবাধ্যতা এবং কুরআন ও হাদীস থেকে বিমুখতা। ফলে এই ধরনের আযাব থেকে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উম্মত সুরক্ষিত থাকতে পারবে না। অর্থাৎ, এর সম্পর্ক আল্লাহর সেই চিরন্তন বিধানের সাথে যা সমূহ জাতির আখলাক-চরিত্র এবং তাদের আচার-আচরণ অনুযায়ী সর্বযুগে থেকেছে; যাতে কোন প্রকার পরিবর্তন সম্ভব নয়। {فَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّتِ اللَّهِ تَبْدِيلًا وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّتِ اللَّهِ تَحْوِيلًا} "তুমি আল্লাহর বিধানে কোন পরিবর্তন পাবে না এবং আল্লাহর রীতি-নীতিতে কোন রকম বিচ্যুতিও পাবে না।" (সূরা ফাত্বির ৩৫:৪৩)