৮৯ নং আয়াতের তাফসীর:
قَسَم (কসম), حَلَف (হলফ) يَمين (ইয়ামীন) তিনটি আরবি প্রতিশব্দ যার বাংলা অর্থ: শপথ করা।
শপথ তিন প্রকার- ১. لغو (লাগু) ২. غموس (গুমূস) ৩. منعقد (মুনআকিদ)।
১. لغو (অনর্থক) এমন শপথকে বলে যা মানুষ কথায় কথায় ইচ্ছা, উদ্দেশ্য ও প্রয়োজন ছাড়াই ব্যবহার করে। যেমন بلي والله ، لا والله (হ্যাঁ, আল্লাহর কসম; না, আল্লাহর কসম) ইত্যাদি। এ শপথের কোন কাফফারা বা পাকড়াও নেই।
২. غموس (মিথ্যা শপথ) অতীতকালের কোন বিষয়ে জেনে বুঝে মিথ্যা শপথ করা। যেমন কোন কাজ করেছে, মিথ্যা শপথ করে বলল করিনি। অনুরূপ কোন কাজ করেনি, মিথ্যা শপথ করে বলল করেছি। এ প্রকার শপথ এতই মারাত্মক যে, দুনিয়াতে এর কোন কাফফারা নেই। এটা কবীরা গুনাহ যা তাওবাহ ব্যতীত ক্ষমা হবে না।
৩. منعقدة ঐ শপথকে বলে যা মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে এবং নিয়্যতসহ ভবিষ্যতে কোন কিছু করা বা না করার ব্যাপারে শপথ করে।
শপথের কাফফারা: কেউ এ ধরণের শপথ করে ভঙ্গ করলে তার কাফফারা হল:
১. দশজন মিসকীনকে মধ্যম মানের খাদ্য খাওয়ানো যা নিজেরা খায়। অথবা প্রত্যেক মিসকিনকে অর্ধ সা করে খাদ্য প্রদান করবে। (আমাদের দেশের ওজন অনুপাতে প্রায় সোয়া এক কেজি)। (তাফসীর মুয়াসসার, পৃঃ ১২২)
২. অথবা দশজন দরিদ্রকে পোশাক প্রদান করা, যা দ্বারা সালাত আদায় করা যেতে পারে। কোন কোন আলিম খাদ্য ও পোশাক সমাজের প্রচলিত নিয়ম নীতিকে অনুসরণীয় মনে করেন।
৩. অথবা একজন দাস বা দাসী আযাদ করা। ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন: আয়াতটি ব্যাপক। তাই দাস, মু’মিন হোক বা কাফির যেকোন একটি আযাদ করলেই হবে। (তাফসীর ফাতহুল কাদীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
৪. উল্লিখিত তিনটির যে কোন একটি পালনে অক্ষম হলে তাকে তিন দিন সওম বা রোযা পালন করতে হবে। তিনদিন ধারাবাহিকভাবে, না ভেঙ্গে ভেঙ্গে সওম রাখবে তা নিয়ে মতানৈক্য পাওয়া যায়। সঠিক কথা হল উভয় অবস্থাই বৈধ। (আয়সারুত তাফাসীর, ১/৫৬৪)
অবশেষে আল্লাহ তা‘আলা শপথকে সংরক্ষণ করতে বলেছেন। অর্থাৎ অযথা শপথ করা থেকে বিরত থাক, আর শপথ করে ফেললেই পরিপূর্ণভাবে পূর্ণ কর, অথবা পূর্ণ না করতে পারলে যথাযথ কাফফারা আদায় করে দাও। এ সম্পর্কে সূরা বাক্বারার ২২৫ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. শপথ আল্লাহ তা‘আলার একটি বিধান, তাই এ বিধান নিয়ে খেল-তামাশা করা উচিত নয়।
২. শপথ করে তা পালন না করতে পারলে কাফফারা দিতে হবে।
৩. অতীতকালীন কোন বিষয়ে মিথ্যা শপথ করলে তার কোন কাফফারা নেই বরং তা কবীরা গুনাহ হবে। এ জন্য আল্লাহ তা‘আলার কাছে তাওবা করতে হবে।
৪. শপথের ব্যাপারে সকলের সতর্ক থাকা উচিত, অযথা ও অহেতুক বিষয়কে কেন্দ্র করে আল্লাহ তা‘আলার নামে শপথ করা উচিত নয়, এতে আল্লাহ তা‘আলার সম্মান ক্ষুণœ হয়।