৭-১১ নং আয়াতের তাফসীর: এখানে আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের বিরোধিতা, অহংকার এবং তর্ক-বিতর্কের সংবাদ দিতে গিয়ে বলেন, যদি তোমাদের উপর আমি কাগজে লিখিত কোন কিতাবও অবতীর্ণ করতাম, আর তোমরা তা হাত দ্বারা স্পর্শ করতেও পারতে এবং আকাশ হতে অবতীর্ণ হতেও দেখতে পেতে, তবে তখনও তোমরা এ কথাই বলতে যে, এটা সরাসরি যাদু। যেমন অনুভূতিশীল বস্তুর মধ্যেও তাদের ঝগড়াপ্রিয় স্বভাবের চাহিদা এটাই যে, যদি আমি তাদের জন্যে আকাশের একটা দরজা খুলে দেই এবং তারা ওর উপর চড়তেও শুরু করে তথাপি তারা বলবে যে, তাদেরকে নযরবন্দী করে দেয়া হয়েছে। কিংবা যেমন আল্লাহ পাক বলেন যে, যদি তারা আকাশের একটা খণ্ড পতিত হতেও দেখে, তবে তখনও তারা বলবে যে, ওটা মেঘের একটা টুকরা।অতঃপর তাদের আমাদের কাছে কোন ফেরেশতা অবতীর্ণ করা হয় না কেন?'এই উক্তি সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, ঐরূপ হলে তো কাজের ফায়সালাই হয়ে যেতো । কেননা, ফেরেশতাকে দেখার পরেও তারা যাদূর কথাই বলতো। কিন্তু তখন আর তাদেরকে সঠিক পথে আসবার জন্যে অবকাশ দেয়া হতো না, বরং তৎক্ষণাৎ তারা আল্লাহর আযাবে পতিত হতো, আর ওটা তাদের জন্যে মোটেই সুসংবাদ নয়।ইরশাদ হচ্ছে-যদি আমি মানব রাসূলের সাথে কোন ফেরেশতাকে প্রেরণও করতাম তবে সেও তাদের কাছে মানুষের আকারেই আসতো যাতে তারা তার সাথে আলাপ করতে পারে বা তার থেকে কোন উপকার লাভ করতে পারে। আর যদি এরূপ হতো তবে ব্যাপারটা তাদের কাছে সন্দেহজনকই থেকে যেতে যেমন তারা মানব রাসূলের ব্যাপারে সন্দেহ করতে রয়েছে। যেমন এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “আমি তো আকাশ থেকে ঐ সময় ফেরেশতা পাঠাতাম যখন তারা যমীনে চলাফেরা করতো এবং যখন এইরূপ হতো তখন আকাশ থেকে পাঠাবার কি প্রয়োজন থাকতো? এটা তো আল্লাহর রহমত যে, যখন তিনি মাখলুকের কাছে কোন রাসূল প্রেরণ করেন তখন তিনি তাকে তাদের মধ্য থেকেই প্রেরণ করে থাকেন, যাতে একে অপরের সাথে কথা বলতে পারে এবং সেই রাসূল থেকে উপকার লাভ করা ঐ লোকদের জন্যে সম্ভবপর হয়। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “মুমিনদের উপর আল্লাহর এটা অনুগ্রহ যে, তাদের রাসূল হচ্ছে তাদেরই একজন লোক যিনি তাদের কাছে আল্লাহর আয়াতসমূহ পেশ করে থাকে এবং তাদেরকে (পাপ থেকে) পবিত্র করে থাকে, নতুবা (ফেরেশতা পাঠালে) ফেরেশতার ঔজ্জ্বল্যের কারণে তার দিকে তারা তাকাতেও পারতো না এবং এর ফলে ব্যাপারটা তাদের কাছে সন্দেহজনকই থেকে যেতো। আর হে নবী (সঃ)! তোমার পূর্ববর্তী নবীদের সাথেও তো এইরূপ উপহাসমূলক ব্যবহার করা হয়েছিল! তারা তাদেরকে বিদ্রুপ ও উপহাস করেছিল বলেই তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল!” এখানে নবী (সঃ)-কে উৎসাহ প্রদানপূর্বক বলা হচ্ছে, যদি কেউ তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তবে তুমি মোটেই গ্রাহ্য করো না। অতঃপর মুমিনদেরকে সাহায্য করার পরিণাম ভাল করার ওয়াদা দেয়া হয়েছে। পরিশেষে তাদেরকে বলা হয়েছে-তোমরা ভূ-পৃষ্ঠে ভ্রমণ করে দেখো যে, অতীতে যারা তাদের নবীদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল তাদের বাসভূমি কিভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে! আজ তাদের বাড়ী ঘরের চিহ্নটুকু শুধু বাকী রয়েছে। এটা তাদের পার্থিব শাস্তি। অতঃপর পরকালে তাদের জন্যে পৃথক শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। তারা ঐরূপ শাস্তির কবলে পতিত হয়েছিল বটে, কিন্তু রাসূল ও মুমিনদেরকে ঐ শাস্তি থেকে রক্ষা করা হয়েছিল।
0%