যারা ছোট-খাট অপরাধ ছাড়া[১] গুরুতর পাপ ও অশ্লীল কার্য হতে বিরত থাকে।[২] নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক অপরিসীম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত যখন তিনি তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছিলেন এবং যখন তোমরা মাতৃগর্ভে ভ্রূণরূপে অবস্থান কর।[৩] অতএব তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না।[৪] তিনিই সম্যক জানেন আল্লাহভীরু কে।
[১] لَمَمٌ এর আভিধানিক অর্থ অল্প ও ছোট হওয়া। আর এ থেকেই বলা হয়, أَلَمَّ بالمكان অর্থাৎ, গৃহে অল্পক্ষণ ছিল। ألَمَّ بالطَّعَام অল্প একটু খেয়েছে। অনুরূপ কোন জিনিসকে কেবল স্পর্শ করা বা তার নিকটবর্তী হওয়া অথবা কোন কাজকে লাগাতার নয়; বরং কেবল এক বা দু'বার করা কিংবা অন্তরে কেবল খেয়ালের উদয় হওয়া, এ সবকেই لمم বলা হয়। (ফাতহুল ক্বাদীর) لمم এর এই ভাষাগত প্রয়োগ ও তার অর্থের দিকে লক্ষ্য করেই তার অর্থ করা হয় 'সাগীরা গুনাহ' (ছোট-খাট পাপ)। অর্থাৎ, কোন বড় পাপের প্রাথমিক পর্যায়ের জিনিস করে ফেলা। তবে বড় পাপ থেকে বিরত থাকা অথবা কোন পাপ এক-দু'বার করে ফেলা অতঃপর চিরতরে তা বর্জন করা কিংবা কোন পাপ করার কথা কেবল মনে ভেবে নেওয়া; কিন্তু কার্যতঃ তার ধারে-পাশেও না যাওয়া। এগুলো ছোট গুনাহ বলে গণ্য হবে। যেগুলো মহান আল্লাহ বড় পাপ থেকে বিরত থাকার কারণে ক্ষমা করে দিবেন।[২] كَبَائِر হল كَبِيْرَةٌ এর বহুবচন। কাবীরা গোনাহ, গুরুতর পাপ তথা মহাপাপের সংজ্ঞায় মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশ উলামাদের মতে এমন সব পাপকে কাবীরা তথা মহাপাপ বলা হয়, যার উপর জাহান্নামের হুমকি এসেছে অথবা যে পাপে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিন্দাবাদ কুরআন ও হাদীসে আলোচিত হয়েছে (অথবা যে পাপের কারণে পাপীকে অভিশাপ করা হয়েছে)। অনুরূপ উলামাগণ এ কথাও বলেছেন যে, অব্যাহতভাবে কোন ছোট পাপ করতে থাকলে তা মহাপাপে পরিণত হয়ে যায়। এ ছাড়া 'কাবীরা' গুনাহের অর্থ ও তার প্রকৃতত্বে যেমন মতভেদ রয়েছে, অনুরূপ মতভেদ তার সংখ্যার ব্যাপারেও রয়েছে। কোন কোন আলেম ঐ মহাপাপসমূহকে একটি পুস্তিকার মধ্যে একত্রিতও করেছেন। যেমন, ইমাম যাহাবী (রঃ) রচিত 'কিতাবুল কাবাইর' এবং ফকীহ হাইতামী রচিত 'আয্-যাওয়াজির' প্রভৃতি। فَوَاحِشُ হল فَاحِشَةٌ এর বহুবচন। অশ্লীল কাজ। যেমন, ব্যভিচার, সমলিঙ্গী ব্যভিচার ইত্যাদি। কেউ কেউ বলেছেন, যেসব পাপের জন্য দন্ডবিধি আছে, সেগুলো সব فواحش এর অন্তর্ভুক্ত। সম্প্রতি অশ্লীলতার দৃশ্যাদি যেহেতু ব্যাপক আকার ধারণ করেছে, সেহেতু আধুনিক সভ্যতায় এটাকেই সভ্যতা ও ফ্যাশন মনে করা হচ্ছে। এমন কি মুসলিমরাও ঐ অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার এই সভ্যতাকে লাফ দিয়ে লুফে নিয়েছে। তাই দেখা যায়, আজ তাদের ঘরে ঘরে টিভি, ভিসিআর, ভিসিপি, ভিসিডি ইত্যাদি ব্যাপক হয়ে পড়েছে। মহিলারা কেবল পর্দা ত্যাগ করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, বরং সুন্দরভাবে সাজগোজ করে (অর্ধনগ্নাবস্থায়) রূপ-সৌন্দর্য বিতরণ করতে করতে বাইরে বেড়ানোটাকে নিজেদের একটা ফ্যাশন ও অভ্যাসে পরিণত করে নিয়েছে। ছেলে-মেয়েদের যৌথ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যৌথ অফিস-আদালত, যৌথ সভাসমিতি এবং (পার্ক, সমুদ্র-সৈকত প্রভৃতি) আরো বিভিন্ন স্থানে নর-নারীর অবাধ মেলামেশা ও দ্বিধা-সংকোচহীন সংলাপ দিনের দিন বেড়ে চলেছে। (বেড়ে চলেছে অবৈধ ভালবাসা ও তথাকথিত পছন্দ করে বিয়ে করার নামে 'লাভম্যারেজ' ও 'লিভ টুগ্যাদার'।) অথচ এ সবই 'ফাওয়াহিশ' (অশ্লীলতা)এর অন্তর্ভুক্ত। আয়াতে যাদের ক্ষমা করার কথা আলোচনা করা হচ্ছে, তারা মহাপাপ ও অশ্লীলতা থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখবে; তাতে তারা লিপ্ত থাকবে না।[৩] أ جِنَّةٌহল جَنِيْنٌ এর বহুবচন। (এর মূল অর্থঃ গুপ্ত) গর্ভস্থ ভ্রূণকে جَنِيْنٌ বলা হয়। কারণ, তা লোক চক্ষু থেকে গোপনে থাকে।[৪] অর্থাৎ, তাঁর নিকট যখন তোমাদের কোন অবস্থা ও আচরণ লুক্কায়িত নেই; এমনকি তোমরা যখন মাতৃগর্ভে ছিলে, যেখানে তোমাদেরকে দেখার কারো সাধ্য ছিল না, সেখানেও তিনি তোমাদের যাবতীয় অবস্থা ও খবরাখবর সম্পর্কে অবগত ছিলেন, তখন আত্মপ্রশংসা করার এবং নিজেদের মুখে নিজেদের সততার বর্ণনা দেওয়ার দরকার কি? অর্থাৎ, এ রকম করো না। যাতে লোক দেখানো কাজ থেকে তোমরা বাঁচতে পার।